ঢাকা:
নিষ্পত্তির পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে দিনদিন বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণের মামলার সংখ্যা, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘজট। প্রায় আড়াই লাখ মামলার এ জট নিরসনে দেরিতে হলেও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরিকৃত সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী,
সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসংক্রান্ত ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা এখন দুই লাখ ৩২ হাজার ৪৩১। এগুলোর বিপরীতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। আইনের জটিলতা, অর্থ আদালত এবং পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকায় মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। তাই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বিতরণকৃত ঋণ আদায় করতে পারছে না।আ হ ম মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিগগিরই এসব মামলার জটিলতা নিরসনের জন্য পৃথক আর্থিক আদালত গঠন বা বেঞ্চসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীও খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক অর্থ আদালত গঠনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। এমনকি চলতি বাজেটেও পৃথক বেঞ্চ গঠনের কথা বলেছেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে আমরা আইন মন্ত্রণালয়কে বেঞ্চসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে দু’বার সুপারিশ পাঠিয়েছি। ’
তবে ‘এর অগ্রগতি সম্পর্কে তার জানা নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুপারিশ বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ এখতিয়ার এখন আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। ’
আ হ ম মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বৈঠক হবে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানও বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে পৃথক আর্থিক আদালত গঠন জরুরি বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘কর আদায় ত্বরান্বিত করতে পৃথক আদালত আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া বিল আদায়ের জন্যও আছে। তাহলে কেন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক অর্থ আদালত হতে পারে না? বর্তমানে ব্যাংকের যে পরিমান খেলাপি ঋণের মামলার জট রয়েছে, তা খোলা খুবই জরুরি। সেই জট ছাড়াতে পৃথক আর্থিক আদালত গঠনও জরুরি হয়ে পড়েছে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে মামলা রয়েছে ৯৬ হাজার ৭২১টি। এসব মামলার বিপরীতে পাওনা টাকার পরিমাণ ১২ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর এক লাখ ১৬ হাজার ৭৫৩টি মামলায় বিপরীতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৭ হাজার ৩০৭টি মামলায় ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর এক হাজার ৬৫০টি মামলায় ৩০২ কোটি টাকার ঋণ অনাদায়ী রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সুপারিশ করে। তখন সংসদীয় কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতও চায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতে বলা হয়, বিদ্যমান কর আদালতের মতো ‘অর্থ আদালত’ গঠনের মাধ্যমে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।
বিদ্যমান অর্থঋণ আদালতের বিচারকদের ঋণ ছাড়াও অন্যান্য আদালতের আরও অনেক মামলা দেখতে হয়। তাই মাসে আট থেকে ১০ দিনের বেশি তারা অর্থঋণ আদালতে বসতে পারেন না। এ কারণে মামলার জট বেড়ে যায়। অর্থঋণ আদালত আইন অনুযায়ী, সেখানে দায়ের করা মামলা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগই তিন বছর পেরিয়ে যায়।
এসব মামলার জট কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে ২০০৭ সালের ৬ জুন আইনসচিব ড. মো. তারেক ও ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে পরামর্শমূলক চিঠি লিখেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘন্টা, ০৮ মার্চ, ২০১১