ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

জলিমন্ট স্ট্রিটে বিশ্বকাপ ঢুকলো পাঁচ বার অথচ...! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫
জলিমন্ট স্ট্রিটে বিশ্বকাপ ঢুকলো পাঁচ বার অথচ...! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে

কেন অস্ট্রেলিয়া পারলো অন্যরা পারলো না? এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে একটাই। অস্ট্রেলিয়ানার ক্রিকেটটা খেলে স্কিল আর ফিটনেসের উপর বিশ্বাস রেখে।

অন্যরা অনেক বেশি আবেগনির্ভর। যে দলটাকে ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতলো, সেই নিউজিল্যান্ডের মানুষের মাঝেও আবেগের যে উথাল-পাতাল ঢেউ ছিল তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি অজিদের মধ্যে।

হ্যাঁ, গানটা হয়তো গেয়েছিল,  ‘অজি অজি.. ও.ওহো!’ মাইকেল ক্লার্ক যখন তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ইনিংসে খেলে প্যাভিলিয়নমুখি হলেন, হল্‌দে গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানালো। বিশ্বকাপ জেতার পর অভিনন্দন জানালো। কিন্তু সব জায়গায়ই আবেগের মাত্রাটা একেবারে পরিমিত। কাপ জেতার রাতে অস্ট্রেলিয়ানরা খুব দ্রুত ঘরে ফিরে গেলেন মনে হলো। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-শ্রীলংকা –ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলে গোটা দেশ হয়তো রাত জেগে জয়োল্লাসে মেতে উঠতো! এখানেই ব্যতিক্রমী মনে হলো অস্ট্রেলিয়ানদের।

ব্যতিক্রমী চিত্র আরো বেশি দেখা গেলো সোমবার দুপুরে যখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সদর দপ্তরে ঢুঁ মারতে গেলাম। এমসিজি থেকে কয়েকশ গজ ধরে জলিমন্ট স্ট্রিটে যে বিল্ডিংটায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিস, সেখানে ঢুকে অবাকই হতে হলো! ওখানকার পরিবেশ দেখে কে বলবেন, এই অফিসে এই নিয়ে পাঁচবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি ঢুকলো! একশ ষাটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সদর দপ্তরে। বিশ্বকাপ জয়ের পর দিন। কাপ জয়ের চব্বিশ ঘন্টাও পার হয়নি। অথচ সেই অফিসে পিন পড়ার শব্দও শোনা যাবে! যে যার কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ, কাজ আর কাজ। ঘড়ির কাঁটা মেপে কাজ। বিশ্বকাপ জিতেছে মাইকেল ক্লার্কের দল। তাতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার লোকজন উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু দেখছেন না! তাঁর দেখাতে চান নিজেদের স্কিল। নিজেদের কমিটমেন্ট। নিজেদের প্রফেশনালিজম। আর এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই। অফিসটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মাঝারি মানের এক কর্তা জোনাথন যখন বিদায় জানালেন, তখন শুধু একটা উপলব্ধি-ই হলো; ক্রিকেটে সাফল্যের জন্য দরকার সিস্টেম। আর সেখানে রাজনীতি, আবেগ এসবের কোনো জায়গা থাকতে পারে না।

মেলবোর্ন পার্কের মধ্যে দিয়ে এমসিজিমুখি হয়ে নিজের মনেই প্রশ্ন জাগলো এবং চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা কল্পচিত্র। নিজেকে প্রশ্ন করলাম,  ঢাকায় যদি বিশ্বকাপের ফাইনাল হতো, আর সেই ফাইনালটায় যদি বাংলাদেশ জিততো? মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশ কিংবা টিএসসি---রমনা-শাহবাগ এলাকাটার চেহারাটা কি হতো? নিজের মনই বলে দিলো:  ‘অকল্পনীয় এক দৃশ্য হতো। ’ বুড়িগঙ্গার পাড়ে আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়তো। আর সে ঢেউ ছড়িয়ে পড়তো সারাদেশে। অথচ এই অস্ট্রেলিয়ায়! কে বলবে মাত্র ঘন্টাকয় আগে তাঁরা বিশ্বকাপটা জিতেছে! শুধু সকালে ফেডারেশন স্কোয়ারে ট্রফিসহ ক্লার্কদের শোভাযাত্রা! কিছুটা উল্লাস। তার শব্দ ইয়ারা নদীপাড় পেরিয়ে জলিমন্ট স্ট্রিটে পৌঁছায়নি।

মেলবোর্ন পার্ক থেকে চোখ রাখলে এমসিজির সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। ডেনিস লিলি’র মূর্তি। তিন নম্বর গেটের দিকে পা বাড়ালে শেন ওয়ার্নের মূর্তি। সবই ঠিক আছে। নেই শুধু আপাত কোনো  চিহ্ন বা আলামত যা দেখে বোঝা যাবে কাল রাতে এখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল হয়েছে। যে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে! বিশ্বকাপ ফাইনালের পরদিনের এমসিজি-তে ঢুকে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো! বিশ্বকাপের জন্য যেসব স্যুভেনির তৈরি করেছিল আইসিসি, এমসিজির স্যুভেনির শপ থেকে তার সবই সরিয়ে ফেলা হয়েছে! আর মাঠের ভেতর ঢুকে বুকটাই হু-হু করে উঠলো! কাল যে গ্যালারি ছিল হলদে রঙে ছযলাপ, আজ সেটা জনমানবহীন, ধুধু! আর চোখ যখন গেল মাঝখানের সেই আয়তক্ষেত্রটার দিকে, তখন তো রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো অবস্থা!

এতো দেখি রীতিমতো একটা পুকুর খোঁড়া হয়েছে! ফাইনাল শেষে রাতে এমসিজি ছেড়ে আসার আগেই দেখেছিলাম ড্রপ ইন পিচগুলো সরিয়ে নেয়ার তোড়াজোড় চলছে। কয়েকঘন্টার ব্যবধানে সেখানে  ‘পুকুর’! এমসিজির এক কর্মকর্তা বললেন, বৃহস্পতিবার এই মাঠে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগে বড় ম্যাচ আছে। কালর্টন ক্লাব বনাম রিচমন্ড ম্যাচ। ৭২ হাজার দর্শক আগাম টিকিট কেটে রেখেছেন এই ম্যাচ দেখার জন্য। আর সেই ম্যাচের জন্য চলছে মাঠের প্রস্তুতি। এবং সেটাও ঘড়ির কাঁটা মেপে। পেশাদারিত্বের ছাপটা মাঠের এই কর্মীদের মধ্যেও। এমসিজিÑ নামটা যতোই হোক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ক্রিকেটের বাইরে অন্য সব খেলাও এখানে হয়, তাতে অবশ্য এমসিজি কৌলিন্য হারায়নি। অলিম্পক গেমস পর্যন্ত হয়েছে। ফুটবল, রাগবি সবই হয়। আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের জন্য নাকি এই মাঠ বছরে বরাদ্দ থাকে আটদিন। বক্সিং ডে টেস্টের পাঁচ দিন। দুটো ওয়ান ডে ম্যাচ। আর একটা টি-টোয়েন্টি। সিস্টেম কথা বলে। তাই এ নিয়ে অন্যদের কোনো কথা বলতে হয় না। মাথাব্যথা হয় না তাঁদের।

আসলে অস্ট্রেলিয়ানদের পেশাদারিত্বের মাত্রাটা এমন একটা পর্যায়ে যেখানে আবেগের বুদ্বুদ ভাসে না! আর ভাসলেও সেটাকে সরিয়ে খুব দ্রুত ওরা বাস্তবের রুক্ষ জমিনে পা রাখতে পারে। তাই পঞ্চমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ এনে দিলো যে দলটা তাদের নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই জলিমন্ট স্ট্রিটে! কেন নেই তারও একটা জবাব পাওয়া গেলো অস্ট্রেলিয়ান এক ক্রিকেট লিখিয়ের কাছ থেকে।

‘ওরা ওদের কাজটা করেছে। এ নিয়ে আমাদের মাতামাতির কি আছে! বিশ্বসেরা প্রমাণ করাই ওদের কাজ। পঞ্চমবারের মতো আমরা বিশ্বকাপ জিতলাম বটে। কিন্তু আপনি একটু অন্যভাবে যদি দেখেন তাহলে উত্তরটা আপনিও পেয়ে যাবেন। গত পাঁচটা বিশ্বকাপের চারটাই কিন্তু জলিমন্ট স্ট্রিটে ঢুকেছে। কিন্তু সেখানে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাইনবোর্ডটা দেখেছেন! কতো ছোট। আমরা সবকিছুকে ছোট করে দেখতে চাই। তাহলে বড় কিছু আশা করা যায়। ’

এই হচ্ছে আসলে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ন-সিডনি-ব্রিসবেন-অ্যাডিলেড সব জায়গাই মাঠটা বড়। কিন্তু ক্রিকেট অফিসের সাইনবোর্ডটা খুব ছোট! এই সিম্বলটাই বোধহয় বলে দেয়  ক্রিকেটে মাঠ আর খেলাটাই ওদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাম অন অজি, এটা মাঠের শব্দ। মাঠেই থাকে। মাঠের বাইরে আসে না। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ বার বিশ্বকাপ জিতলেও না!

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৫

** কাপ হাতে নিয়েই বিদায় ক্লার্কের । । মেলবোর্ন থেকে অঘোর মন্ডল
** অস্ট্রেলিয়ার আগে কিউইদের এমসিজি দখল | অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** এসসিজিতে ভারতের হার, এমসিজিতে ট্র্যান্স-তাসমান ব্যাটেল | অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** ভারতীয়দের প্রশংসায় অস্ট্রেলিয়া!॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** সিডনিই বলে দেবে বিশ্বকাপটা সত্যিই ‘আউট সাইড এশিয়া’ কিনা! | অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** মহাতারকাদের ক্রিকেট আড্ডায়ও বাংলাদেশ। । অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** আবেগ মেলবোর্নে, যুদ্ধটা সিডনিতে॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** তবু ‘চোক’ শব্দটাকে এড়ানো যাচ্ছে না | সিডনি থেকে অঘোর মন্ডল
** জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি আর কি হতে পারতো!| অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হ্যাডলিও |‍| অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** মাহমুদুল্লাহর ইনিংস টেনে আনলো মার্টিন ক্রো-কে। । অঘোর মন্ডল, হ্যামিল্টন থেকে
** ক্লাস অব জিরো এইট! ‍|‍| অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে

** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।