ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অর্থ বরাদ্দ নেই, ঝিমিয়ে পড়েছে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’

জেবুন নেসা আলো, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১১
অর্থ বরাদ্দ নেই, ঝিমিয়ে পড়েছে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’

ঢাকা: পূর্ণাঙ্গভাবে গঠনের জন্য তিন মাস আগে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র কার্যক্রম।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বীমা অথরিটি।

তবে এখন পর্যন্ত সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জনবল কাঠামো ও বাজেটের অনুমোদন না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

বুধবার প্রস্তাবিত অর্থ বরাদ্দ ও জনবল কাঠামো নিয়ে বীমা অথরিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বীমা অথরিটি সূত্রে জানা যায়, নতুন বীমা আইন পাশের পর একজন  চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্যের সমন্বয়ে বীমা অথরিটি গঠিত হয়। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে পাঁচ সদস্যের অথরিটি নিয়ে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের’ কার্যক্রম শুরু হয়।

কার্যক্রমের প্রথম ধাপে জনবল নিয়োগ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাবে জনবল কাঠামোতে মোট ১৭৯ জন লোক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পূর্ণাঙ্গভাবে গঠনের জন্য ১৯ কোটি টাকার একটি বাজেট তৈরি করা হয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বীমা অধিদপ্তরের ২২ কোটি টাকার ফান্ড থেকে এ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য আট কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। পরে কার্যক্রম শুরু হলে নিজস্ব আয় ফান্ডে যুক্ত হবে।

এ ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শুধু চারজন সদস্য নিয়ে কার্যক্রম চলছে। অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ঋণ নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বীমা অধিদপ্তরও লোকবল সংকটে ভুগছিল। ফলে বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত হওয়ার পর সেখান থেকে একজন মাত্র অফিসার আমরা পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পূর্ণাঙ্গ গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমরা ১৯ কোটি টাকার একটি বাজেট প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের ২২ কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। এ ফান্ড থেকেও সরকার অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে। যত দ্রুত এটি অনুমোদন হবে তত দ্রত কার্যক্রম শুরু হবে।

শেফাক আহমেদ জানান, সাধারণ ও জীবন বীমাসহ মোট ৬০টি বীমা প্রতিষ্ঠান বীমা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে চলছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪২টি প্রতিষ্ঠান।

এ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যত দ্রুত সম্ভব বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বীমা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, অন্যসব খাতের চেয়ে বীমা একটু আলাদা।

এ খাতে দক্ষ লোক নেই তেমন। অধিকাংশ কোম্পানিতে বর্তমানে কোনো এমডি নেই। ভারপ্রাপ্ত লোক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এতে নতুন আরও কোম্পানির নিবন্ধন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

১৯৩৮ সালের বীমা আইনে এখনো বীমা ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছিল। আইনগত জটিলতায় বীমা ব্যবসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, বীমা খাতের সম্প্রসারণ, বীমা শিল্পকে যুগোপযোগী করতে ২০১০ সালের ৩ মার্চ জাতীয় সংসদে ‘বীমা বিল-২০১০’ ও ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিল-২০১০’ পাস হয়।

১৮ মার্চ এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বীমা আইনটি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত হবে। নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হবে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ নামে।

অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির চাকরির দায়িত্ব থাকবে নতুন গঠিত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে। ‘বীমা নিয়ন্ত্রণ বিল’ অনুযায়ী এটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্যের সমন্বয়ে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গঠন হবে।   চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটি প্রধান নির্বাহী হিসেবে এ আইনের অধীন প্রণীত বিধি ও প্রবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষের প্রশাসন পরিচালনা করবেন।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগ্যতার মাপকাঠি হবে, বীমার ক্ষেত্রে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর বার্ষিক বাজেট বিবরণী অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পেশ করবে।

নতুন আইন দু’টি কার্যকর হলে বীমা ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে এবং বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে এ খাতের লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ২৬ এপ্রিল, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।