চাকরি নেই— বাংলাদেশের কোচদের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত শব্দ দুটি। কারণে-অকারণে, কখনও কখনও আবার ‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে’ তাদের চাকরি চলে যায়।
এখন, বাংলাদেশ যখন ভালো করছে না তখনও; পুরোনো কোচের ধাঁধা নতুন করে সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে আগে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ফিল সিমন্সকে। এক ক্রিকেটারকে ‘শারীরিক হেনস্থার’ অভিযোগে বরখাস্ত হন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, তার জায়গায় আনা হয় তাকে।
বাংলাদেশে আসার পথে এই ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে দুবাইয়ে দেখা হয় অ্যাশওয়েল প্রিন্সের। একরকম চমকেই যান এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে থাকা প্রিন্স। পরে জানতে পারেন, এই সিরিজের আগেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সিমন্সকে। অ্যাশওয়েল নিজেও একসময় বাংলাদেশের কোচ ছিলেন, তার ছেড়ে যাওয়াটাও সুখকর হয়নি।
এই যে বাংলাদেশ বারবার কোচ বদলে ফেলে, যখন যিনি বদলে যান; তার আসলে অনুভূতি কেমন হয়? বাংলাদেশের চাকরি ছাড়া বা না থাকা কোচদের তো সহজে পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রিন্স এবার এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ হয়ে।
তার কাছে প্রশ্নটা করার সুযোগ খোঁজার শুরু ওই ভাবনা থেকেই। নানা নিরাপত্তার কড়াকড়িতে এই সিরিজে কাছে ঘেঁষা কঠিন অতিথি দলের। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার মিডিয়া ম্যানেজারকে দিন কয়েক বুঝিয়ে রাজি করানো গেল। সিরিজ শেষের পুরস্কার বিতরণীর পর সময় দিলেন প্রিন্স।
ভদ্রলোকের সঙ্গে সৌহার্দ্যও হলো বেশ ভালোভাবে। সিরিজ জিতে মন তরতাজা। তার তো এখনই মুখ খোলার সময়। কিন্তু ‘ভদ্রলোকের’ সঙ্গে তারা তো ‘পেশাদার’ও। সব বিষয়ে মন খুলে কথা বলতে রাজি, কেবল বলবেন না বাংলাদেশ নিয়ে।
পারফরম্যান্স নিয়ে বলবেন না জানালেন শুরুতে। এরপর এদিক-ওদিক করে আবার প্রসঙ্গে ফেরার চেষ্টা, পারফরম্যান্স নিয়ে না বলুন- কিন্তু পৃথিবীর যেকোনো দলই যদি নিয়মিত এমন কোচ বদলে ফেলে, এর প্রভাব কি দলের ওপর পড়ে না?
কোচ হিসেবে প্রশ্নের উত্তরটা চাইলে দিতেই পারতেন। কিন্তু প্রিন্স এখানেও ‘বাংলাদেশ’কে খুঁজে পেলেন। তার জন্য অবশ্য বোঝা মুশকিল নয়, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর খুব বেশি দল এভাবে ‘কারণে-অকারণে’ কোচ বদলে ফেলে না।
প্রিন্স তার নিজের চাকরি ছাড়ার ঘটনা মনে করে অভিমানও জমা করে রেখেছেন কি না কে জানে। তার সঙ্গে ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অবধি চুক্তি ছিল। কিন্তু এর আগেই জেমি সিডন্সকে নিয়ে আসা হয় ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে।
তাহলে প্রিন্সের কী হবে? দলে কি একসঙ্গে দুই ব্যাটিং কোচ কাজ করবেন? অগত্যা নিজেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন প্রিন্স। এখন তাই যতবারই বাংলাদেশের প্রশ্ন আসে- তখনই প্রিন্স বলেন, ‘বহুদিন হলো ছেড়ে চলে এসেছি...’
তা এসেছেন। প্রিন্সের জীবন বা সময়ও এখন বেশ ভালোই কাটার কথা। নিজের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করছেন। ‘পুরোনো ঠিকানা’ বাংলাদেশে এসে দুটি টেস্টেই জিতেছেন দাপট দেখিয়ে।
তার যেখানে কাজ- ব্যাটিংয়েও দারুণ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চট্টগ্রাম টেস্টেই ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিন ব্যাটার। বাংলাদেশের ব্যাটাররা ওই একই জায়গায় পর্যুদস্ত হয়েছেন।
তাদের নিয়ে না বললেও নিজের দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাসই দেখালেন প্রিন্স, ‘আমার দলের ব্যাটারদের নিয়ে খুবই খুশি। তিনজন খেলোয়াড় তাদের প্রথম সেঞ্চুরি করেছে। তারা নতুন ও অনভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ’
‘একই সঙ্গে, তারা অনেক ম্যাচিউরিটিও দেখিয়েছে মাঠের ক্রিকেটে। তারা হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনভিজ্ঞ। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটে তাদের ভালোই অভিজ্ঞতা আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাতে দেখাটা রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার। ’
এই সিরিজের আগে উপমহাদেশে ১০ বছর ধরে কোনো জয়ই ছিল না প্রোটিয়াদের। এখন তাদের আছে সিরিজ জয়ের স্বাদ। দক্ষিণ আফ্রিকা কি টেস্টে একটা নতুন যুগের শুরু পেয়ে গেল?
প্রিন্স আনন্দ নিয়েই বলেন, ‘এই দলটা তরুণ। কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার নেতৃত্ব দিচ্ছে এখানে। কিছু বেশ অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও আছে দলে, রাবাদা, মার্করাম, মহারাজ; তারা খুব ভালো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ও তরুণদের পথ দেখিয়েছে। ’
প্রিন্স উচ্ছ্বাস জানান মার্করামের অধিনায়কত্ব নিয়ে। আনন্দ নিয়ে কথা বলেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নিয়েও। শুধু তিনি বলেন না, ছেড়ে যাওয়া জায়গার ব্যাপারে। এটা কি ‘বাংলাদেশ বিমুখতা’ নাকি ভবিষ্যতে ফেরার পথ খোলা রাখা- এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতেই তোলা থাকলো।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এমএইচবি/এমএইচএম