ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শেয়ারবাজার কেলেংকারি

৩১ মার্চের আগে তদন্ত রিপোর্ট, আড়ালেই থাকছে নেপথ্য নায়করা

পবন আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১১
৩১ মার্চের আগে তদন্ত রিপোর্ট, আড়ালেই থাকছে নেপথ্য নায়করা

ঢাকা: শেয়ারবাজার কেলেংকারির কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে কমিটি।

তবে রিপোর্টে কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত কারো নাম থাকছে না।

তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ উল্লিখিত সময়ে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজার একটি বিশাল ক্ষেত্র। সেখানে রয়েছে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী। সামগ্রিক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কঠিন। তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করার বিষয়ে সচেতন ছিলাম।

তিনি বলেন, তদন্তে বাজার কারসাজির দুর্বল স্থানগুলোকে চিহ্নিত করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে সে বিষয়ে সমাধানের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারেও কোনো সুপারিশ থাকছে না তদন্ত রিপোর্টে। তবে পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য চারটি ভাগে ৪৮টি সুপারিশ করা হচ্ছে।

এসইসি’র সংস্কার, আইন ও বিধি মালা সংশোধন, কোম্পানি আইন সংশোধন এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের গঠনতন্ত্র সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে সব অভিযোগ পাওয়া গেছে তা পর্যালোচনা করে আইন, বিধি-বিধান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করে ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে বিপর্যয় রোধে সংস্কারের সুপারিশ করা হচ্ছে।

সুপারিশের মধ্যে থাকছে, মূলধন সংগ্রহের নামে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, অস্বাভাবিক প্রিমিয়াম, নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং বিশেষ মহলের সুবিধা সৃষ্টির জন্য আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন। পাশাপাশি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জবাবদিহিতা, শক্তিশালীকরণ ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নেটওর্য়াকিং-এ নিয়ে আসা।

সূত্র জানায়, রিপোর্টে উল্লেখ করা হচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন মহলকে দীর্ঘদিন ‘ম্যানেজ’ করে পুঁজিবাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্লেসমেন্ট শেয়ার।

এছাড়াও দুর্বল কোম্পানির সঙ্গে একত্র হয়ে ডিভিডেন্ট ঘোষণার নামে জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলানিউজকে বলেন, আমার মনে হয় না পুঁজিবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তার জন্য শক্ত প্রমাণ লাগবে।

তিনি বলেন, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) এবং স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রমাণ পাওয়া যাবে। তবে এর জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন।

মন্ত্রী বলেন, এক ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। পাশাপাশি নামে-বেনামে বহু অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করতে হলে তদন্ত কমিটির দুই মাস নয়, দুই বছরেরও বেশি সময় দিতে হবে।

গতবছর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে বিপর্যয় ঘটতে থাকে। এই বিপর্যয়ের কারণ উদঘাটন ও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।

গত ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসইসির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ও আইসিএবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল বারী, এফসিএ ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নিহাদ কবির।

কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। শনিবার কমিটির দুই মাস পূর্ণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ২৫ মার্চ, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।