ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ভারত-পাকিস্তান আলোচনায়ও দাউদ ইব্রাহিম !

আহ্সান কবীর, কান্ট্রি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১১
ভারত-পাকিস্তান আলোচনায়ও দাউদ ইব্রাহিম !

ঢাকা: ইসলামাবাদে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান আলোচনা। সে আলোচনায় দিল্লি দাউদ ইব্রাহিমকে ফেরত দিতে ইসলামাবাদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে।

সংবাদ মাধ্যমকে একথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ।

আগামী বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাওয়ের ইসলামাবাদ সফর বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফিংকালে মঙ্গলবার কৃষ্ণ একথা জানান। তিনি জানান, দাউদসহ পাকিস্তানে আত্মগোপন করে থাকা অপরাপর সন্ত্রাসীদের ফেরৎ চাইবে ভারত। মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের তালিকায় ১ নম্বরে আছেন।    

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো হানায় লাদেন বধের পর দাউদ ইব্রাহিম নিজেরও একই ধরনের পরিণতির আশংকায় সদলবলে পাকিস্তান ছেড়েছেন। তবে এ সংবাদের সত্যাসত্য নিশ্চিত করা না গেলেও বিরাজমান পরিস্থিতির বিচারে পর্যবেক্ষকদের ধারণা- এমনটা হতেও পারে।

এদিকে কৃষ্ণর বক্তব্যে একথা পরিষ্কার ছিল যে, দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা স্থাপনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠেয় বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে নিরুপমা রাও তার পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ সালমান বশীরের কাছে যেসব বিষয় উপস্থাপন করবেন সেসবের মধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও সন্ত্রাসে দেশটির মদদদানের বিষয়টি এক বড় প্রসঙ্গ হবে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর আদালতে লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলির স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সংশ্রবের প্রসঙ্গেও দিল্লি মজবুত অবস্থান নেবে বলে কৃষ্ণ জানান। হেডলি তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ে ২৬/১১ এর হামলায় আইএসআই ও লস্কর-ই-তৈয়বা হামলার স্থানগুলো চিহ্নিতকরণে তাকে সহযোগিতা করেছে।

স্মর্তব্য, গত ২৮-২৯ মার্চ দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের যে তালিকা হস্তান্তর করে তাতে দাউদ ইব্রাহিম ছাড়াও অনেকের নাম আছে। এরা হলেন, লস্কর-ই-তৈয়বা’র প্রত্যিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদ ও একই সংগঠনের সামরিক কমান্ডার জাকি-উর-রেহমান লাখভী। তবে গত মাসে আশ্চর্যজনকভাবে ওই তালিকা থেকে দিল্লি খালিস্তান আন্দোলন নেতা পরমজিৎ সিং ও ওয়াধাবান এর নাম তুলে নেয়।  

ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় দাউদের নাম বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর দ্বিতীয় সন্ত্রাসী ব্যক্তি হিসেবে রয়েছে।    

দাউদ ইব্রাহিম ছেলের বিয়ের রিসিপশন পিছিয়েছিলেন
পাকিস্তানের করাচির নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে অজানার উদ্দেশে শুধু মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম (শেখ দাউদ ইব্রাহিম কাস্কর) একাই পগার পাড় হননি। তার আগে পরে আরও কয়েক ডজন ভারতীয় সন্ত্রাসী পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে।

সূত্র জানায়, তাদের পাকিস্তান ছাড়ার পেছনে প্রধান কারণ আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মত একই পরিণতির ভয়। দাউদ ইব্রাহিম ছাড়া পাকিস্তানে এতদিন আত্মগোপন বা আশ্রয় নিয়ে থাকা ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন দাউদের ছোট ভাই আনিস ইব্রাহিম, ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিল, মেমন ভ্রাতৃদ্বয়, টাইগার ও আইয়ুব। এছাড়াও আছেন খালিস্তান আন্দোলন নেতা লাখবির সিং, পরমজিৎ সিং পঞ্জওয়ার, রণজিৎ সিং, ওয়াধাবা সিং এবং কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী জঙ্গি নেতা আমানুল্লাহ খান ও হিজবুল মুজাহিদিন প্রধান সৈয়দ সালাহউদ্দিন।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচির অভিজাত এলাকা ক্লিফটনে দাউদ ইব্রাহিমের সপরিবাসে বসবাস করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। তবে দাউদ ইব্রাহিমসহ উল্লেখিত ব্যক্তিদের ফেরত দিতে দিল্লি বারবার পাকিস্তানকে অনুরোধ করলেও ইসলামাবাদ তাদের সেখানে অবস্থানের বিষয়টি অস্বীকার করেছে বরাবরই।

পাকিস্তান ও ভারতের আন্ডারওয়ার্ল্ড সূত্রগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডো হানায় লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর ছত্রচ্ছায়ায় দাউদ আর নিজেকে নিরাপদ মনে করছিলেন না। এজন্য গত মে মাসে তার ছেলে মঈন ইব্রাহিমের বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেন তিনি।

দাউদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গত ২৭ মে ছেলে মঈনের বিয়ে সম্পন্ন হয় আর এর রিসিপশন (বৌ-ভাত) অনুষ্ঠানের কথা ছিল পরদিন ২৮ মে। কিন্তু বিশাল ধুমধামের ওই বিয়ের পর রিসিপশনের সব আয়োজন সম্পন্ন করার পরও শেষ মুহূর্তে দাউদ তা পিছিয়ে দেন।

অপরদিকে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর অপর শীর্ষ আল কায়েদা নেতা ইলিয়াস কাশ্মীরিও পাকিস্তানে নিহত হন মার্কিন হামলায়। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী হিটলিস্টে আছেন ভারতের ‘ওয়ান্টেড লিস্টের’র এক নম্বরে থাকা দাউদ ইব্রাহিম। কারণ, মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে লাদেনের সঙ্গে দাউদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এছাড়া মার্কিনীদের দাবি মতে, তালেবান প্রটেকশনে দাউদ ইব্রাহিম ৯০ দশকের শেষ দিকে আফগানিস্থানে গিয়ে লাদেনের সঙ্গে  মোলাকাতও করেছিলেন।

এ পটভূমিতে চলতি মাসের প্রথম দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুম্বাইর একজন সাবেক গোয়েন্দা ব্যুরো চিফ ভারতের জনপ্রিয় একটি ট্যাবলয়েডে মন্তব্য করেছিলেন, ‘নিজেদের চামড়া বাঁচাতে নিজেদের লোকজনেরই পিঠে ছুরিকাঘাতের জন্য কুখ্যাত আইএসআই-র ওপর বিশ্বাস রাখা এখন দাউদ ইব্রাহিমের পক্ষে চরম বোকামির কাজ হবে। ’

এ বিষয়ে মুম্বাই পুলিশের অপরাধ বিভাগের জয়েন্ট কমিশনার হিমাংশু রায়ের মত: পাকিস্তানের গোপন আস্তানায় ওসামা বিন লাদেন ও ২৬/১১ মুম্বাই হামলার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী ইলিয়াস কাশ্মীরি নিহত হওয়ার পর দাউদ ইব্রাহিমের মত একজন মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীর আশ্রয়দাতা হিসেবে নিজেদেরকে আর বিতর্কিত করে রাখতে চায় না আইএসআই।

কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরণের অবস্থা তাদের খুবই সংকটাপন্ন অবস্থায় ফেলে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, ২১ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।