ঢাকা: বিশ্বকাপ জ্বরে বিশ্ব কাঁপে। এটা নতুন কিছু নয়।
প্রায় দেড় মাসব্যাপী শিরোপার জয়ের লড়াই শেষে পর্দা নামলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০১৫’র। এ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো ক্রিকেটার স্মৃতির পাতায় উঠে গেলেন চিরতরে।
প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিজ গেইলের ডাবল সেঞ্চুরির দানবীয় ইনিংস স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্রিকেট ইতিহাসে। কিউই ব্যাটসম্যান গাপটিলের ২৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ভক্তদের কাছে ক্রিকেট মহাকাব্যই হিসেবেই রয়ে যাবে। টানা চার ম্যাচে লঙ্কান ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারার শতরান করার বিশ্বরেকর্ড কোনদিনই ভুলবার নয়।
২২উইকেট শিকার করে স্পিডস্টার ট্রেন্ট বোল্ট উঠে এসেছেন কিউইদের রেকর্ডের শীর্ষে। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কও ২২ উইকেট দলকে এনে দিয়েছেন পঞ্চম শিরোপা। ভারতীয় বোলার উমেশ যাদবের ১৮ উইকেট শিকারও সম্মানের সাথেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের নবম হ্যাটট্রিক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পার্টটাইম স্পিনার জে পি ডুমিনি। ইংলিশ পেসার স্টিভেন ফিনের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম এবং বিশ্বকাপের অষ্টম হ্যাট্রিকটিও রেকর্ড হয়ে থাকবে ইতিহাসের খেরোখাতায়।
কোয়ার্টার ফাইনালে যাবার লড়াইয়ে ম্যাচ নির্ধারণী ইনিংসের শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রুবেলের ঐতিহাসিক দুই উইকেট শিকার শুধু বাঙালি ও বাংলাদেশিদের কাছে নয়, বিশ্বক্রিকেট ভক্তদের কাছে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শতরান এবং পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের কাছে আদর্শ হয়েই থাকবে।
১১তম বিশ্বকাপের মধ্যদিয়ে অডিআই ক্রিকেটাঙ্গন থেকে জীবন্ত মহীরূহ মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সঙ্গাকারা, শহীদ আফ্রিদি এবং মাইকেল ক্লার্কের বিদায় ভক্তদের কাঁদিয়েছে।
ক্যারিয়ারের ১৬৩ ম্যাচ খেলে শতরানের স্বাদ না পেয়ে বিদায় বেলায় হয়তো নীরবেই কেঁদেছেন ৪০ বছর বয়সী পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক।
যে কোনো বিদায়ই বেদনার। আর সেই বিদায় যদি খোদ আইসিসি’র ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হতে হয়। তবে সেটা আরও বেশি বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। ৯০ রানে ব্যাটিংরত রোহিত শর্মার ক্লিয়ার ক্যাচ আউট না দেওয়া, সীমানা স্পর্শ করে ক্যাচ ধরা সত্ত্বেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে একরকম জোড় করে প্যাভিলিয়নে পাঠানো এবং একটি এলবিডব্লিউ আউট না দেওয়া সেই বেদনারই বিমূর্ত প্রতীক।
বহুল আশা জাগানিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ার আলিম দার এবং ইয়ান গৌল্ডের জোচ্চুরি এবং ছলচাতুরির আম্পায়ারিং ক্রিকেটকে করেছে কলঙ্কিত। আইসিসি’র সেই জঘন্য কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়।
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারিয়ে পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্য দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর এবং বাঙালি জাতির হৃদয় ভাঙা বিশ্বকাপের সমাপ্তি হলো।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫