ঢাকা: প্রায় ২শ বছর পর ফের যুক্তরাজ্যের নদীতে ল্যাম্প্রে মাছের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক সময় ব্রিটিশ রাজ পরিবারের খাবার ছিলো হিংস্র এ মাছটি।
প্রচলিত রয়েছে, ডাইনোসরের আগেই পৃথিবীতে এদের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।
তবে শিল্প দূষণের কারণে ব্রিটেনের বিভিন্ন নদী থেকে এরা বিলুপ্ত হতে শুরু করে।
সাধারণত মানুষ এদের ইল বলে ভুল করে। দীর্ঘ নলাকার দেহের এই মাছ সাধারণত ৫.৯৮ ইঞ্চি থেকে ১১.৮১ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।
পুরুষ ও নারী মাছের মধ্যে পার্থক্য হলো- পুরুষ মাছের পেছনে পাখাগুলো সেতুর মতো আর নারী মাছের ঝুঁটির মতো। এদের মুখের আকৃতি উপ-বৃত্তাকার এবং ১১ থেকে ১২ সারিতে অসংখ্য দাঁত থাকে।
এই দাঁতগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এক ধরনের দাঁতের কাজ হলো অন্য মাছকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখা এবং আরেক ধরনের দাঁতের কাজ হলো রক্ত শুষে খেতে সাহায্য করা। এক্ষেত্রে দুই ধরনের কাজই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পানির নীচে কোনো মাছ ঠিকমতো না ধরা গেলে রক্ত শুষে খাওয়া খুবই কঠিন বিষয়।
এরা সাঁতারেও ভীষণ দক্ষ। এদের শরীরে একটি গ্যাস ভর্তি থলে রয়েছে যা দিয়ে সাঁতার কাটার সময় শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। অন্য প্রাণীর সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠতা খুবই বেশি। কারণ অন্যদের রক্ত শুষে খেয়েই এরা জীবনধারণ করে।
নতুন খবর হলো- সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়ার ২শ বছরের বেশি সময় পরে এরা ফের তাদের এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। যে কারণে স্থানীয়রা একটি বাঁধ তৈরি করেছেন, যেন এরা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
দ্য এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির মৎস্য বিশেষজ্ঞ সায়মন টমস বলেন, ব্রিটেনের পানির গুণগত মান খারাপ হয়ে যাওয়ায় গত ২শ বছর মধ্যযুগীয় এ সুস্বাদু মাছ দেখা যায়নি। বর্তমানে নদীর পানি আগের চেয়ে ভালো হওয়ায় এবং মানুষ সৃষ্ট বাঁধ অনেক জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলায় এ সামুদ্রিক মাছটি ফের দেখা যাচ্ছে।
শিল্প কারখানা থেকে যে বর্জ্য নিঃসরণ হয়, সেগুলো থেকে দূষিত পানি পরিষ্কার করতে ইতোমধ্যে প্রচুর অর্থও বিনিয়োগ করা হয়েছে। মাছ চলাচলে যে বাধাগুলো ছিলো সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ল্যাম্প্রে মাছ মূলত পরাশ্রয়ী। এরা অন্য প্রাণীর রক্ত শুষে খেয়ে জীবন ধারণ করে। যদিও বর্তমানে পুরো ইউরোপ জুড়ে এদের বিপন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্কটল্যান্ডের রাজা মালকম-৩ এর মেয়ে জামাই এডিথের স্বামী ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি-১ ল্যাম্প্রে খুবই পছন্দ করতেন। যদিও ১১৩৫ সালে উত্তর ফ্রান্সের নর্মঁদিতে এ মাছ খেয়েই তার মৃত্যু হয়। প্রচলিত আছে, ল্যাম্প্রে খাওয়ার পরেই তার ‘ফুড পয়জনিং’ হয়েছিলো।
মাছটি রাজ পরিবার ও হেনরির নাতি রাজা জনেরও খুব পছন্দের ছিলো। সে সময় ল্যাম্প্রে মাছসহ ‘ক্রিসমাস পাই’ পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় জন ইংল্যান্ডের গ্রুসেস্টার রাজ্যকে ৪০ মার্ক জরিমানা করেন। যা বর্তমানে বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটি ৯৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮১০ টাকা ৮৫ পয়সা।
১৮৩৬ সালের আগে পর্যন্ত গ্লুসেস্টার বড়দিনে ইংরেজ ও পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজা ক্রিসমাস পাই পাঠাবে, এটাই ঐতিহ্য ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫
এটি/এএ