ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

নগরজুড়ে নববর্ষের সাজ

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১
নগরজুড়ে নববর্ষের সাজ

ঢাকা: নববর্ষকে স্বাগত জানানোর প্রস্ততি চলছে নগরজুড়ে। বাংলা ১৪১৮ সালের প্রথম দিনটি এবছরও আসছে আরও আমেজ নিয়ে।



ঢাকায় নববর্ষের উৎসবে বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিকতা যোগ হয় ১৯৭৮ সালে।

বিখ্যাত ঐতিহাসিক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বাংলানিউজকে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, হালখাতা, কৃষি আর রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে যে বাংলা সনের সূচনা হয়েছিল সম্রাট আকবরের যুগে, সেটিই এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসবে।

স্বাধীনতার পর থেকে মুক্ত পরিবেশে ঢাকায় পয়লা বৈশাখের জমকালো যাত্রা শুরু হয়।

এদিকে, আয়োজকদের দৌড়ঝাঁপে এরই মধ্যে বৈশাখের সাড়ম্বর আগমনী টের পাওয়া যাচ্ছে নগরজুড়ে।

পহেলা বৈশাখ সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জনতার ঢল, গণসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত, রবীন্দ্র আর নজরুল সঙ্গীতে মুখর থাকবে।

পাশাপাশি বৈশাখের অনুষ্ঠানমালায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। গত প্রায় আড়াই যুগ ধরে চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলা থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী, শিল্পী, কবি, শিক্ষক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ অনেকে এক কাতারে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

আড়ং, কে ক্রাফট, বাংলার মেলা, ঐতিহ্য, মেলাঘর, নবরাগ, সেঁজুতি আর কত সব নাম জানা ফ্যাশন হাউসগুলো বৈশাখী আয়োজন করেছে ।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের বাণীতে শুভেচ্ছা জানাবেন ।

পাঁচতারা হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আভিজাত্যের মোড়কে আবদ্ধ বৈশাখী উৎসব উদযাপিত হবে ।

বৈশাখী উৎসবের আয়োজনে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে শিল্প, সংস্কৃতি, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের কর্মীদের। সবার লক্ষ্য আয়োজনে নতুনত্ব, ভিন্নতা আনা। তাদের চেষ্টা এক বছরের জীর্ণতা পেছনে ফেলে সৌন্দযর্, সংস্কৃতির ছোঁয়ায় নগরের বাসিন্দাদের আনন্দ দেওয়া।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বহুমাত্রিক আয়োজনের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বৈশাখী মেলার প্রতি নগরবাসীর রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ।

শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক, তামান্না রিভারভিউ পার্কসহ সবখানে বৈশাখের প্রস্তুতি, চলছে ধোয়ামোছার কাজ।

অভিজাত, বাঙালিয়ানা ঘরানার রেস্টুরেন্টগুলো প্রচার করছে তাদের বৈশাখের মেন্যু সংবলিত লিফলেট।

খাবারে বৈশাখী স্বাদ আনতে তৎপর সোনারগাঁও, শেরাটন, ওয়েস্টিন, রেডিসনের মতো অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্টও।

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে থাকছে উৎসবের আয়োজন। ধানমন্ডি লেকে বিকেলে থাকছে নৌকা বাইচের আয়োজন।

এবার সরকারি উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বৈশাখী উৎসব।

ঢাকায় সরকারি অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি। এ ছাড়া শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও সোনারগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনও বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেড এর পৃষ্ঠপোষকতায় সোমবার শুরু হয়েছে বৈশাখী কাবাডি উৎসব- ১৪১৮।

পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে জমছে বইমেলা।

সরকারি ছুটি হলেও সব জাদুঘর ও প্রততাত্বিক স্থানগুলো দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হবে।
ধানম-ির ছায়ানট ভবন এখন সরগরম নৃত্য, সঙ্গীত, কবিতাসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য প্রস্ততি নিয়ে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরাও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও নাটকের মহড়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে।

ওয়ান্ডারল্যান্ড, নন্দন পার্কেও দিনব্যাপী বাউল, জারি-সারি, পল্লীগীতি ও ব্যান্ডসঙ্গীতের আয়োজন থাকছে।  

পহেলা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে সবার মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে তা কিন্তু পথেঘাটে বের হলেই চোখে পড়ছে।

বিশেষত শপিং সেন্টারগুলোর লাল-সাদার আয়োজনই বলে দেয় বৈশাখ চলে এসেছে দোরগোড়ায়।

নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গুলশানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে গুলশান সোসাইটি ও গুলশান ইয়ুথ ক্লাব।

বিক্রমপুরে নদীর পাড়ে বৈশাখ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা।

হালখাতা ঘিরে পুরনো ঢাকার বৈশাখী প্রস্ততির অংশ হিসেবে নগরীর তাঁতীবাজার, বাংলাবাজার ও শাঁখারিবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা সম্পন্ন করেছেন বৈশাখের সব প্রস্ততি।

তারকাদের বৈশাখ

রূপালী পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, আমার কাছে বৈশাখের আবেদনটা একটু আলাদা। এর সঙ্গে কেন যেন মা ও মাটির একান্ত সম্পর্ক। আমিও বৈশাখের কেনাকাটা করবো।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার কিছুটা আফসোস করেই বললেন, আজকাল কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে পারিবারিক বন্ধনগুলো আর তেমন চোখে পড়ে না। সময় পাল্টেছে, যুগ পাল্টেছে। নববর্ষও আগের মতো সাদাসিধে নেই ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে নববষের্র প্রথম দিনে প্রত্যেকের ভাল কিছু করে দেখানোর অঙ্গিকার করার রীতি বেশ প্রচলিত। যেখানে নববর্ষে মানুষ সবচেয়ে বেশি অঙ্গিকার করে ধূমপান ত্যাগ করবে বলে। ব্যক্তিগত সীমা ছাড়িয়ে এই নববর্ষে দেশের জন্য যেন আমরা অঙ্গিকার করতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।