ঢাকা : হাঁটা শুরুর আগেই পঙ্গু হতে বসেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। পর্যটন অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্নবুনে যাত্রার শুরুর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সীমাহীন অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় এই পর্যটন সংস্থা।
স্বাধীনতার পর গত ৪০ বছরে পর্যটন কর্পোরেশনকে দিয়ে পর্যটন খাতের কোনো উন্নতি না হওয়ায় ভিন্ন চিন্তা শুরু হয় বেসরকারি ও সরকারি মহলে। ২০১০ সালে ট্যুরিজম অ্যাক্ট গঠন করা হয়। সেই অ্যাক্ট অনুযায়ী পর্যটনকে এগিয়ে নিতে গঠন করা হয় ট্যুরিজম বোর্ড। পরবর্তীতে এর পরিচালনা পর্ষদে ১৭ জন সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার। এর মধ্যে ১২ জন সরকারি আমলাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সচিবালয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের এক কক্ষে অফিস নিয়ে গত বছরের শেষ প্রান্তে কাজ শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান। সরকার বিমান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আলীম উদ্দিন আহমেদকে এ প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আমলাদের প্রাধান্য নিয়ে পরিচালনা বোর্ড গঠিত হওয়ার ঘটনাতেই প্রথম হোঁচট খায় স্বপ্নের ট্যুরিজম বোর্ড। বস্তুত এর মাধ্যমে বোর্ড গঠনের আগে বলা ‘পেশাদার ও অভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা’র অঙ্গীকার অসার হয়ে পড়ে। বোর্ডের অ্যাক্টে স্পষ্ট করেই উল্লেখ থাকা ‘পেশাদার লোককে নিয়োগ দেওয়ার’ নিয়ম ভেঙে আমলা নিয়োগ দিয়ে সরকার শুরুতেই অপেশাদার আচরণ শুরু করে।
সূত্র জানায়, ট্যুরিজম বোর্ড গঠনের সময়ে প্রধান নির্বাহী পদে একজন ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ অথবা একজন প্রফেশনালকে রাখার কথা বলা হলেও এখন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে রয়েছেন সরকারের একজন যুগ্ম-সচিব।
অথচ, সরকারি আমলা অথবা বর্তমান আইনেও একজন প্রফেশানালকে সিইও পদে রাখার বিধান রয়েছে। যদি এ ধরনের পেশাদার কাউকে না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আমলাদের মধ্য থেকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু আইনের সবকিছুই উপেক্ষিত হয়েছে বোর্ডে।
একই সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বোর্ড থেকে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডেপুটেশনে পাঠানো হয় ট্যুরিজম বোর্ডে। এরপর গুলশান-১ এ ভাড়া করা ভবনে নিজস্ব অফিস নেয় বোর্ড।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এক বছর পার হলেও এখনো ট্যুরিজম বোর্ডে কোনো অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়নি। এর ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ-পদবির কিছুই ঠিক হয়নি। যে কারণে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। অর্গানোগ্রাম না থাকায় ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন দিতে হচ্ছে পর্যটন কর্পোরেশনকে।
তাছাড়া প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে বোর্ডের ঊর্ধ্বতন সবগুলো পদেই সরকারের আমলাদের নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এই অর্গানোগ্রামটি গত বছরের জুনে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আজ পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত হয়নি। প্রস্তাবিত এ অর্গানোগ্রামে বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ১৫৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঊর্ধ্বতন ও নীতিনির্ধারণী ৩০টি পদই ক্যাডার সার্ভিস থেকে পূরণের নিয়ম রাখা হয়েছে।
এ নিয়েও বর্তমানে কর্মরতদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের সিইও ডায়নামিক লোক নন। সেই সঙ্গে পর্যটন সংক্রান্ত কাজের তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কিছুদিন কাজ করেছেন এটাই তার অভিজ্ঞতা।
তাই পদ-পদবি ও অর্গানোগ্রাম না থাকাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এক প্রকার হতাশা পেয়ে বসেছে পুরো বোর্ডকে। এর মধ্যে পর্যটন কর্পোরেশন থেকে আসা এক কর্মকর্তা গত নভেম্বরে তার পুরনো প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়েছেন। বাকি যারা রয়েছেন তারাও এখানে থাকতে চাইছেন না।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যেটি করা হয়েছে তাতে কোনো সুফল আসবে না। বরং পর্যটন কর্পোরেশনের মতো আরেকটি বাড়তি চাপ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আলীম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানিয়ে ফোন রেখে দেন।
পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও পর্যটনভিত্তিক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এর মাধ্যমে আরেকটি আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হলো। প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম দিয়ে আবার সেই পর্যটন কর্পোরেশনের একটি শাখা খোলা হয়েছে মাত্র।
বাংলাদেশ সময় : ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১২