আলোতে ভয়— এমনও কি কেউ হয়? সম্ভবত না। অন্ধকারে কোথাও থমকে যাননি ভয়ে, এমন কেউ কি আছেন? উত্তরটা হয়তো একই।
অন্ধকার মানে তো বিপদও। পথ হারিয়ে ফেলার পর চেনা জায়গাও মনে হয় তেমন। অন্ধকার কেউ কি চান? হয়তো হ্যাঁ অথবা না। বিষণ্নতায় কুঁকড়ে যাওয়ার শখই বা কার! মেহেদী হাসান মিরাজও হয়তো চান না, কিন্তু তার ‘প্রিয়’ এমন পথ হারিয়ে ফেলা অথবা অন্ধকার সময়। সুযোগ খুঁজে পাওয়ার মঞ্চ।
ইতিহাস গড়ে ফেলা সিরিজের পর টানা তিন হারে দল অবধারিতভাবেই বিধ্বস্ত; সংবাদ সম্মেলনে হাজির মেহেদী। ভালো পারফরম্যান্স করেছেন অবশ্যই। কিন্তু তিনিও জানেন, প্রশ্ন বাধ মানবে না তেমন। কে জানে তিনি কয়েকদিন আগে ৪৬ রানে অলআউট হওয়ার পর মিরাজ রোহিত শর্মার ‘চালাও তালওয়ার’ কথাটা শুনেছিলেন কি না।
তা নিয়ে তার এমনিতে খুব বেশি আগ্রহ থাকার কথা নয়। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেহেদী ছবি তুলে রাখলেন একটা, সাংবাদিকদের। একটু আগে মাঠে যে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, তার চেয়ে কঠিন কিছু যে হবে না তিনি হয়তো জানতেন।
তাকে এক পর্যায়ে প্রশ্নটা করতেই হলো, আপনার কি কঠিন (আদতে অচেনা বা অন্ধকার) পথ বেশি পছন্দ? এমন দৃশ্য তো প্রায়ই দেখা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে- কেউ পারছে না, আপনি পারছেন। অন্ধকার গলি থেকে টেনে আনছেন আলোর ভেতর।
রহস্যটা কী? মিরাজ বলেন উত্তরে, ‘আমি সবসময় কঠিন পরিস্থিতি উপভোগ করার চেষ্টা করি। খুব বেশি কিছু চিন্তা করি না। চিন্তা করি এটা আমার জন্য একটা সুযোগ, যদি ভালো খেলি, তাহলে নায়ক হওয়ার সুযোগ থাকবে। ’
মিরপুর টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজকে ‘মাইনাস’ করে দিলে, ব্যাটিংয়ে থাকে না তেমন কিছু। ইনিংস হারের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না তখন। প্রথম ইনিংসে দল অলআউট হয়ে গিয়েছিল ১০৬ রানে। ২০২ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১১৬ রানে নেই ছয় উইকেট।
এরপর? আঁধার। আকাশের মতো বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ ভাগ্যেও। সঙ্গে ইনিংস হারের শঙ্কা। আঁধার যখন গাড়ো হয়, মিরাজ তো নায়ক হওয়ার সুযোগ খুঁজে বেড়ান তখন। এবার? তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন আরও একবার, ‘খুব বেশি কিছু চিন্তা’ না করেই হয়তো।
আর কী করলেন? কখনো জাকেরের সঙ্গী হলেন। কখনো আম্পায়ারের কাছে গিয়ে পরামর্শ করলেন, এত আঁধারে কাগিসো রাবাদার মুখোমুখি হওয়া তার জন্য স্বস্তির হবে না জানালেন হয়তো। রাত পেরিয়ে আবার ভোর হলো। শুরু হলো লড়াই অথবা নায়ক হওয়ার চেষ্টা।
তিনি দেখলেন, তার আরেক পাশের ব্যাটাররা চলে যাচ্ছেন একের পর এক। মিরাজ মারমুখো হলেন। সেঞ্চুরি তুলে নিতে? হাসতে হাসতে মিরাজ বলেন, ‘আরে ভাই, একশ না, আমি তো দেড়শ করার আশায় খেলতেছিলাম...’
মিরাজ পারেননি। বাংলাদেশও না। নাঈম হাসান আউট হওয়ার পর মিরাজ হেলমেট খুলে তাকান আকাশে। হয়তো তাকে আরও আঁধার ঘিরে ধরে। সবাই যখন আঁধার দেখে; মিরাজ হয়তো আরও বড় সুযোগ দেখেন তার সামনে, নায়ক হওয়ার। আজ পারেননি, কিন্তু মিরাজই পারেন বারবার।
এ বছর অথবা এই পুরো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তার চেয়ে বেশি উইকেট নেই কোনো বোলারের, রানও বেশি করেননি কোনো ব্যাটার। সেঞ্চুরি ছাড়াই তার রান ৪৬১, এ বছর উইকেট ২৬। প্রায় প্রতিবারই আঁধার অথবা অচেনা পথে মিরাজ থাকেন অগ্রভাগে।
মাঝেমধ্যে কাগিসো রাবাদার ‘অড বাউন্সার’ গায়ে লাগে। মিরাজ ওই ব্যথা বয়েই ম্যাচশেষ করেন। সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে এও বলেন, ‘হাতে বল লাগছে তো, খুব ব্যথা। ’ আবার তিনি দায়টাও নেন নিজের কাঁধে, ‘আমি যদি বোলিংটা আরেকটু ভালো করতে পারতাম...’
মিরাজ জানেন কি না কে জানে, যারা আঁধারে ‘ভয়’ না পেয়ে নায়ক হওয়ার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়; আলো এসে তাদেরই কুর্ণিশ করে...।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
এমএইচবি