ঢাকা: প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়লেও গত আট বছরে কোন নতুন সিএনজি ও ট্যাক্সি-ক্যাব যুক্ত হয়নি রাজধানীতে। চাহিদা থাকলেও মালিক-চালক বিরোধ, আইনের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে রাজধানীর রাস্তায় নামতে পারছে না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অনুমোদিত পাঁচ হাজার সিএনজি ও ৬ হাজার ট্যাক্সিক্যাব।
দেশে ২০০৩ সালে চালু হয় সিএনজি সার্ভিস, সেসময় সরকার রাজধানীতে ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিক্সার অনুমোদন দেয়। প্রথম অনুমোদনের চার বছর পর ২০০৭ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জনসংখ্যা বাড়ার হার বিবেচনা করে বিআরটিএ নতুন আরও পাঁচ হাজার সিএনজি’র অনুমোদন দেয়।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নতুন অনুমোদন দেওয়া এসব সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে মালিকপক্ষ তা মেনে নেয়নি।
এ অনুমোদনের বিপক্ষে গিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট চালকদের পক্ষে রায় দেয়। এ রায়ের বিপক্ষে মালিক সমিতি সুপ্রীম কোর্টে আপিল করলে সুপ্রীম কোর্টও হাইকোর্টের এ রায়কে বহাল রাখে। মালিক সমিতি এ রায় রিভিউ করার জন্য পুনরায় আবেদন জানায়।
এ রায় কখন হবে তার কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
তবে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান।
অন্যদিকে ট্যাক্সি-ক্যাব চালু হওয়ার পর বিআরটিএ ১৩ হাজারের অনুমোদন দিলেও বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন হয় ১২ হাজার ৩৬০ টি ট্যাক্সি ক্যাবের। তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এখন রাস্তায় নেই বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
সেগুলো কোথায় এ প্রশ্নের উত্তরে বিআরটিএ’র প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাইফুল হক বলেন, ‘এগুলোর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে বিভিন্ন গ্যারেজে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে । ’
তিনি আরও জানান, ট্যাক্সি-ক্যাবের ব্যাপারে সরকার ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি নীতিমালা করেছে। যা ‘ট্যাক্সি ক্যাব নীতিমালা-২০১০’ নামে উল্লেখ আছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোন কোম্পানি ১ হাজারের কম ট্যাক্সি-ক্যাব আমদানি করতে পারবে না।
এ নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যে কোম্পানি ১ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব আমদানি করতে চাইবে তাদের নিজস্ব গ্যারেজ, ওয়ার্কসপ, জনবল দিয়ে পরিচালনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তা না হলেও অনুমোদন দেওয়া হবে না।
এ নীতিমালা গ্রহণের পর রাজধানীর জন্য ছয় হাজার ট্যাক্সি-ক্যাবের অনুমোদন দেয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
তার মধ্যে নীতিমালার শর্ত যাচাই করে ‘শাড়িকা ট্রেডার্স’ নামের একটি কোম্পানিকে ১ হাজার উন্নত মানের ট্যাক্সি-ক্যাব আমদানির অনুমতি দিয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। এ অনুমতি দেওয়া হয় ফেব্রুয়ারি মাসে।
কিন্তু জাপানের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ ট্যাক্সি-ক্যাব গুলো এখনো আমদানি করা যায়নি বলে জানা যায়।
এ ট্যাক্সি-ক্যাব গুলো কবে নাগাদ আসবে তাও সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
নতুন সিএনজি অটোরিক্সা ও ট্যাক্সি-ক্যাব নামানোর কারণ জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে সে হারে সিএনজি ট্যাক্সি ক্যাব বাড়েনি। তাই মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। ’
নতুন সিএনজি ও ট্যাক্সি ক্যাব নামানোর কারণ উল্লেখ করে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এ কে এম শামীম আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘যোগান ও চাহিদার কথা ভেবেই এ সিএনজি গুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। ’
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক সাইফুল হক বলেন, ‘সিএনজি ও ট্যাক্সি ক্যাব গুলো রাস্তায় আসলে মানুষ সঠিক দামে নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। ’
তবে কবে নাগাদ এ সিএনজি ও ট্যাক্সি-ক্যাব গুলো রাস্তায় আসবে তার ব্যাপারে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১১