বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী এ কথা বলেন। সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাসের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে বলেছেন- ভিক্ষা-অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে তারা বেরিয়ে এসেছেন। তারা নাকি নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা নির্মাণ করেছেন। অথচ এবারই বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশি ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা আর অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে।
‘এর প্রভাবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ হ্রাস পেতে পারে এবং সুদ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাওতাবাজি। ’
বিএনপির এ মুখপাত্র আরও বলেন, আজকেই অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাত অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। যা সমস্ত অর্থনীতিকে বড় ধরণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাজেটের ঘাটতি মেটানো বন্যাপ্রবণ নদীর তীরে বালির বাঁধ নির্মাণের শামিল।
‘প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, নিজের পায়ে নাকি বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে। ভয়ংকর আর্থিক নৈরাজ্যের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়ে যারা পার্শ্ববর্তী দেশের মাটিতে পা রেখে চলেন তারা নিজের দেশকে কতটুকু নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে সক্ষম করে তুলেছেন তা দেশবাসী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ’
মূলত লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির এ বাজেট পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। এটিকে গরিব মারার বাজেট এবং তা জনগণের সঙ্গে ধোকাবাজির শামিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমরা কতটা গণতান্ত্রিক যে, নিজ দলের এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে ছাড় দেয়নি। এ প্রসঙ্গে আমাদের আর বলার কিছু নাই। তামাশা দেখতে ভালই লাগে। তবে চক্ষুলজ্জাহীন তামাশা মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘অভিনয়’র অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, এ অভিনয় দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত হতবাক। যেন যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর। গিন্নির যেন কোনো দায় নেই। অর্থমন্ত্রীকে কেষ্টা বানিয়ে বাজেট নাটকটি দক্ষ পরিচালনার অভাবে জনগণের কাছে হাস্যপদ নাটকে পরিণত হয়েছে।
‘অর্থমন্ত্রীকে নিজ দলের এমপিদের কটূবাক্য বর্ষণকে প্রধানমন্ত্রী উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলে এটা একতরফা নির্বাচনে গঠিত ভোটারবিহীন সরকারের পাতানো গণতন্ত্র। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাজেট অনুমতি পাওয়ার সময় যদি ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করতেন তাহলে বোঝা যেত আওয়ামী গণতন্ত্রের ওজন কতটুকু। ’
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত করার বিষয়ে রিজভী আশঙ্কা করেন, এ সিদ্ধান্ত মনে হয় সরকার আবারও যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে।
পাস হওয়া বাজেটকে প্রতিক্রিয়াশীল, গণবিরোধী, উদ্ভটতামাশা ও জনগণের পকেট কাটার বাজেট হিসেবে অভিহিত করে রিজভী এর তীব্র নিন্দা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৭
এইচএ/