জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: প্রজাপতি প্রকৃতির অলংকার। প্রজাপতির ওড়াউড়ি ঘোরাঘুরি মন ভোলায় সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষের।
মেলায় শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ভীড় করতে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা প্রজাপতিপ্রেমী, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। শুধু বাংলাদেশের প্রজাপতিপ্রেমীই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রজাপতিপ্রেমীরাও নিজ চোখে জীবন্ত প্রজাপতির সৌন্দর্য দেখার জন্য ভীড় করেন এ মেলায়।
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এ স্লোগান নিয়ে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
মেলা উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির ভাষণে উপাচার্য বলেন, প্রজাপতির বৈচিত্রপূর্ণ রং পরিবেশের বৈচিত্র্যের প্রমাণ মেলে। বাহারি রঙের প্রজাপতি ও উড়বার অসীম ক্ষমতা মানুষকে আনন্দ দেয়। পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। জীব-জগতের পরিবেশ অক্ষুণœ রাখা হবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদার, আইইউসিএন-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজেদা বেগম এবং মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন।
প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহরাব আলীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। মেলায় প্রজাপতি বিষয়ক বই Butterflies of Bangladesh-Inventory Third Phase বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
পরে উপাচার্য ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পাশে বাটারফ্লাই রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজাপতি সংরক্ষণে এ পার্কে থাকবে প্রজাপতির ‘কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র’। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে নির্মিত বাটারফ্লাই হাট উদ্বোধন করেন উপাচার্য।
১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম গবেষণা শুরু করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন। তার দীর্ঘ গবেষণায় শনাক্ত করা ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাপতি সংরক্ষণে জন্যই ‘বাটারফ্লাই রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড পার্ক’ তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি।
দিনব্যাপী এ প্রজাপতি মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতি আর্ট ক্যাম্প, অরিগামি প্রজাপতি, প্রজাপতি আদলের ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির এ অলঙ্কারটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি প্রকৃতির একটি অলংকার। প্রকৃতির এ অলংকারটি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে এ মেলার আয়োজন। বাটারফ্লাই রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড পার্ক নির্মিত হলে সেখানে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাপতিগুলোর প্রজনন ও গবেষণা সম্ভব হবে।
প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এটি রক্ষায় তিনি সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মেলার টাইটেল স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ‘কিউট’ এবং সহযোগিতা করছে আইইউসিএন ও ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪