ঢাকা: এবারের অমর একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রকাশকরা।
বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘ঐতিহ্য ভাঙ্গার কষ্ট আমাদের আছে তবে বাস্তবতাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না।
প্রকাশকদের মতে, প্রকাশনা হাউজের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে সবার স্থান সঙ্কুলানের মত জায়গা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেই। এখানে সব প্রকাশনীকে একসঙ্গে জায়গা দেয়া সম্ভব না। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা হলে স্থানের সংকট নিরসন হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তাদের মত হল, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু প্রকৃত অর্থে মেলার আওতায় ধরা যাবে না, তাই এগুলোর স্টল বাংলা একাডেমিতে থাকাই ভাল হয়েছে। সঙ্গে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও সংগঠনের প্রকাশনীগুলোর স্টল বাংলা একাডেমিতে করতে দিলে আরো ভাল হত।
সূত্র জানায়, এবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশকদের মনে তেমন শঙ্কা নেই, কারণ নিরাপদে মেলা অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে প্রকাশকদের পক্ষ থেকেও। গত বছরের দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে করা হয়েছে ফায়ার ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাও।
তবে নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘বইমেলার স্থান পরিবর্তন বা পরিবর্ধন নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয় না। এবার দেখা যাক কি হয়। ‘
তিনি বলেন, সব প্রকাশনীকে এক সঙ্গে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হলে খুবই ভাল হবে। কারো মনে কোনো কষ্ট থাকবে না। প্রথমদিকে বইমেলায় সাধারণত একটি স্টলের জন্য জায়গা বরাদ্দ ছিল ৮ ফুট বাই ৮ ফুট। গত বছর তা কমে ৬ ফুটে দাঁড়িয়েছিলো। বইমেলা না সরানো হলে এক সময় হয়তো সে জায়গা আরো কমতো। ’
মেলা উদযাপন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেলাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বর্ণিল সাজে সাজাতে হবে এবং উদ্যানের এককোণে না করে মেলার জায়গাটি হতে হবে আরও বৃহৎ পরিসরে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘গতবার বাংলা একাডেমির মত একটি নিরাপদ জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের বিস্মিত করে। সে তুলনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক থাকবে হবে। ’
বিভাস প্রকাশনীর প্রকাশক রামশঙ্কর দেবনাথ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির মাঝামাঝি ব্যস্ততম রাস্তাটি খোলা থাকায় মেলায় কিছু দর্শক কমে যেতে পারে। অর্থাৎ যারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে আসবেন তাদের অনেকেই রাস্তা পারাপারের ভয়ে বা বাড়তি ঝামেলার কথা চিন্তা করে মেলায় না এসেই বাসায় চলে যাবেন। এই বিষয়টি বিবেচনা করলে ভাল হতো। ’
নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেলার নিরাপত্তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন, দেশের যে কোনো স্থানেই মেলা করা হলে তা নিরাপদে উদযাপিত হবে। ’
অন্য প্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন,‘প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বইমেলা বনসাই না হয়ে এখন ছড়িয়ে যাবে। ’
তিনি বলেন,‘দিন দিন মেলা অনুরাগীদের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রকাশক ও পাঠকের সংখ্যা। এ অবস্থায় বাংলা একাডেমির মত ছোট্ট জায়গায় মেলা না রেখে বড় পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করাই যুক্তিযুক্ত। ’
বাংলাপ্রকাশ-এর প্রকাশক হুমায়ন কবির ঢালি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে বইমেলা করা আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, তবে বাস্তবতাকেও মেনে নিতে হয়। ’
রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান বলেন,‘বাংলা একাডেমিতে মেলা করা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হলেও দিনদিন প্রকাশক, পাঠক, লেখক বাড়ার ফলে বাস্তবতাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। ’
রিয়াজ খান বলেন,‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই কিনে সবাই বাংলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবে এটাও মজার। একখানে বই কেনা আরেকখানে আলোচনা শোনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করলে সবকাজ সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে। তাতে মেলায় অতটা ঝামেলা হবে না। সবাই মেলায় বই কেনার উদ্দেশ্যে যাবেন। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে যাবেন বাংলা একাডেমিতে। ’
গদ্যপদ্যের স্বত্ত্বাধিকারী শাহ আনোয়ার সাদাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকাশনীর তুলনায় বাংলা একাডেমির জায়গা অনেক ছোট হয়ে গেছে। একদিন না একদিন বাংলা একাডেমি থেকে মেলা অন্যখানে স্থানান্তর করতে হতই। তা এ বছর করায় ভালই হয়েছে। ’
তবে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করলে আরো ভাল হত। অনেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে এসে বই কিনত। ‘
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। উদ্যানে হলে সবাই মিলে একসঙ্গে মেলা উদযাপন করা যাবে আর নিরাপত্তারও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিরাতে মেলা প্রাঙ্গণ পাহারা দেয়ার জন্য দশজনের একটি টিম থাকবে। সেইসঙ্গে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো আছেই। ’
গত ২০ জানুয়ারি এক বৈঠক এবারের বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪