বহুল আলোচিত ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের কূটনৈতিক প্রতিবেদক আনোয়ারুল করিম রাজু। প্রথম বাংলাদেশি সাংবাদিক হিসেবেই শুধু নয়, তিনি সেখানে যাওয়া প্রথম কোনও বাংলাদেশি বলেও স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছেন।
আনোয়ারুল করিম এখন ভারতের গুয়াহাটিতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি জানাচ্ছেন—
টিপাইমুখ ঘুরে গত শুক্রবার রাতে আমি আসামের গুয়াহাটিতে পৌঁছি। বেশ কিছুদিনের পরিকল্পনা শেষে গন্তব্যে রওনা হওয়ার পর টিপাইমুখ এলাকায় যাতায়াতে আমার ছয় রাত ও সাত দিন সময় লাগে।
এই ক’দিনে নদী, পাহাড় পেরিয়ে ‘অনাকাঙ্খিত’ নানা ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। টিপাইমুখে পৌঁছার পর ছবি তোলার অভিজ্ঞতাও ‘সুখকর’ ছিল না। কিছু ছবি আমি মুছে ফেলতে বাধ্য হই। যদিও পরে তা আবার তোলার ‘অনুমোদন’ দেওয়া হয়।
যাত্রাপথের পুরোটা সময় কোনও ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। এমনকি মাঝে ৫ দিন জঙ্গলেই ঘুমোতে হয়েছে। খাবারের ব্যবস্থা করাও সেখানে অসাধ্য একটি ব্যাপার। সব মিলিয়ে ‘অবশেষে’ আমি সেখান থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছি।
কোনও বিশেষ সংবাদের জন্য নয়, বরং টিপাইমুখ এলাকা ঘুরে দেখে আসাই ছিল বাংলানিউজ থেকে আমার বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট।
টিপাইমুখ এলাকা ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মনিপুর ও মিজোরামের সীমান্তে অবস্থিত। মনিপুরের চুরাচান্দপুর জেলার একটি এলাকা এটি। মনিপুরের বিধানসভায় টিপাইমুখ একটি একক আসন।
মনিপুরের বরাক নদী ও মিজোরামের তুইপাই নদী যেখানে মিশেছে সেখানেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
যাত্রাপথে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়েছে। কয়েক হাজার ফুট উঁচু পাহাড় ডিঙিয়ে নৌকায় চড়তে হয়। যদিও সে পথে বিপদ কম নয়; এ বিপদ অবশ্যই জঙ্গলের জন্তু জানোয়ারের জন্য নয়!
আসামের কাছাড় জেলা ও মনিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলার সীমান্তরেখার পাহাড়ি নদী ‘জিরি’র মুখ থেকে রওনা হওয়ার পর প্রায় ১২৫ কিলোমিটার পথের শুরুর ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী, মনিপুরের পুলিশ, মনিপুরের বনবিভাগের চেকপোস্ট আছে। কিন্তু এরপর ‘অন্যরাও’ তাদের এলাকায় চেকপোস্ট পরিচালনা করেন!
টিপাইমুখ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ‘মার’ উপজাতির মানুষ ডোঙ্গা তখাই দোভাষীর সাহায্যে বাংলানিউজকে জানান, এর আগে বিবিসির একজন ও আনন্দবাজারের একজন সাংবাদিক নৌকাযোগে একসঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।
ডোঙ্গা তখাই বলেন, ‘এরপর আর কোনও সাংবাদিককে টিপাইমুখে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের কেউ এসেছে বলেও জানি না। ’
টিপাইমুখ থেকে বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী একটি লঞ্চের মালিক ডোঙ্গা তখাই। তার বাবা ওই গ্রামের গাওগুরা (মাতবর)।
ডোঙ্গার মতো ওই গ্রামের বাসিন্দা উদয় দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আর কেউ সেখানে কোনোদিন এসেছেন বলে শুনিনি। ’
উদয় আসামের বাঙালি। তবে গত প্রায় এক যুগ আগে এখানে এসে টিপাইমুখ এলাকার উপজাতি মেয়েকে বিয়ে করেন। এখন টিপাইমুখ গ্রামে একটি দোকান চালান তিনি।
এর আগে টিপাইমুখ যাওয়া আনন্দবাজারের সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার কলকাতাস্থ একজন প্রতিনিধি এর আগে ২০১০ সালে টিপাইমুখ যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত নারায়ণডহর বা জাকুরাডহর থেকে ফিরে গেছেন। ’ (ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রওনা হয়ে পথে টঙ্গি থেকে আবার ঢাকা ফিরে যাওয়ার মতো ব্যাপার)।
আসামের শিলচরে আনন্দবাজারের প্রতিনিধি উত্তম কুমার সাহা আরও জানান, ২০০৯ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে তিনি ও বিবিসির কলকাতা সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী টিপাইমুখে গিয়েছিলেন।
মনিপুরের আদিবাসী ‘মার স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র টিপাইমুখ ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিরিঙ্গা ইংরেজিতে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কারা যেন আসবে বলে এর আগে শুনেছিলাম। হেলিকপ্টার নিয়ে তারা আসে, কিন্তু এখানে নামতে পারেনি। ’
টিপাইমুখ এলাকার বাসিন্দারা মনিপুরের মার উপজাতির মানুষ। রক্ষণশীল এ উপজাতির মানুষেরা টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের কারণে আরও বেশি রক্ষণশীল আচরণ করে। বাইরের যে কাউকে এখন তারা সন্দেহের চোখে দেখে, তাকায় অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে। এজন্য বাইরের মানুষকে তাদের ‘অযাচিত আচরণে’র মুখোমুখি হতে হয়।
টিপাইমুখ ঘুরে আসতে আমার সফরসঙ্গী ছিলেন আসামের বাংলা দৈনিক ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ পত্রিকার অসম সাহসী সাংবাদিক মনজুর আহমেদ বরভূঁইয়া। এছাড়া নানাভাবে সহায়তা করেছেন আসামের দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী এবং কলকাতাস্থ প্রখ্যাত প্রয়াগ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলা পত্রিকা দৈনিক প্রয়াগের সম্পাদক বাসুদেব বাগচী।
এর বাইরে আরও কয়েকজন সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কিন্তু তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক! এদের সবার সমন্বিত সহযোগিতা না পেলে এ সফরের পরিণতি কি হতো তা ভাবতে হয়তো খুব কষ্ট করতে হবে না!
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১২
বাংলানিউজ স্পেশাল
বাংলানিউজের টিপাইমুখ জয়
আনোয়ারুল করিম, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
![বাংলানিউজের টিপাইমুখ জয়](public/uploads/2012/01/28/AKR-bg20120128162727.jpg)
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।