আরও একবার আলোর স্বল্পতায় শেষ হয়ে গেল দিনের খেলা। বাংলাদেশের আরও একটি দিন কাটলো আলোর খোঁজে।
মিরপুরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিকরা। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০১ রান করেছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের চেয়ে এখনও ১০১ রানে পিছিয়ে আছে শান্তবাহিনী।
আগের দিন বাংলাদেশকে ১০৬ রানে অলআউট করে দিয়ে ৬ উইকেটে ১৪০ রান করে দিন শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের দুই অপরাজিত ব্যাটার দুর্দান্ত শুরু করেন দ্বিতীয় দিনে। ধীরে ধীরে লিডও বাড়তে থাকে প্রোটিয়াদের। কাইল ভেরেইনের সঙ্গে উইয়ান মুল্ডারের জুটিতে রানও আসতে থাকে।
বোলিংয়ে বাংলাদেশকে ভোগানো মুল্ডার হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্যাট হাতেও। ১৪তম টেস্টে এসে প্রথম ফিফটি পেলেন তিনি, এর আগে তার সর্বোচ্চ ছিল ৪২ রান। এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অবশ্য ১১টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মুল্ডার।
হাফ সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকতেই ফিরতে পারতেন মুল্ডার। কিন্তু নাঈম হাসানের বলে শর্ট লেগে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন মুমিনুল। এরপর ম্যাচ বাংলাদেশের থেকে ক্রমেই দূরে সরে যেতে থাকে। তখনই দলের জন্য ত্রাতা হন হাসান মাহমুদ। দলকে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছিলেন তিনিই। পরের পাঁচটি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে যখন ম্যাচ দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন টানা দুই বলে দুই উইকেট এনে দিয়েছেন তিনি। শুরুটা করেন মুল্ডারকে দিয়ে।
১১২ বলে ৫৪ রান করে তিনি ক্যাচ দেন স্লিপে। পরের বলেই কেশভ মহারাজকে বোল্ড করে দেন হাসান। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও সেটি অবশ্য পূরণ হয়নি। প্রথম সেশনের শেষটা আরও রঙিন করতে পারতেন তিনিই।
কিন্তু পারেননি রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে। হাসান মাহমুদের ফুল টসে সোজা খেলেন পিট। বোলারের হাত ছুঁয়ে স্টাম্পেই লাগে বল, তখন নন স্ট্রাইকার ক্রিজের ভেতরই আছেন। কিন্তু হুট করে স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে ব্যাটার দৌড় শুরু করেন।
শুরুতে হাসান মাহমুদ বুঝতে না পারলেও পরে বলের দিকে দৌড়ে যান। কিন্তু তিনি যতক্ষণে থ্রো করেন, ততক্ষণে ব্যাটার অনেক দূর পৌঁছে গেছেন; হাসানের থ্রোও ব্যাটারের গায়ে লাগে। ভেরেইনে ও পিট দুজন অপরাজিত থেকে যান মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে।
ফেরার পরই জুটির পঞ্চাশ পূরণ করেন তারাও। প্রথম ছয় উইকেটে পঞ্চাশ রানের একটি জুটিও পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা, এরপর পায় টানা দুটি। ১৩০ বল স্থায়ী এই জুটিতে আসে ৬৬ রান। এটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৮৭ বলে ৩২ রান করেন তিনি।
তার বিদায়ের আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন ভেরাইনে। দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য তিনি পান করতালিও। শেষ ব্যাটার হিসেবে অবশ্য তাকেই ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। ১৪৪ বলের ইনিংসে ৮টি চার ও দুটি ছক্কায় ১১৪ রান করেন ভেরাইনে।
বহু কষ্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলআউট করার পর ব্যাটিংয়ে নেমেও সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে ৪ রান তোলার পর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ দেন সাদমান ইসলাম। রাবাদার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭ বলে ১ রান করেন তিনি।
দুই বল পরই মুমিনুলও স্লিপে ক্যাচ দিলে বেশ বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। চা বিরতির আগের বাকি থাকা সময়টুকু পাড় করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু বিরতি থেকে ফেরার পরই অধিনায়ক শান্ত সাজঘরে ফেরত যান।
তার সঙ্গে ৯৮ বলে জয়ের ৫৫ রানের জুটি ভাঙে কেশভ মহারাজের বলে। ডিফেন্ড করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন শান্ত, এর আগে করেন ৪৯ বলে ২৩ রান। তার বিদায়ের পর ইনিংস হারের শঙ্কা আরও জোরালো হয়। তাতে আপাতত স্বস্তি এনে দিয়েছে মাহমুদুল-মুশফিক জুটি।
দ্বিতীয় দিনশেষে অপরাজিত এই জুটিতে এসেছে ৫০ বলে ৪২ রান। এর মধ্যেই একটি মাইলফলকও ছুঁয়েছেন মুশফিক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ছয় হাজার রান করেছেন তিনি। ২৬ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত মুশফিক, ৮০ বলে ৩৮ রান করেছেন মাহমুদুল। দিনের খেলা আলোর স্বল্পতায় শেষ হয়েছে প্রায় আধঘণ্টা আগে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৪
এমএইচবি/এমএইচএম