ঢাকা: পৃথিবীর অনেক দেশেই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা জনসংখ্যার প্রতিদিনের খাদ্যের যোগান মেটাতে গম অন্যতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশ বা দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলো দেশগুলোতে লবণাক্ততা আর অনুর্বরতার মতো সমস্যায় প্রতিবছর কমছে এই শস্যটির উৎপাদন।
এরই অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসআইআরও উদ্ভাবন করেছে অধিক লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন উন্নত প্রজাতির গম। মাঠে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে নয়া প্রজাতির এ গমের সক্ষমতাও প্রমাণিত হয়েছে। নতুন ধরনের এই গমের জাতটি মাটির ২৫ শতাংশ লবণাক্ততা সহ্য করে টিকে থাকতে সক্ষম।
গমের এই প্রজাতির উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করেছে নন-জিএম নামে শস্য উৎপাদন পদ্ধতি। যা গমের পাতা এবং কাণ্ডে লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম প্রবেশে বাধা দেয়। এছাড়া লবণাক্ততা সহ্য ক্ষতাসম্পন্ন গমের এই জিন গাছের কাণ্ড ও পাতার মধ্যে এমন একটি প্রোটিন উৎপন্ন করে যা গাছের জাইলেম (xylem) থেকে সোডিয়াম বের করে দেয়।
এ বিষয়ে জার্নাল নেচার বায়োটেকনোলজি জানিয়েছে, বর্তমানে এই প্রযুক্তিটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আরো কাজ করছেন। তারা এখন আরো বিশদভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন কিভাবে গমের এই নতুন জিন লবণাক্তা সহ্য করে টিকে থাকে।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত সিএসআইআরও বিজ্ঞানী মুনস বলেছেন, এই গবেষণা ইতোমধ্যেই পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য লবণাক্ততা সমস্যায় জর্জরিত ২০ শতাংশ মাটির ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।
এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত আরেক বিজ্ঞানী গিলিহাম বলেন, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা আনুমানিক ৯০০ কোটি ছাড়াবে। তখন পৃথিবীতে খাদ্য চাহিদাও বাড়বে বর্তমানের চেয়ে অনেকগুণ। তাই লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন শস্য উৎপাদন ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি অতি জরুরি বিষয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও বিশেষজ্ঞদের মত: দেশে ধানের পর গম সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য। বর্তমানে দেশে আনুমানিক মোট ৫ দশমিক ৬ লাখ হেক্টর জমিতে ৮ দশমিক ৫ লাখ টন গম উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের জমিগুলোতে লবণাক্ততা ও অনুর্বরতার দরুণ প্রতিবছর সেখানে ধানের পাশাপাশি গমের উৎপাদনও কমছে। যাতে চাপ পড়ছে দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনে।
অপরদিকে, পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমাদের গম উৎপাদন ও গবেষণা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি বলে মত দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এ গবেষণা খুবই আশাব্যঞ্জক খবর আমাদের জন্য। আমারা দেশে ধান গবেষণায় যতদূর অগ্রসর হয়েছি, গম গবেষণায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমাদের দেশে গম উৎপাদনে এ ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগানো গেলে তা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই সহায়ক হবে।
ড. ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলেই কেবল গম চাষ বেশি হয়। মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাতের সাথে গম খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দেশের লবনাক্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে লবন সহিষ্ণু গম চাষ করা গেলে তা অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।
বর্তমানে দেশে গমের চাহিদা মোট ৩০ লাখ টন। এই চাহিদা মেটাতে সরকারকে প্রতিবছর বিদেশ থেকে প্রচুর গম আমদানি করতে হয়। তাই দেশে ধানের পাশাপাশি গমের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে উপকূলের লবণাক্তপ্রবণ এলাকার অনুর্বর জমিতে ফসল উৎপাদনে নতুন জাতের এই গম আবিষ্কার সুখবর বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১২