মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি থেকে ফিরে: খনির উন্নয়ন কাজ এখনই শুরু না হলে দুই বছরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি। বিশাল মজুদ থাকলেও এমনই আশঙ্কা করছেন খনি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট লোকজন।
খনিসূত্র জানিয়েছে, পাঁচটি স্টোপ নিয়ে ২০০৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনে যায় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। খনিটির এসব স্টোপের পাথর ২০১৪-এর মাঝামাঝি ফুরিয়ে যাবে।
আর নতুন করে পাঁচটি স্টোপের উন্নয়নে কমপক্ষে দুই বছর লাগবে। সে হিসেবে এখনই নতুন স্টোপ উন্নয়নের কাজ শুরু করা প্রয়োজন। আর তা করা না হলে ২০১৪ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ আলিম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, যে স্থান থেকে পাথর তুলে আনা হয়। তকে বলা হয় স্টোপ।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপাড়া অঞ্চলে বিশাল মজুদ থাকলেও যেসব স্টোপ থেকে পাথর তুলে আনা হচ্ছে সেগুলোর পাথর দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। ’
খনির উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে জামিল আহমেদ আলিম বলেন, ‘নতুন স্টোপ থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য, যন্ত্রপাতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, খনি থেকে পাথর তুলে আনার ট্রেন লাইন স্থাপন, ভেন্টিলেশন, পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি কাজ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ’ উন্নয়ন কাজ শুরুর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
খনিসূত্র জানিয়েছে, খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথ রোধ করতে ২০১০ সালে দেওয়া খনি উন্নয়ন প্রস্তাব এখনও ঝুলে আছে মন্ত্রণালয়ের খনিজ সম্পদ বিভাগে।
খনিটির ৩৪০ কোটি টাকার ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) পেট্রোবাংলার বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে প্রস্তাবটি পড়ে রয়েছে জ্বালানি বিভাগে।
প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুতে এই খনির পাথর ব্যবহারের বিষয়ে আলোচিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে খনিটির এ অবস্থা ‘জটিল’ সমীকরণের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুতে যে মানের পাথর (ইগনিশাস রক ২৪ হাজার পিএসআই) ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে তা দেশের মধ্যপাড়া গ্রানাইট শিলাখনি ছাড়া আর কোথাও নেই।
তিনি আরও জানান, এই মানের পাথর ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও নেই। এই পাথর আনতে হলে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যের দিকে ছুটতে হবে। এতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে দেশীয় এই কোম্পানিটি মুনাফায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তিনি এখনই ডিপিপি অনুমোদনসহ খনিটি থেকে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করার তাগিদ দেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। যথা সময়েই উন্নয়ন কাজ হবে। ’
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখার জন্য শিগগিরই মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডে পরিদর্শনে যাচ্ছি। ফিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বর্তমান সরকার খনিটির বিষয়ে আন্তরিক দাবি করে বলেন, ‘চলতি বছরে অনেক উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি আমরা। ’
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তোফিক- ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘খনি উন্নয়ন প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১২