ঢাকা: একই দেশ, একই ধরণের শিল্প। পার্থক্য শুধু রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ভেতর আর বাইরে অবস্থানে।
শিল্পটি হচ্ছে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত গার্মেন্ট শিল্প। রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ অর্জিত হয় এ শিল্প থেকে। যেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজারের মত কারখানায় ৩৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আর এ বিশাল জনশক্তির ৮৫ শতাংশই নারী।
ইপিজেডের ভেতর ও বাইরে বিদ্যমান বৈষম্য ও পার্থক্য তুলে ধরে শিল্পমালিক ও উদ্যোক্তারা বলছেন, এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সকল শিল্প কারখানায় সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। এর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যান্য শিল্পেও বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) আসন্ন ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে তুলে ধরা প্রস্তাবের একটি অংশে এ বৈষম্যের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ইপিজেডে অবস্থিত গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে (শুল্কমুক্ত), ট্যাক্স হলিডের সময়ে লভ্যাংশ আয় (ডিভিডেন্ড ইনকাম) থেকে ট্যাক্স অব্যাহতি, বিনাশুল্কে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, অফিস সরঞ্জামাদি, বিল্ডিং তৈরির সরঞ্জাম, প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং সরঞ্জাম আমদানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির নিশ্চিত সরবরাহ ও তিনটি ইউটিলিটি যানবাহন আমদানির সুবিধা পায়।
অপরদিকে বলা হয়, এসব সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার পাশপাশি ইপিজেডের বাইরে অবস্থিত শতভাগ রপ্তানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে স্থাপন করতে হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোনসহ অন্যান্য ইউটিলিটি সংযোগ স্বংয়ক্রিয়ভাবে পাওয়া যায় না এবং জমি ও ইউটিলিটি সংযোগের জন্য মোটা অংকের বিনিয়োগ করতে হয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইপিজেডের ভেতরে যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাতে করে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘এলডিসিভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পে জিএসপি এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা পাওয়ায় বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করছে এবং এখান থেকে টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। তারা অতিথি পাখির মতো। ’
তিনি আরো বলেন, ‘অপরদিকে দেশীয় উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করে লাভ করতে পারলে অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করবে। তারাই দেশে অন্যান্য ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করে থাকে। তাই কাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার সেটা সরকারের ভেবে দেখা দরকার। ’
একই সঙ্গে তিনি ক্রমবর্ধমান এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে দক্ষ শ্রমিক ও মিড ম্যানেজমেন্ট, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট দূরীকরণ, ব্যাংক সুদের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বন্দরের উন্নয়ন করার কথা বলেন। ’
তিনি এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রোডাক্টিভিটি (উৎপাদনশীলতা) বাড়ানোর প্রতি জোর দেন।
তার মতে, ‘আমাদের উৎপাদনশীলতা অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। যেখানে চীনের উৎপাদনের হার ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ, ভারতে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৬৫ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশের উৎপাদনের হার ৩৫ থেকে ৩৮ শতাংশ। ’
এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা ও ব্যবসায়ীরা আন্তরিক হলে আরও ১৫ থেকে ২০ বছর এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ধরে চলা যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এনবিআরের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় ইপিজেডের ভেতর ও বাইরের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যর বিষয়টি তুলে ধরে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি। আমরা মনে করি, এক দেশে দুই ধরনের নীতি চলতে পারে না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘শতভাগ রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ভাড়াকৃত স্থান ও স্থাপনার বিপরীতে ভ্যাট প্রদান থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দান, রপ্তানি মূল্যের উৎসে আয়কর কর্তনের হার শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং এই কর আদায়কে চূড়ান্ত কর নিষ্পত্তি হিসাবে গণ্য করা, সরকারের দেওয়া সকল প্রকার নগদ সহায়তার উপর কর আরোপ না করার দাবি জানিয়েছি। ’
একইসঙ্গে এ শিল্পের প্রাণ শ্রমিকদের ডরমিটরি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও প্রস্তাবিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১১