অকল্যান্ড থেকে: পর পর দুটো ম্যাচে যারা চারশ’ রানের বেশি করলো, তাদের আটকাবেন কীভাবে? একটু ম্যাড়মেড়ে প্রশ্ন মনে হতে পারে! কিন্তু উত্তরটা এলো যথেষ্ট স্মার্টলি! দেখে-শুনে যতোটা স্মার্ট মনে না হবে পাকিস্তান অধিনায়ককে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে উত্তর দিলেন মিসবাহ উল-হক।
ইডেন পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকানোর রাস্তা আমাদের সামনে একটাই খোলা আছে।
পরিসংখ্যান বলছে টপ অর্ডার নড়বড়ে। মিডল অর্ডারে মিসবাহ, আকমল, আফ্রিদি এখনো একসঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেননি। আর অভিজ্ঞ ইউনিস খান টেস্টে যতো কার্যকরী হোক না কেন; ওয়ানডে ক্রিকেটে কেন যেন নিজের সেরা সময়কে পেছনে ফেলে এসেছেন বলে মনে হচ্ছে! তাছাড়া টপ অর্ডারে যারা খেলছেন তাদের স্ট্রাইক রেট তুলনামূলকভাবে খারাপ। আধুনিক ক্রিকেটে যথেষ্ট খারাপ মনে হবে। সত্তরের ঘরে যদি ঘুরপাক খায় স্ট্রাইক রেট তাহলে বিশ্বকাপে ওই ব্যাটসম্যানরা পাকিস্তানকে খুব বেশি দূর টেনে নিতে পারবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়কের কথা, ‘আমার হাতে যা অপশন আছে তাই নিয়ে লড়তে হবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াইটা একটু বেশি কঠিন হবে সেটা জানি। ’ সেই কঠিন লড়াই জিততে হলে দলের বোলারদের বড় ভূমিকা রাখতে হবে এমনটা মনে করনে পাকিস্তান অধিনায়ক।
কিন্তু সেই বোলারদের বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনের সামনে। আগের দুটো ম্যাচে চারশ’র বেশি রান করেছেন তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪০৮ করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪১১! আর এরকম একটা ব্যাটিং লাইনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স। এরই মধ্যে বড় একটা সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানও বলা হচ্ছে তাকে। প্রায় অপ্রতিরোধ্য তিনি। সেটা পাকিস্তানের অধিনায়কেরও জানা।
তাই সোজা সাপটা বলে ফেললেন, ‘এবি-কে আউট না করতে পারলে বিপদ। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। আমাদের কাজ হবে দ্রুত ওকে ফিরিয়ে দেয়া। ’
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি কিছু ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে পাকিস্তানের। বলা যায় সাউথ আফ্রিকানরা যথেষ্ট চেনা প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের কাছে। কিন্তু ইডেন পার্কের যা কন্ডিশন তাতে চেনা প্রতিপক্ষও অচেনা হতে খুব বেশি সময় নাও নিতে পারে। ছোট বাউন্ডারি। আমলা-ডুমিনি- ডুপ্লেসিস- এবি ডি ভিলিয়ার্স প্রত্যেকেই দারুণ ফর্মে রয়েছেন। আর এই মাঠে বল বাউন্ডারি লাইনের ওপারে পাঠাতে পছন্দ করবেন সবাই।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে গত সপ্তাহে এই মাঠে খুব লো স্কোরিং একটা ম্যাচ হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। বোলারদের দাটপ দেখা গেছে সে ম্যাচে। শনিবারের সেরকম একটা ম্যাচের ‘অ্যাকশান রিপে’ø হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বৃষ্টির কারণে ইডেন পার্কের মাঝখানের বাইশগজ ঢাকাই ছিল। একবার অবশ্য কাভার তোলা হলো। প্রেসবক্স থেকে দেখে মনে হলো; এই উইকেট যথেষ্ট প্রাণবন্ত। এখানে বোলারদের আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুঁচতে পারে।
কিন্তু অকল্যান্ডের আবহাওয়ার যা পূর্বাভাস তাতে আক্ষেপ বেড়ে যেতে পারে দুটো দলেরই। শনিবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ম্যাচটার দৈর্ঘ্য কমে যেতে পারে। বৃষ্টিতে ভেসেও যেতে পারে। যা দু’দলের কেউ-ই চাইছেন না। বৃষ্টিবিঘিœত কিংবা বৃষ্টিস্নাত ম্যাচ নয়। সবাই চাইচ্ছেন একটা পূর্ণ ম্যাচ। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চূড়ান্ত রূপ দেখা যেতে পারে।
টসও বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে এই ম্যাচে। কিন্তু টস জিতলে কি করবেন? তার উত্তর দু’দিক থেকেই প্রায় একই রকম এলো। ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ’ একটু গদবাঁধা উত্তর মনে হচ্ছে না কি! কিন্তু ইডেন পার্ক বেশির ভাগ সময়ই অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে নাটকীয়ভাবে। সেই সব নাটকীয়তার একটা দৃশ্যের কথা ভালোভাবেই মনে আছে পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনিসের। ১৯৯৪ এর ১৩ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডে মাচে ১৬১ রানের পুঁজি নিয়েও পাকিস্তান ম্যাচটা টাই করেছিল! দুর্দান্ত বল করেছিলেন ওয়াকার। ৯ দশমিক ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই ফাস্ট বোলার। নিউজিল্যান্ড শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছিল মাত্র ১৯ রানে! ৭ বলে ১ রান করে ওয়াকারের বলে এলবি ডাব্লিউ হয়েছিলেন যিনি তাকেও দেখলাম ইডেন পার্কে ব্যস্ত সময় কাটাতে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের কর্মকর্তা এখন গেভিন লার্সেন। আছেন আইসিসি’র টেকনিক্যাল কমিটিতেও। তিনিও বললেন, অনেক নাটক আর রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের জন্ম দিতে পারে ইডেন। ’ কিন্তু সেই নাটকে বৃষ্টি যেন কোনো ভূমিকা না রাখে সেটাই চাইছেন সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে