ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

গানের করিম রাজনীতির করিম মাটি ও গণমানুষের করিম

শাহজাহান চৌধুরী, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১১
গানের করিম রাজনীতির করিম মাটি ও গণমানুষের করিম

সুনামগঞ্জ: শাহ আব্দুল করিম শুধু গানের নয় তিনি রাজনীতির করিমও বটে। এ উপমহাদেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তার ছিল গভীর সম্পর্ক।

অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একান্ত রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন শাহ আব্দুল করিম। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সিলেটে গণসংযোগে আসতেন তখন সফরসঙ্গী হতেন এ বাউল।

১৯৫৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর সিলেট আসা উপলে সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহ আব্দুল করিম। তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী বক্তব্য আর শাহ আব্দুল করিমের কণ্ঠে গাওয়া গণসঙ্গীত জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার জনতাকে মুখরিত করে তুলেছিল।

এরপর থেকে ঢাকাসহ পূর্ববঙ্গের যে কোনও স্থানে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভা হলে শাহ আব্দুল করিমের ডাক পরত।

১৯৬৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের দুর্নীতি দমনমন্ত্রী থাকাবস্থায় সুনামগঞ্জে প্রথম সরকারি সফরে আসেন। কোন এক কারণে সেদিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী সুনামগঞ্জের মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় নেতারা বঙ্গবন্ধুর জনসভা বর্জন করেন। ফলে জনসভায় লোক সমাগম খুব কম হয়েছিল। এ সময় এগিয়ে আসেন শাহ আব্দুল করিম। জনসভায় লোক সমাগম নেই দেখে আব্দুল করিম ভিন্ন পথ ধরেন। তিনি দরাজ কণ্ঠে গান ধরেন। করিমের গান শুনে ণিকের মধ্যে জনসভাস্থল পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় গান শুনে শেখ মুজিব করিমকে এক হাজার ১০০ টাকা বখশিস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি করিম ভাইকে যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। করিম ভাইয়ের মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হবে। এ দেশের উন্নয়নে আপনার মতো শিল্পীর প্রয়োজন আছে। ’

এছাড়াও ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জ জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে করিমের গণসঙ্গীত শুনে শেখ মুজিব আবেগ আপ্লুত হয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে করিম ভাইও বাঁচবেন এবং সে সময় শেখ মুজিব শাহ আব্দুল করিমকে ৫০০ টাকা উপহার দেন।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নিবার্চনের প্রাক্কালে শেখ মুজিব লঞ্চে করে ভাটি অঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আসেন। এ সময় হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা এবং নেত্রকোণার খালিয়াজুরি ও মোহনগঞ্জ থানার জনসভাগুলোতে তার সফরসঙ্গী ছিলেন আব্দুল করিম।

১৯৮৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালাতে ভাটি অঞ্চলে আসেন তখন তার সফরসঙ্গী হন শাহ আব্দুল করিম এবং গণসঙ্গীত গেয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।

১৯৯৫ সালে শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জের দিরাই সফরে এসে আব্দুল করিমকে দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের জনসভায় বলেছিলেন, ‘আমার বাবা যার গানের গুনমুগ্ধ ছিলেন, আমি তাকে অবশ্যই উপযুক্ত সম্মান দেবো। ’

২০০১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে কর্মীসভায় বলেছিলেন, ‘শাহ আব্দুল করিম ৫৪ সাল থেকে এদেশের মাটি ও গণমানুষের গান গেয়ে আসছেন তার মূল্যায়ন করতে হবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।