ঢাকা: এ গল্প একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাদা বেড়ালে পরিণত হওয়ার। রাজধানীর ব্যস্ততম সার্ক ফোয়ারার কাছে মানুষের চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু রোদ-বৃষ্টিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখন তার রঙ হারিয়ে পুরোটাই সাদা। জাতীয় প্রাণী, যার জন্য বাঙালির গর্ব, তার এই চেহারা মানুষকে কষ্টই দিচ্ছে। বিশেষ করে নগরের ব্যস্ত একটি পয়েন্টে এমন একটি মূর্তি কিভাবে অবস্থান করে সে নিয়ে প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “নিঃসন্দেহে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এমন চেহারা জাতীয় প্রাণীর গুরুত্বকে খাটো করেছে। তবে এর চেয়ে অনেক বড়ো বড়ো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে বলে এ বিষয়টি গৌণ মনে হচ্ছে। ”
অধ্যাপক হাসেম খান বিষয়টিকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলেই মনে করছেন।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তিনি বলেন, “রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে উপস্থাপন করার জন্য তৈরি করা হলে তার এই চেহারা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন একটি মুর্তি নগরবাসীর কাছে কিংবা পর্যটকদের কাছে একটি ভুল চিত্রই তুলে ধরবে। ’
তিনি বলেন, ‘সূর্যালোকে কিংবা বৃষ্টিতে রঙ নষ্ট হয়ে যাবে কিনা সেটা আবশ্যই এটি বানানোর সময় খেয়াল রাখা উচিত ছিলো। ’
১১তম সাউথ এশিয়ান গেমসের সময় বিমানবন্দর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে ও দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে বেশকিছু স্থাপনা বসানো হয়। সার্ক ফোয়ারার সামনে সে সময় বসানো হয় দাঁড়িয়ে থাকা ও বসে থাকা দুটি বাঘের মুর্তি। জাতীয় প্রাণীকে তুলে ধরাই ছিলো যার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফোরটিন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের ত্বত্তাবধানে এ কাজ করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপণী সংস্থা।
বাংলাদেশ পাবলিসিটি নামের একটি সংস্থা বাঘের মুর্তি বসানোর কাজ করে।
সংস্থাটির স্বত্তাধিকারী মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের টাকা খরচ করে মুর্তি দুটি তৈরি করেছি। এখন রোদ বৃষ্টিতে রঙ্ উঠে গেছে। নতুন করে রঙ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এমন একটি চেহারা নগরবাসী পছন্দ করছেন কিনা এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা করার অনেক মানুষই রয়েছেন কিন্তু কাজ করার কেউ নেই। আমরা কাজটি করার চেষ্টা করেছি। ’
মুর্তি বানানোর সময় সঠিক ড্রয়িং কিংবা রঙের ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শতভাগ সম্ভব হয় নি। ’
সাফ গেমসের সময় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করেছেন বিশিষ্ট স্থপতি মৃণাল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘কাজটি খুবই দায়সারা গোছের হয়েছে। এ কাজ যারা করেছে তারা সামান্য দায়িত্বশীলতারও পরিচয় দেন নি। ’
তিনি বলেন, ‘স্বল্প টাকায় মিস্ত্রি ভাড়া করে মুর্তি বানানো হয়েছে। যা দেশের শিল্পকলা জগতকেই খাটো করেছে। বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এমন একটি মুর্তি দেখে তার ভিত্তিতেই এ জগতের সকল শিল্পীকে বিচার করছেন। যা নিতান্তই লজ্জার। ’
নগরীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে মুর্তিটি যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে নেওয়া উচিত বলেও মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় ২৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১০