ঢাকা: ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক মাঠে আবারো রাজত্ব করতে এসেছেন জগমোহন ডালমিয়া। বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) মাঠ থেকে ছিটকে পড়লেন আইপিএল বিতর্কে জর্জরিত নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।
জগু’দার এই প্রত্যাবর্তনে বেশ খুশি বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরাও। কারণ কলকাতায় জন্ম নেয়া পঞ্চাশোর্ধ এই প্রশাসক বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। আর তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্বকাপে তুলে দেওয়া বিগম্যান আকরাম খানের আশা, জগু’দার আগমন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বড় সহযোগিতা করবে। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যালেন্ডার দীর্ঘ হবে।
ভারতীয় ক্রিকেটে ‘ম্যাকিয়াভেলি’ বলে খ্যাত জগমোহন ডালমিয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান শনিবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে তিনি আমাদের অনেক সাহায্য করেছিলেন। ভারতের অনেক জায়গায় খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। উনার আবার বিসিসিআই’তে আসা আমাদের জন্যে অনেক ভাল সুযোগ তৈরি করবে। ’
আকরাম খান বলেন, ‘আমি শিওর উনার থেকে অনেক ভাল ভাল সুযোগ পাওয়া যাবে। ব্যক্তিগতভাবেও অনেক খুশি আমি। ’
১৯৯৮ সালের ২৫ মে। এরপর আর ভারতের কোনো গ্রাউন্ডে খেলা হয়নি বাংলাদেশ দলের। সে অনেক দিন আগের কথা। ডালমিয়া এ কারণেই বাংলাদেশের বন্ধু, কারণ সে সময়টায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিন বছর আইসিসির মসনদে ছিলেন ডালমিয়া। ৯৭ সালে স্কটল্যান্ডকে কুয়ালালামপুরের মাটিতে কবর দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন এবং ৯৯ সালের বিশ্বকাপে অসামান্য পারফরম্যান্স।
এরপরই আইসিসির কাছে বাংলাদেশ আবেদন জানাল, টেস্ট স্ট্যাটাস প্রদানের। আইসিসির মাথায় তো ডালমিয়া ছিলেনই। সহযোগী দেশগুলোকে নিজেও অনুরোধ জানালেন, বাংলাদেশের পক্ষে। ভারতে সুযোগ করে দিলেন খেলার। ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসি টেস্ট স্ট্যাটাস দিলো বাংলাদেশকে। দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।
টেস্ট স্ট্যাটাসতো পাওয়া হলো। কিন্তু নবীন এই দলের সঙ্গে খেলবে কে? যেখানে নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলংকা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার কয়েক বছরে তাদের ধরা দেয়নি অন্য টেস্টখেলুড়ে দেশগুলো!
ডালমিয়াতো আছেনই...। পাঁচ মাস না গড়াতেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টেস্টের বল গড়ালো মাঠে। ১৩ নভেম্বর আমিনুল আর দুর্জয়রা খেললেন ভারতের বিরুদ্ধে। হতাশ করেননি বিশ্ব ক্রিকেটকে। ক্রিকেটে প্রবীণ ভারতকে ভালোই জবাব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
তাই তো ডালমিয়ার কাছে অনেক প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেটের। জাতীয় দলের এক সময়কার পিঞ্চ হিটার আকরাম খান বলেন, ‘উনি যেহেতু বাঙালি, আশা করছি আমাদের দিকটা দেখবেন। ক্রিকেটে আমাদের ক্যালেন্ডার আরো বেশি পাবো। ’
২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক (বিসিসিআই) আসনে ছিলেন এই বাঙালিবাবু। এই সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে ৭ বার মোকাবেলা করার সুযোগ পায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
২০০৪ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শারদ পাওয়ারের কারসাজিতে বিসিসিআই থেকে সরে যেতে হয় ডালমিয়াকে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে। ক্রিকেটের বটতলার ছায়া হারায় বাংলাদেশ। তবে পরবর্তী সময়ে বিসিসিআই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ব্যর্থ হন ডালমিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে।
তাই তো জগমোহন ডালমিয়া গেলো ২ মার্চ ফিরলেন একরাশ জয়ধ্বনি ও উৎসবের মধ্যে। একই সঙ্গে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গলেরও সভাপতি যে তিনি! দমদমে বিমানবন্দর থেকে তিনি বেরোতেই সিএবি-র আধা, মেজো, ছোট কর্তারা মালা ও ফুল নিয়ে ‘লং লিভ ডালমিয়া, জগুদা জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে বরণ করে নেন তাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যেও আশির্বাদ হয়ে আসুক জগুদার এ প্রত্যাবর্তন।
বাংলাদেশ সময় ১০৫০ ঘন্টা, মার্চ ১০, ২০১৫