ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বদলে যাওয়া টাইগারদের নেপথ্য নায়কেরা

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট,সাজ্জাদ খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৫
বদলে যাওয়া টাইগারদের নেপথ্য নায়কেরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/(ফাইল ফটো)

ঢাকা: কারো কাছে বাংলাদেশের এমন পরিবর্তন অবিশ্বাস্য। কারো কাছে স্বপ্নপূরণ।

কেউ ‍কেউ আবার এতটা স্বপ্ন দেখার সাহসই পাননি। আসলে ওমন করে কেউ ভাবেনি দেশের মাটিতে টানা চারটি সিরিজ জিতেই ছাড়বে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ঈদের খুশির আনন্দ পুরো জাতির কাছে ক্রিকেটময় হয়েই থাকছে।

এমন দিন আসবে, মনের কোনে এমন স্বপ্ন নিয়ে নীরবে অপেক্ষা করেছেন অনেকে। অথচ কারো সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি, না জানি ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়েই পরে প্রশ্ন উঠে যায়-এমনটা ভেবে!বাস্তবতা আসলে এমনই।

চারটির সিরিজের মধ্যে প্রথম দুটি তো এক্কেবারে ‘বাংলাওয়াশ’। জিম্বাবুয়ে (৫-০), পাকিস্তান (৩-০), ভারত (২-১) ও দক্ষিণ আফ্রিকা (২-১)। সবই হয়েছে খুব অল্প সময়ে, ম্যাজিকের মতো করে।
 


কোন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলালো বাংলাদেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটারদের ঢং? বদল এলো ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার বেলুনে?

দৃশ্যমান এমন উন্নতিতে ক্রিকেট সংশিষ্ট সকলের অবদানের মাঝে মোটাদাগে দলনেতা মাশরাফি বিন মর্তুজা, হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও প্রধাণ নির্বাচক ফারুক আহমেদের নামটিই আসবে সবার আগে। তিনজনের ভূমিকা ও কাজ আলাদ‍া হলেও কোথায় যেন এক সুরে সুর ধরেন তারা। ক্রিকেটীয় দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞায় এ তিন জন -----। তিন জনের লক্ষ্যই তো এক। সেটা ক্রিকেটের উন্নতি, বাংলাদেশের উন্নতি।
 
কোনো সিরিজের আগে স্কোয়াড ঘোষণা করেন নির্বাচক প্যানেল। সেখানে থাকে কোচ-ক্যাপ্টেনের মতামতও। দল নিয়ে শুরু হয় অনুশীলন ক্যাম্প। অনুশীলনেই যাকে যেমন ‘ওষুধ’ দেয়া প্রয়োজন সেটা দেন কোচ। আর মাঠে সকল খেলোয়াড়দের এক সুতোয় বাঁধেন অধিনায়ক।
 
এই তিনে মিলেই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক পর্যায়ে। চোখে চোখ রেখে তিনজনই দেখিয়ে যাচ্ছেন দূরদর্শিতা। নইলে কেন-ই বা প্রধাণ নির্বাচক ফারুক আহমেদ মাত্র এক ওয়ানডে খেলা সৌম্য সরকারকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ দেবেন। ফলশ্রুতিতে সেই সৌম্যই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিক ও ছন্দময় তারকা! কিংবা আরেক সাতক্ষীরার ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমানকে কেন-ই-বা এত বড় মঞ্চে ঢোকানোর পরিকল্পনা আটবেন! যেই মুস্তাফিজই কিনা হয়ে উঠবেন আফ্রিদি, রোহিত শর্মা, আমলাদের কাছে এক দু:স্বপ্নের নাম।
 
অন্য দু’জন কাজ সম্পন্ন করেন চোখে চোখ রেখে। একে অপরের প্রশংসাতেও কেউ কম যান না। বিশ্বকাপে মাশরাফির সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দেখে কোচ হাথুরুসিংহে ম্যাশকে ‘নেতা’ বলে অ‍াখ্যায়িত করেছিলেন। সেই নেতাই (মাশরাফি) আবার জাতীয় দলের বাইরের এক ক্রিকেটারের কাছে গল্প করে বেড়ান, ‘হাথুরু সবসময় স্বাধীনতা দেয় ক্রিকেটারদের। যার যার স্বাভাবিক স্টাইলকে উৎসাহিত করেন। স্বাভাবিক খেলা খেলতে গিয়ে যদি কেউ পারফরম্যান্স নাও করে তাতেও খেলা বদলাতে বলেন না। এই কোচের অধীনে খেলতে পারাটা খুব উপভোগ্য । আমরা করছি। ’

কোচ-ক্যাপ্টেন একে-অপরের প্রতি মূল্যয়নের ভাষা এমন শ্রদ্ধাভর হলেও ম্যাচের আগে আবার তর্কও বাঁধে। এই তো, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারের পর বাংলাদেশ শিবিরে যখন হতাশা তখন দ্বিতীয় ওয়ানডের একাদশ নির্বাচন নিয়ে কোচ-ক্যাপ্টেনের ভিন্ন মত। ক্রিকেটীয় যুক্তিতেই আবার তারা চলে আসেন একমতে।         
শেন জার্গেনসন অধ্যায় শেষ হওয়ার পর কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। ০১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন এই লংকান। প্রথম এসাইনমেন্টেই ব্যর্থ হন তিনি। হাথুরুসিংহ বাংলাদেশকে নিয়ে তার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে সেখানে ব্যর্থ হয় পুরো দল। তবে ঘরের মাঠে গত নভেম্বর জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকে সব সিরিজেই সফল নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক এই কোচ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে হাথুরুসিংহের কোচিং স্টাইলের ভূমিকা অনেক। নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে ক্রিকেটারদের অনুশীলন করিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাফল্যের পালকে যোগ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়। এই সিরিজ জিতে ভীষণ খুশি হাথুরুসিংহে।

ক্রিকেটারদের সঙ্ঘবদ্ধ করে প্রতিপক্ষকে নাকানি-চুবানি খাওয়ার কাজটি মাঠে করেন মাশরাফি। হাথুরুর সাফল্যের পেছনে অনেক বড় অবদান মাশরাফির। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালের ওই ‘বাংলাওয়াশ’ সিরিজে দলের অধিনায়কই ছিলেন মাশরাফি। প্রথম ওয়ানডেতে এক ওভার বল করেই চোঁটের কারণে মাঠ থেকে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। এর পর ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে (২০১১) খেলতে পারেন নি এই নেতা। দলে ফিরে ফের অধিনায়কত্ব পান ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে। নড়াইল এক্সপ্রেসের জাদুর ছোঁয়ায় বদলে গেল বাংলাদেশ। সেই জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে বিশ্বকাপসহ ২০ ম্যাচের ১৫ ম্যাচেই বাংলাদেশকে জয় উপহার দিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্ব। চার ম্যাচে হার। পরিত্যক্ত হয়েছে একটি ম্যাচ।



মাশরাফির দলের সাফল্যের হারের সঙ্গে বাড়ছে হাথুরুসিংহের সাফল্য। সেই সঙ্গে কৃতিত্ব বাড়ছে নির্বাচক প্যানেলেরও। আর তার ফল হাতে হাতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। তরুণদের আধিক্য নিয়ে গড়া দলটি ক্রমেই পরিণত হয়ে উঠছে এই তিন দূরদর্শীর অধীনে থেকে। থাকুক না এভাবেই!

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৫
এসকে/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।