ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আপাদমস্তক এক ক্রিকেট পাগলের গল্প...

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
আপাদমস্তক এক ক্রিকেট পাগলের গল্প... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা: ক্রিকেটই তার ধ্যান-জ্ঞান। নিজের জীবনের প্রতিটি পরতে-পরতে জড়িয়ে আছে ক্রিকেট।

তার পরিচয় অনেক। কারো কাছে তিনি ক্রিকেট কোচ, কারো কাছে ক্রিকেটার। আবার অনেকের কাছে সংগঠক। তবু কোনো পরিচয়েই নিজেকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনতে চাননা তিনি।

‍তার হাত ধরেই গড়ে ওঠা এক তরুণ তুর্কি ‘কাটার’ খ্যাত বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাফিজের কারণেই এবার আলোচনায় এসেছেন আপাদমস্তক সেই ক্রিকেট পাগল মানুষটি।

তিনি সাতক্ষীরার দেশবিখ্যাত ক্রিকেট কোচ মুস্তাফিজের গুরু মুফাচ্ছিনুল ইসলাম তপু। ক্রিকেটকে ঘিরে আবর্তিত এ মানুষটি একসময় নিজে মাঠ কাঁপিয়েছেন। এখন তার শিষ্যরা কাঁপাচ্ছেন মাঠ। শিষ্যদের খ্যাতিই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তপুকে তুলে ধরেছে অনন্য উচ্চতায়।

তবে ক্রিকেটের হাত ধরে তার উপরে উঠে আসার গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়।

সেবার, ১৯৯১ সাল। নবম শ্রেণি পড়ুয়া তপু সাতক্ষীরার শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এরিয়ানস ক্লাবের বি টিম ‘ইয়াং এরিয়ানস’ এর হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ খেলতে মাঠে নামেন। সেবারই প্রথম তপুদের অনবদ্য পারফরমেন্সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইতিহাস গড়ে ইয়াং এরিয়ানস ক্লাব।

এরপর এরিয়ানস ক্লাব, গণমুখী সংঘ, টাউন স্পোর্টিং ক্লাব, সুলতানপুর ক্লাব ও মুন্সীপাড়া যুব সংঘের হয়ে সাতক্ষীরার মাঠ কাঁপিয়েছেন এই অফ স্পিনার- ব্যাটসম্যান। টানা কয়েক বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন মুন্সীপাড়া যুব সংঘকে।

শুধু সাতক্ষীরা নয়, জেলার বাইরেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। খেলেছেন রাজধানীর আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে প্রথম বিভাগ লীগে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের নেতৃত্বও দিয়েছেন সাতক্ষীরার এই সফল কোচ। আর প্রিমিয়ার লীগ খেলেছেন ওরিয়ান ক্লাবের হয়ে।

ক্রিকেটকে ধ্যান-জ্ঞান করলেও পড়াশোনায় ভাটা পড়েনি তপুর। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে।

দেশজোড়া পরিচিত পাওয়া সফল এ‌ই কোচের ‍এখন তুমুল ব্যস্ততা। সময় কাটে জেলা দলসহ নিজের ক্রিকেট কোচিং নিয়েই। সেখানেই আগামী দিনের মুস্তাফিজদের শেখান ব্যাট-বলের কারিকুরি।

নিজে মিডিয়াবিমুখ, তবুও অনেক অনুরোধ শেষে রাজি হলেন বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে।

শুরুতেই বললেন নিজের ক্রিকেট গুরু এজাজ আহমেদ জজের কথা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কোচ প্রয়াত শেখ সালাউদ্দিনের প্রতি। যিনি তাকে কোচিংকে পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মূলত শেখ সালাউদ্দিনের হাত ধরেই ২০১০-১১ মৌসুমে জেলা দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তপু।

আলাপকালে বললেন, তার সেরা আবিষ্কার ও কোচিং ক্যারিয়ারের স্বার্থকতা মুস্তাফিজের কথা। তপু বলেন, ও ক্রিকেটের প্রতি খুবই আন্তরিক ছিল। ব্যাটিংয়ের দিকে একটু বেশিই ঝোঁক ছিল মুস্তাফিজের। যখন দেখলাম ওর বোলিংয়ে অসামান্য প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে, তখনই বলেছিলাম- তুই বোলিংটা কর। ও কথা শুনে চর্চা শুরু করেছিল। যার সুফল পেয়েছে।

আলাপকালে তপু বলতে ভোলেননি খুলনা জেলা দলের কোচ মনোয়ার আলীর কথাও। তপু বলেন, মুস্তাফিজের জন্য মনোয়ার ভাইও অনেক খেটেছেন। তিনিই সবসময় মুস্তাফিজকে সুযোগ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শেখ নিজাম উদ্দিনেরও। তার সহযোগিতাও সবসময় পেয়েছি।

সাতক্ষীরার ক্রিকেটের উন্নয়নে কোনো পরামর্শ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তপু বলেন, শিবলু, সৌম্য ও মুস্তাফিজ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে সাতক্ষীরার ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছে। এই উৎসাহ ধরে রাখতে ও খেলোয়াড়দের মজবুত ভিত গড়তে সাতক্ষীরায় নিয়মিত বয়সভিত্তিক খেলার আয়োজন করতে হবে।

এছাড়া সাতক্ষীরার ক্রিকেটের উন্নয়নে ইনডোর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড ও একটি জিমনেশিয়াম খুবই দরকার বলে মন্তব্য করেন তপু।

এ প্রয়োজনের কথা এর আগেও বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
এস‌আর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।