ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা

বাংলায় ‘শ্রীনি’ এখন গালি! আনন্দবাজারকে মুস্তাফা কামাল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
বাংলায় ‘শ্রীনি’ এখন গালি! আনন্দবাজারকে মুস্তাফা কামাল আ হ ম মুস্তাফা কামাল ও নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন

ঢাকা: বাংলাদেশে আগে লোকে গালাগাল দিত ‘মীরজাফর’ এখন বলে তুই ব্যাটা ‘শ্রীনি’, এ কথা বলেছেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল। আর সে কথা বলেছেন খোদ ভারতের মাটিতে বসে, দেশটির প্রধান বাংলা সংবাদপত্র আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।



সপরিবারে কলকাতা ভ্রমণে রয়েছেন আইসিসি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট। গত বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে বাংলাদেশ টিমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়মের প্রতিবাদের যিনি পদত্যাগ করেন। আর সেই অনিয়ম ও নোংরা কিছু ঘটনার জন্ম দেওয়া ভারতীয় ক্রিকেটেরও নিন্দিত নাম শ্রী নিবাসনের সঙ্গেই ছিলো মুস্তাফা কামালের মূল দ্বন্দ্ব।

ভারতীয় বোর্ডের আমন্ত্রণে আইপিএল ফাইনাল দেখতে কলকাতা গেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে সুযোগ পেয়ে এক হাত নিয়েছেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

আনন্দবাজার লিখেছে, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ওপর এখনও গনগনে। উত্তেজিত তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনালের দু’মাস বাদেও। ‘মহাবিতর্কিত’ প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী মুস্তাফা কামাল ক্ষোভে ফুটছেন।

গৌতম ভট্টাচার্য তার সাক্ষাৎকারের সুচনায় মুস্তাফা কামালকে ‘মহাবিতর্কিত’ উল্লেখ করলেও, প্রকৃতপক্ষে বিতর্কিত নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন, কারণ তিনিই আইসিসি’র নিয়ম ভেঙ্গে ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করেছেন।

সাক্ষাৎকারে প্রথমেই উষ্কানিমূলক প্রশ্নটি আসে গৌতম ভট্টাচার্যের পক্ষ থেকে। তিনি অনেকটা বানোয়াট প্রশ্নই করে বসেন আ হ ম মুস্তাফা কামালের কাছে। তার ভাষায় ‘শোনা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের একাংশের মধ্যে তীব্র ভীতি রয়েছে যে, আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তাঁদের উত্তেজিত গণসমর্থনের বিরুদ্ধে পড়তে হতে পারে। সোজা কথায়, তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। ’

তবে এ উত্তর যথার্থই দিয়েছেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি প্রশ্নকর্তাকেই পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোথায় তিনি শুনেছেন এসব কথা। সঙ্গে বিষ্ময়ও ঝড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অন্যতম সংগঠকের মুখে। উত্তরে তিনি বলেন, এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

আর বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঠিক উল্টো, গোটা বাংলাদেশ ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে।

ভারতীয় ক্রিকেট দল ঢাকায় এলে একটা দারুণ এক্সাইটমেন্ট হবে। ক্রিকেট উৎসবের চেহারা নেবে বলেই জানান মুস্তাফা কামাল।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তার নেতিবাচক প্রশ্ন অব্যাহত রেখে এবার বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টের আরেক বানোয়াট প্রসঙ্গ তোলেন। এতে তিনি অকারণেই টেনে আনেন ব্লগার অভিজিৎ রাখু খুনের কথা আর তাতে ক্রিকেটাররা উদ্বিগ্ন বলেও নিজের মত দেন। আর নিজের বক্তব্যকে নিজেই দুর্বল করে দিয়ে বলেন, প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও তাদের কারো কারো দুর্ভাবনা রয়েছে।

যদিও কারো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হাজির করতে ব্যর্থ হন এই সাংবাদিক।  

এই প্রশ্ন আর সন্দেহ-উদ্বেগ-আশঙ্কা এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, বিন্দুমাত্র কোনও আশঙ্কা নেই। বরঞ্চ গোটা দেশ উদ্বেল হয়ে ভারতীয় সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি আনন্দবাজারের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট ও ভারতবাসীকে জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হাজির থাকবেন ওয়ান ডে দেখতে।

তিনি আরও জানান, এই খেলা চলাকালে ভারতীয় ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তি জগমোহন ডালমিয়া যেনো বাংলাদেশে আসেন সে প্রত্যাশাও বাংলাদেশের রয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ডালমিয়াকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার জন্যই বাংলাদেশ টেস্ট স্টেটাস পায়। সেই ঋণ বাংলাদেশ ভোলেনি।
প্রশ্নকর্তা এ পর্যায়ে আগুনে ঘি ঢালার মতোই প্রশ্নটি করে বসেন আ হ ম মুস্তাফা কামালকে। হুট করেই তিনি টেনে আনে শ্রী নিবাসন প্রসঙ্গ। বলেন, শ্রীনিবাসনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শোনা যায়। উনি না থাকলে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেত না।

এক বাক্যে সে মন্তব্য উড়িয়ে দেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, একদম বাজে কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোথায় হবে, উনি আসার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

এক সময় আ হ ম মুস্তাফা কামালের মুখে শ্রীনির প্রশংসা ঝড়তো এমন প্রসঙ্গ টেনে আনলে আইসিসি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, হ্যাঁ করতাম। তখনও জানতাম না তার বাড়ির লোকেরা এই ভাবে বেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। জানতাম না ক্রিকেট প্রসারের নামে উনি এতটা বেনিয়া। আইসিসিতে পরবর্তীকালে তার হাবভাব দেখে আমার মনে হত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আবার ফেরত এল নাকি? খালি ধান্দা টাকা রোজগারের আর নিজের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার।

কোথায় ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে, তা নয়। আইসিসি পরের বিশ্বকাপে টিমের সংখ্যা ১৪ থেকে ১০-এ নামিয়ে আনছে। খালি বলে টাকা, টাকা। কোথা থেকে কত রোজগার হবে। আরে, কোথাও তো ব্যাট আর বলের কথাটা বল! বিষ্ময়ের প্রকাশ আ হ ম মুস্তাফা কামালের কণ্ঠে।

আসে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভারত হারানোর পর মুস্তাফা কামালের বক্তব্য প্রসঙ্গও। এখানেও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিজের মতটি দিয়ে দেন এই বলে যে, অনেকের মতে উত্তেজনা তাতেই বাড়ে।

মুস্তাফা কামাল স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন তার কোনও বক্তব্য ভারতের বিরুদ্ধে ছিলো না। একক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছিলো।

মেলবোর্নের ম্যাচে স্পাইক্যাম কেন রাখেননি শ্রীনি সে প্রশ্ন তিনি পাল্টা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকেই করেন। জানতে চান কেন টিভি রিপ্লের বেছে বেছে সে দিনই ব্যবস্থা করা হয়নি?

স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন, মাহমুদউল্লাহর ক্যাচটা তো লাইনের বাইরে থেকে ধরা। অথচ টিভিতে দেখানো হয়নি।

স্কোরবোর্ডের ওপরে ইন্ডিয়া জিতেগা জিতেগা, এটা কী? প্রশ্ন মুস্তাফা কামালের। বলেন, এটা তো আইসিসির স্পেস। সেখানে একটা টিমের প্রতি এমন পক্ষপাত দেখানো হবে কেন?

এগুলো সব শ্রীনির কীর্তি। ফেয়ার প্লে-তে এই লোকটা বিশ্বাসই করে না, সোজা-সাপ্টা মত তার।

বিশ্বকাপ ফাইনালে পুরস্কার দিতে না দেওয়ার জন্য শ্রীনি যে নোংরামি করেছিলেন সে প্রসঙ্গ আসে। প্রশ্নকর্তা জানতে চান, মামলা করার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত মামলা না করে কেনো তিনি ইস্তফা দিলেন।

উত্তরে মুস্তাফা কামাল জানান, একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিসি’র মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতেই তিনি আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান।

তবে শ্রীনির অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস তিনিই দেখিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মুস্তাফা কামাল।

শ্রীনি এরই মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেট থেকেই বিচ্যুত। সে প্রসঙ্গ টেনে আনন্দবাজারের এবারের মত, শ্রীনি ভারতীয় বোর্ডের দায়িত্বে থাকলে কিন্তু বাংলাদেশ সফর হতই না।

এতে একম আ হ ম মুস্তাফা কামালও। তিনি বলেন, জানি তো। গোটা বাংলাদেশ খুব খুশি যে ভারতীয় বোর্ড থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ শ্রীনির ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। এই একটা মানুষ বাংলাদেশে ভারতের ভাবমূর্তিতে কাদা ছেটাচ্ছে।

এবারও প্রশ্ন নয় আরেক মন্তব্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর- শেখ হাসিনা তো বিশ্বকাপের পর আপনার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন!

উত্তরাটা যথার্থই দেন মুস্তাফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একে তো উনি অসম্ভব ক্রিকেট ভক্ত। একেবারে প্রথম বল থেকে খেলা দেখেন। তার ওপর তার মন্ত্রীসভার সদস্য আমি। আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করা হয়েছে। তাই উনি চুপ করে থাকেননি।
 
টিম ইন্ডিয়া ঢাকা এলে তাদের সম্মানে ডিনার দেওয়ার ঘোষণা দেন মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, দারুণ সংবর্ধনা পাবেন ক্রিকেটাররা।

তার আগেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা আসছেন সে প্রসঙ্গ তুলে তাকেও নজিরবিহীন সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে ওই একটা লোককে বাংলাদেশ ক্ষমা করতে পারবে না, ইঙ্গিত করে বলে তিনি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবার সত্যিই ধরে ফেলেন এই লোকটি নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন না হয়ে যায় না।

তার বিষ্ময়মাখা প্রশ্নে আ হ ম মুস্তাফা কামালের উত্তর-  ইয়েস। বাংলাদেশে লোককে গালাগাল দিলে একটা সময় মীরজাফরের নাম উঠত। এখন ১৭৫৭ উধাও। নতুন নাম পাওয়া গেছে ২০১৫-তে। শ্রীনি। কারও ওপর কেউ প্রচণ্ড রেগে গেলে বা কারও সঙ্গে ঝগড়া হলে আমাদের দেশে লোকে এখন বলে, তুই ব্যাটা শ্রীনি! একদম কথা বলিস না!

বাংলাদেশ সময় ১০১২ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
এমএমকে

** আনন্দবাজারে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।