ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

নাসার প্রকল্প: সুন্দরবন নিয়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর গবেষণা উদ্যোগ

ইসমাইল হোসেন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১১
নাসার প্রকল্প: সুন্দরবন নিয়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর গবেষণা উদ্যোগ

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. ফয়েজ রহমান নাসার আর্থিক এবং প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে সুন্দরবনের পরিবর্তন, এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাকাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিজ্ঞানী ড. ফয়েজ রহমান ই-মেইলে ও টেলিফোনে বাংলানিউজকে এই গবেষণা প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।



নাসার উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগামী ৩ বছর ধরে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাকরবেন। এর মাধ্যমে ফয়েজ রহমান এবং তাঁর দল সুন্দরবনে চলমান ধারাবাহিক পরিবর্তনের কারণ চিহ্নিত করবেন, বনের কার্বন শোষণ ক্ষমতার পরিমাণ র্নিধারণ করবেন এবং মানুষ ছাড়া অন্য আর কি কি বিষয় বনের পরিবর্তনে নিয়ামক ভূমিকা রাখছে তা খুঁজে বের করবেন।

ফয়েজ রহমানের বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তার গবেষণা সহযোগী হিসেবে থাকছেন আরেক বাঙালি বিজ্ঞানী ড. রিংকু রায় চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন বিভাগের দুই কর্মকর্তা ড. বুন কাউফম্যান এবং ড. ডানিয়েল ডোনাটো।

বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফয়েজ রহমান ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানী রিংকু রায় চৌধুরী একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

তিনবছরব্যাপী এই গবেষণা প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের কার্বনচক্র সংক্রান্ত বিজ্ঞান প্রকল্পের ধারাবাহিক গবেষণার অংশ। প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাষ্টীয় সংস্থা জড়িত। এগুলো হচ্ছে,যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উড্ডয়ন ও মহাকাশ প্রশাসন (নাসা), বাণিজ্যবিভাগ, জ্বালানিবিভাগ, কৃষিবিভাগ ও প্রকৃতিবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন। নাসা গত ২৩ মার্চ এই প্রকল্পের জন্য ৬,৩৭,০০০ মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্য মঞ্জুর করেছে।

সোমবার সকালে ফয়েজ রহমান টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন এই গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং সহযোগিতার জন্য পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্র জোগাড় করছি। প্রকল্পটি পুরোদমে শুরু হবে আগস্টে। ’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। ’

সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য কতোটা উপকারী তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’র আঘাতে বাংলাদেশে প্রায় ৬ হাজার মানুষ মারা গেছে। পরের বছর মিয়ানমারে একই মাত্রার আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘নার্গিস’-এর আঘাতে প্রায় ১ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণও ছিল ব্যাপক। কারণ মিয়ানমারকে রক্ষার জন্য সুন্দবনের মতো কোনো বন ছিলো না। ’

তিনি বলেন, প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারব্যাপী বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যনগ্রোভ বন পৃথিবীর কার্বন শোষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনে এই বনের ভূমিকা এবং এখানকার কার্বনের আধারের পরিমাণ এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

ফয়েজ রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু কার্বনভা-ার এবং বনের ঘনত্বের উপরই নজর দেবো না, এই বনের পরিবর্তনে মানুষ কতোটা দায়ী এবং ওই পরিবর্তন বাংলাদেশের বিশেষ করে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক জীবনযাত্রায় কি ধরনের প্রভাব ফেলেছে তাও খুঁজে বের করবো। ’

উল্লেখ্য, রিংকু রায় চৌধুরী একজন সমাজবিজ্ঞানী। সুন্দরবন-কেন্দ্রিক প্রতিবেশে পরিবর্তন ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন-যাত্রায় কি ধরনের প্রভাব ফেলছে তারই বিশ্লেষণ করবেন তারা।

ফয়েজ রহমান এবং তার দলের মূল কাজ হবে আগামী ৩ বছর ধরে উপগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে তোলা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ এবং এর আশপাশের এলাকার ছবিগুলো বিশ্লেষণ করা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য তাঁরা বাংলাদেশে আসবেন।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের গবেষণার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠিত মডেল নেই। আমরা এই গবেষণা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই ধরনের গবেষণার জন্য একটি কার্যকর মডেলও উদ্ভাবন করার চেষ্টা করবো। ’

স্থানীয় পর্যায়ের গবেষকদের অংশগ্রহণ বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের আমরা স্বাগতম জানাবো।

ড. ফয়েজ রহমান বলেন, সুন্দরবন নিয়ে এই গবেষণা পৃথিবীর কার্বন চক্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক গবেষণার অংশ হলেও এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল পরিবেশ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘন্টা, ১২ এপ্রিল, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।