ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মিডিয়া ডিসটার্ব করে!

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪
মিডিয়া ডিসটার্ব করে!

ঢাকা: ‘মিডিয়া ডিসটার্ব করে’ মুক্তধারার স্টলে আঙুল উঁচিয়ে বাংলানিউজের সংবাদকর্মীকে এভাবেই কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন নিজেকে সজীব সাহা বলে পরিচয়দানকারী যুবক।

অপরাধ আর কিছুই নয়।

এবারের বইমেলায় মুক্তধারা ক’টি শিশুতোষ বই প্রকাশ করেছে তা জানতে চ‍াওয়াতেই সজীব সাহার এমনধারা অসহিষ্ণু আচরণ।

দুপুরে একবার তার কাছে গিয়েছিলো বাংলানিউজ টিম। কিন্তু সজীব সাহা হাত ঝাপটে বলে দেন: পরে আসেন। তার কথামতো বিকেলে ফের গিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা জিগ্যেস করতেই ক্ষেপে যান সজীব সাহা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ওঠেন, আপনারা মিডিয়ার লোকজন বড় বেশি ডিসটার্ব করেন। আমরা তো আপনাদের ডাকি না। কেন আসেন?

‘কিন্তু মিডিয়াকে তথ্য দেওয়া তো আপনাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে!’-- বিনয়ের সঙ্গে এ কথা বলাতে আরো ক্ষেপে য‍ান সজীব সাহা।

এবার বলেন, আমাদের দায়িত্ব শেখাতে আসবেন না। যতো সব মূর্খ লোক মিডিয়ায় কাজ করে।

তার এমনধারা প্রতিক্রিয়ায় পিছু হটে বাংলানিউজ টিম।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, মুক্তধারা তো ঐহিত্যবাহী প্রকাশনা। দেশে-বিদেশে সুনাম আছে। তার ওপর বইমেলায় এসে বাংলা একাডেমী চত্বরে ঢুকলেই প্রথম স্টলটি মুক্তধারার। কার্যত এখান থেকেই শিশুচত্বর শুরু। এখানে সব মিলিয়ে গোটা চল্লিশেক ছোটদের বইয়ের স্টল। আর কোনো স্টলেই এমন অভব্য-রূঢ় ব্যবহার পায় নি বাংলানিউজ টিম।

ক্ষুব্ধ সজীব অবশ্য এক ফাঁকে জানিয়ে দিযেছেন, এবারের বইমেলায় ছোটদের জন্য নতুন কোনো বইই আনে নি মুক্তধারা। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন করাটাই হয়তো কাল হয়েছে বাংলানিউজ টিমের। এটাই হয়তো তার ক্ষেপে যাওয়ার কারণ।

কিন্তু শিশুচত্বরের সবচেয়ে গুরুত্বপূ্র্ণ স্থান বরাদ্দ পাওয়া স্টলের আচরণ কেন এমন হবে!

তাহলে কি প্রকাশকরা সবাই মিডিয়াকে ডিসটার্ব বলেই মনে করেন? বিষয়টি খোলাসা হতেই ওই ঘটনার পর আরো ক’জন প্রকাশকের মুখোমুখি হয় বাংলানিউজ। তারা কেউই মিডিয়‍াকে ডিসটার্বিং মনে করেন না বলে অভিমত দিয়েছেন। বরং মিডিয়াকে বইমেলায় প্রকাশকদের সহযোগী হিসেবেই অভিহিত করেছেন তারা।  

‌মিডিয়া ডিসটার্ব করে কি না জানতে চাইলে দিনরাত্রি প্রকাশনীর প্রকাশক কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব বলেন, ডিসটার্ব হওয়াট‍া নির্ভর করে প্রশ্নের ওপর। যেমন কেউ যদি কোনো লেখককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার কয়টি বই বেরিয়েছে?’-তাহলে এটি বাণিজ্যিক প্রশ্ন হয়। লেখকও বিব্রত হন। কিন্তু তিনি যদি জিজ্ঞাসা করেন, আপনার লেখার বিষয় কি তাহলে সেটা ভালো প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে মিডিয়া সহায়ক।

‘ছোটদের জন্য কয়টি বই এ মেলায় প্রকাশ করেছেন’- এ প্রশ্ন কোনো প্রকাশনীকে করাটা ডিসটার্বিং নয়’ বলেও অভিমত দেন কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব।

এবারের মেলায় ছোটদের জন্য ২৪টি বই এনেছে ‘ছোটদের বই’ প্রকাশনা সংস্থা। এ সংস্থার প্রকাশক হাশিম মিলন বাংলানিউজকে বলেন, মিডিয়ার বিরক্তিকর হওয়ার প্রশ্নই আসে না। মিডিয়া তো ডিসটার্বিং হতেই পারে না। বরং মিডিয়া অনেকাংশেই আমাদের প্রচারের কাজটি করে দিচ্ছে। কার্যত মিডিয়া ছাড়া বইমেলাই অসম্পূর্ণ থাকে।

এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি বই এনেছে আদিগন্ত প্রকাশনী। এ প্রকাশনীর আরো গোটা সাতেক বই আসবে একুশের আগেই। এ সংস্থার প্রকাশক মোস্তাক রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, মিডিয়া কেন ডিসটার্ব করবে? মিডিয়া তো আমাদের উপকারই করে। আমাদের বইয়ের প্রচার হয় মিডিয়ায়। প্রকাশকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয় মিডিয়ায়। সুতরাং মিডিয়া আমাদের বন্ধু।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।