ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

জনবল সংকটে ফায়ার সার্ভিস

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১২
জনবল সংকটে ফায়ার সার্ভিস

ঢাকা: জনবল সংকটে ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর গুলিস্থানের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে ফায়ার সার্ভিস’র বর্তমান ও করণীয় প্রেক্ষাপট নিয়ে আলাপকালে বাংলানিউজকে এ কথা জানান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স’র পরিচালক(অপারেশন এবং ব্যবস্থাপনা) মেজর মোহাম্মদ মাহবুব।



তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে আমরা বড় কষ্টে আছি। এক স্টেশনের জনবল দিয়ে অন্য স্টেশন আমাদের চালাতে হচ্ছে। আবার অনেকগুলো স্টেশনে লোক একেবারে নেই বললেই চলে, যা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। ’

তিনি জানান, সারা বাংলাদেশে ২৩৩টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য জনবল মাত্র ৬৫০০ জন। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আমরা আশা করি, অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। ’

তিনি বলেন, অনেক ফায়ারম্যান ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার পর ২৪ ঘন্টা বিশ্রাম পান। তাছাড়া প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে লোক সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনের জনবল ২৭ জন ও তৃতীয় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে লোক সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে আছেন সিনিয়র স্টেশন অফিসার ১ জন, স্টেশন অফিসার ১ জন, লিডার ৩ জন, ড্রাইভার ৫ জন, ফায়ারম্যান ২২ জন, বাবুর্চি/মশালচি ২ জন ও ঝাড়–দার মাত্র ১ জন। ২য় শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে আছেন সিনিয়র স্টেশন অফিসার ১ জন, লিডার ২ জন, ড্রাইভার ৪ জন, ফায়ারম্যান ১৬ জন, বাবুর্চি/মশালচি ২ জন ও ঝাড়–দার মাত্র ১ জন।
 

তিনি বলেন, ‘আমি যতোটুকু জানি, আর্মি ও বিজিবি’র মতো সুযোগ-সুবিধা পান না ফায়ার সার্ভিস’র লোকজন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ড বেশি ঘটে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যেখানে বর্ষা মৌসুমে ঘটে মাত্র ১৮ থেকে ২০টি। শুষ্ক মৌসুমের জন্য আমাদের আরো বেশি লোকবল দরকার। ’

মেজর মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, ‘যানবাহনের কোনো ঘাটতি আমাদের নেই। তাছাড়া আমরা পর্যায়ক্রমে ক্রয় করছি আরো যানবাহন। যে কোনো অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার জন্য আমাদের কাছে যে সকল যন্ত্রাংশ আছে, তা ১৬-১৮ তলা বহুতল ভবনের আগুন নেভাতে সক্ষম। ’

‘তিন বছর আগে বা বসুন্ধরা সিটি ও এনটিভি ভবনে যখন আগুন লেগেছিল, তখন এসব ছিল না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব হয়েছে’ বলেও তিনি বাংলানিউজকে বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পানির ট্যাঙ্কিগুলো ১ হাজার ৮০০ থেকে ১১ হাজার লিটার  পর্যন্ত পানি বহন করতে সক্ষম। তবে পানির ট্যাঙ্কিগুলোর ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পানির উৎস আগে দরকার। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজউককে বলেছি, কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করার আগে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ লিটার পানি রির্জাভ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ’

‘আমরা জানি, অনেক সময় বিশেষ করে পুরোনো ঢাকার সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিস’র গাড়ি ঢুকতে পারে না। ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্য মোটরসাইকেলের ব্যবস্থা করেছি, যাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রতিটি সরু গলির ভেতরে প্রবেশ করা যায় এবং পানির উৎসে ৪০ থেকে ৬০ হর্সের পাম্প লাগানো যায়। ’

তিনি জানান, ‘আমরা ইতিমধ্যে ২০টি মোটরসাইকেল কিনেছি। আরো ২০টি কেনা হবে অচিরেই। ’ তিনি বলেন, ঢাকা নগরের বিভিন্ন জায়গায় পানির পয়েন্ট থাকা উচিৎ। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে আমরা জানিয়েছি এবং মন্ত্রনালয় ওয়াসাকে জানাবে বলে আমাদের জানিয়েছে। যাতে করে অগ্নিকাণ্ডের সময় আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারি ও পানির উৎস খুঁজে পেতে হয়রানি না হয়। ’

তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে মানুষ যাতে সচেতন হয়, সে ব্যাপারে আমরা ছুটির দিন জনসচেতনতামূলক কর্মসুচি করে থাকি। ’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে বেসরকারি টেলিভিশন যদি এগিয়ে আসে, তবে আমাদের জন্য আরো ভাল হতো। ’

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স’র পরিচালক মেজর মাহবুব অারো বলেন, ‘আমাদের  ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় যানজটের কারণে। তা না হলে আমরা আরো বেশি সেবা দিতে পারতাম। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।