ঢাকা: দেশসেরা মেধাবীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর এখানে মেধার ভিত্তিতে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হতে পারেন মাত্র ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী।
দেশ থেকে সবচেয়ে মেধাবীরা যদি এভাবে নিজেদের সরিয়ে নেন তাহলে দেশের উন্নয়ন কি সত্যিকার অর্থে সম্ভব?
বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশেজ্ঞরা মেধাবীদের এ বিদেশমুখী প্রবণতার জন্য দেশে উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রের অভাব, মেধার অবমূল্যায়ন, বিদেশের উন্নত জীবনমান এবং অনেকে দেশপ্রেমের অভাবকেই দায়ী করেছেন। তারা নির্দিষ্ট করে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন তা হলো-
দেশে এখনো কাজের ত্রে সীমাবদ্ধ
দেশে প্রকৌশলীদের কাজের ক্ষেত্র এখনও সীমাবদ্ধ। তাদের পড়াশুনার ক্ষেত্র না হওয়া সত্ত্বেও অনেকে সেসব ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন।
যেমন- সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা আর্কিটেকচারে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এলজিআরডি, পিডব্লিউডি, রাজউক, ইউআরপি, রিহ্যাব, হাউজিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন।
মেকানিক্যাল থেকে পাস করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রতিষ্ঠিতরা।
কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের টেলিকমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ থাকে।
ওয়াটার রিসার্চাররা রিভারিং প্রজেক্টগুলোতে কাজ করতে পারেন। মেটালজির ইঞ্জিনিয়ারদের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সিরামিক কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ থাকে।
এছাড়া আইটি ও কেমিকৌশলের ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে পেশা গড়তে পারেন।
যদিও এসব ক্ষেত্রে বুয়েটের ছাত্রদের চাহিদা অনান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের চেয়ে বেশি। কিন্তু এখান থেকে পাস করার পরও তারা যোগ্যতা অনুযায়ী সন্তোষজনক কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন ।
বিনিয়োগের অভাব ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম
প্রযুক্তি ও অনান্য খাতে বিনিয়োগ কম হওয়ায় প্রকৌশলীরা পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না।
উন্নয়নশীল দেশে শিল্পক্ষেত্র তৈরিতে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক জরুরি। কিন্তু নানা কারণে দেশে শিল্পেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম।
এ বিষয়ে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন রহমান বাংলানিউজটোয়িন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তাহলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি আগ্রহী হবেন।
কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ’
দেশপ্রেমের অভাব ও বিদেশপ্রীতি
দেশের প্রতি টান না থাকায় বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার পর অনেকেই দেশে আসতে চান না।
দেশে গবেষণার উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে ছুটবেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সে শিক্ষার ছোঁয়া যখন দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে না তখন তার মূল্যায়ন দেশ কীভাবে করবে?
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা দেশে আর ফিরে আসে না তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধের অভাব রয়েছে। `
তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে ভালোবাসতে হবে। শুরুটা হতে হবে পরিবার থেকেই। অভিভাবকরা যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগাতে না পারেন তাহলে সে কখনোই তার মেধা দেশের কল্যাণে ব্যবহার করবে না। ’
ড. নিজাম বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য মেধাবীদের অংশগ্রহণ সত্যিই প্রয়োজন। আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ। ’
দেশে মূল্যায়নের অভাব, বিদেশে উন্নত জীবনের হাতছানি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে দেশে কাজ করছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম নয়। তা সত্ত্বেও বুয়েটের শিক্ষার্থীর বিদেশমুখী প্রবণতা কেন?
এই প্রশ্নে বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা ওয়াসার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তানভীর হোসেন রাহাত বলেন, ‘এর কারণ শিক্ষার্থীদের বিদেশের উন্নত জীবনের প্রতি আকর্ষণ।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা দেশে কাজ করছি, জীবনের প্রয়োজনে একরকম সমঝোতা করেই আছি। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গাতেই প্রকৌশলীদের কাজের পরিবেশ এখনও ততোটা অনুকূল নয়। ’
এছাড়া কাজের ক্ষেত্রে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতা। যারা পেশার ক্ষেত্রে পদে পদে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারাই উন্নত জীবন আর মূল্যায়নের খোঁজে বিদেশে ছুটছেন বলে মনে করেন তানভির হোসেন।
উপাচার্যের বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী প্রবণতার কারণ হিসেবে কর্মক্ষেত্রের অভাব ও উন্নত প্রযুক্তির অপ্রতুলতাকেই দায়ী করেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম।
বাংলানিউজটোয়িন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, ‘দেশে প্রকৌশলীদের কাজের ক্ষেত্র এখনও অনেক কম। কাজের বা গবেষণার জন্য যে ধরনের উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন তা আমাদের দেশে নেই। ফলে একজন শিক্ষার্থী তার মেধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না। ’
তিনি বলেন, ‘তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। আমরা নানাভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১১