মুন্সীগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বোরো তোলার ধুম পড়েছে। একই সঙ্গে ধান কুড়ানিদের সোনালি দিন এখন।
স্বামী-সন্তান নিয়ে রহিমার ৪ জনের সংসার। বোরো কাটার মৌসুমটির জন্য সারা বছর তারা প্রতীক্ষায় থাকেন। হাসিমুখে আগের কথার খেই ধরে বললেন, ‘বিলে কুড়িয়ে যে ধান পাই, তাতেই সারাডা বছর চলে যায়। বাকি থাকে মাছ-সব্জি। এগুলোও বিলের মধ্যেই পাই। ’
জেলার শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিল এলাকার সহস্রাধিক নারী এখন মাঠে মাঠে ধান কুড়ানোয় ব্যস্ত। চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিলে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ্আর তাই বিলের জমিতে ধান কুড়ানিদের এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। বাম্পার ফলন হওয়ায় একই সঙ্গে আড়িয়ল বিলের বর্গা চাষী এক লাখ পরিবারে এখন হাসি আর আনন্দের দিন। বিলের সর্বত্রই এখন বর্গা চাষীদের মাঝে খুশির জোয়ার বইছে।
এ সপ্তাহেই আড়িয়ল বিলে বোরো ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে। সমগ্র বিল এলাকা তাই ভাসছে বোরো ধানের মৌ-মৌ গন্ধে। সোনালী ফসল ঘরে তোলায় এখন মহাব্যস্ত বর্গা চাষীরা। বিলের আলমপুর, লস্করপুর, মদনখালী, বাড়ৈখালী, ঘাদিরহাটিসহ সর্বত্র ধুম পড়েছে বোরো ঘরে তোলার।
শ্রীনগর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার আড়িয়ল বিলের ৩০ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ফলন হয়েছে বেশ। বাম্পার ফলন হওয়ায় মহা খুশিতে বর্গা চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরো জানায়, আড়িয়ল বিলের কৃষকদের অধিকাংশই বর্গা চাষী। নিয়মানুযায়ী ফসলের অর্ধেক পায় চাষী আর অর্ধেক পায় জমির মালিক। তারপরও ফলন ভালো হওয়াতে বর্গা চাষী ও মালিক দু’পক্ষই বেজায় আনন্দে আছে এবার।
এদিকে, পাকা বোরো ধান ঘরের গোলায় তুলতে মহাব্যস্ত চাষীদের সঙ্গে তাল রেখে ধান কুড়ানিরাও দিনমান ব্যস্ত মাঠে পড়ে থাকা মুঠো মুঠো ধান ঝোলা আর ধামায় ভরতে। প্রতিবারের মতো এবারও সহস্রাধিক ধান-টোকাই মাঠে নেমেছে।
কৃষক পাকা ধান কেটে নেওয়ার সময় ছড়া থেকে একটু-আধটু ধান ঝরে পড়ে মাঠে- এভাবে শত শত কিষাণ-মজুরের কেটে নেওয়া ধানের বোঝা থেকে প্রচুর ধান মাটিতে পড়ে- তাই কুড়িয়েই সারা বছরের খোরাকিটা মিটে যায় ধানকুড়ানিদের পরিবারের।
ধান-টোকাই শরিফাতুন্নেসা বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক মাস চলবে আড়িয়ল বিলের পাকা বোরো কাটার মৌসুম। আর একেকজন কুড়ানি প্রতিদিন ৫-৬ কেজি বোরো কুড়িয়ে পান। এতে প্রত্যেকে কয়েক মণ বোরো কুড়িয়ে পায় বিল থেকে।
তাই, বিলের মাঠ-প্রান্তর জুড়ে এখন চলছে চাষী আর মজুরদের ধান কাটা আর আঁটি মাথায় নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর এরই সমান্তরালে ঝরে পড়া পাকা ধান কুড়াতে ধান কুড়ানিদের মহাব্যস্ততা। এর একপক্ষ তুলছে নিজেদের কষ্ট-শ্রম আর অর্থ বিনিয়োগের ফসল আর অপর পক্ষ শুধু কায়িক শ্রম ছাড়া অন্য কিছু বিনিয়োগ না করেই হাসিমুখে তুলে নিচ্ছে অন্যের সাফল্যের ডালা থেকে ঝড়ে পড়া ছিঁটে-ফোটা। তবে, এতে ধানের মালিকদের কোনও অসম্মতি নেই। তারাও আছে হাসিমুখেই।
দু’টো দৃশ্যই মনোরম! আবহমান বাংলার এ এক চিরচেনা রূপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১১