ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

নোয়াখালী উপকূলে পলিকিটের নতুন প্রজাতি

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
নোয়াখালী উপকূলে পলিকিটের নতুন প্রজাতি

নোয়াখালী: বাংলাদেশের কৃতি সন্তান মৎস্য বিজ্ঞানী এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন সম্প্রতি এনিলিডা পর্বের নতুন একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন।

 ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের বিশিষ্ট পলিকিট বিজ্ঞানী ড. প্যাট হ্যাচিংস বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চল থেকে Nephtys bangladeshi নামে পলিকিটের নতুন এ প্রজাতি আবিষ্কার করেন।



সাধারণত লবণাক্ত জলাশয়ের তলদেশের মাটিতে বসবাসকারী ছোট এই প্রাণি মূলত মাছের খাদ্য।

এছাড়া জলাভূমির প্রতিবেশগত অন্যান্য ভূমিকা রাখে যেমন-বারোয়িং এর মাধ্যমে নদী বা সমুদ্রের তলদেশের নিউট্রিয়েন্সেটস ও অক্সিজেন আদান-প্রদান করে উপকূলীয় জলাশয় ও সমুদ্রের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

এনিলিডা পর্বের অন্তর্গত পলিকিটের দেহে অসংখ্য চুল থাকায় এরা Bristle বা beard worms নামে পরিচিত।

এই প্রাণীর গ্রুপ নিয়ে গত প্রায় দুইশ’ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে গবেষণা হলেও এর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকা থেকে নতুন কোনো প্রজাতি আবিষ্কৃত  হয়নি। তাই এই প্রজাতির নামকরণ বাংলাদেশের নামানুসারে Nephtys bangladeshi করা হয়।

সাদা বর্ণের Cylindrical আকৃতির আবিষ্কৃত পলিকিটের দৈঘ্য ১১-১৯ মিলিমিটার ও প্রস্থ ০.৮-১ মিলিমিটার। প্রাণীটির অন্যতম শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো এর গলবিলে ৯ জোড়া প্রান্তীয় ও ১৪ সারি উপ-প্রান্তীয় প্যাপিলা থাকে। এছাড়া দেহের ৭-২৭ খণ্ডে ব্রাঙ্কিয়া থাকে।

আবিষ্কারক ড. বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পলিকিট জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য ২০১৫ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সিডনিতে (Australian Museum Research Institute, Sydney)  পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসেবে তিনি আমন্ত্রিত হন।

গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কিছু পলিকিট নমূনা শনাক্ত করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, সদ্য আবিষ্কৃত প্রজাতিটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে Nephtys  গণভুক্ত অন্যান্য স্বীকৃত ৯৮টি প্রজাতি থেকে আলাদা।

অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই গণভূক্ত আরো বেশ কিছু নমুনার সঙ্গেও তুলনা করা হয়। চূড়ান্তভাবে নতুন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অত্যাধুনিক Scanning Electron Microscope (SEM) প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়।

পরে ড. প্যাট হ্যাচিংসসহ এই প্রজাতিটির স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক Taxonomic জার্নাল Zootaxa তে পাঠানো হয়।

২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি Ò Nephtys bangladeshi n.sp., a new species of Nephtyidae (Annelida: Phyllodocida) form Bangladesh coastal waters শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

একই দিনে বিশ্ব স্বীকৃত ডাটাবেইজ Zoobank ও  WORMS ( World Register for Marine Species) এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রজাতিটি নতুন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।

ড. বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে আরো বলেন, এই পর্যন্ত পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পলিকিট আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ প্রজাতির তালিকা পাওয়া যায়। আমাদের উপকূলীয়/সামুদ্রিক অঞ্চল অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। অপ্রতুল গবেষণার জন্য আমরা এখনও আমাদের জীববৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করতে পারিনি।

এমনও হতে পারে, জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ও মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি আমাদের আবিষ্কারের আগেই দেশ/পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। এই গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জীববৈচিত্র্য নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার। - যোগ করেন এই বিজ্ঞানী।

এছাড়া নিজের গবেষণা কর্মের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন নোবিপ্রবি তথা সমগ্র বাংলাদেশির জন্য একটি গর্বের নাম। তার অনন্য অবদানেই আজ বিশ্ব বিজ্ঞানে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তাকে বাংলানিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কেন্দুয়া গ্রামের আবদুস সোবহাস ভূঁইয়ার সন্তান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।