ঢাকা: বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান সময়ের ‘গতিদানব’ তাসকিন আহমেদ ও ‘ঘূর্ণি জাদুকর’ আরাফাত সানির অ্যাকশন নিয়ে আইসিসির কর্মকর্তাদের সন্দেহ প্রকাশে বেজায় চটেছেন জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে। সন্দেহের কথা জানানোর পর বৃহস্পতিবারই (১০ মার্চ) ভারতের হিমাচলের ধর্মশালায় সংবাদ সম্মেলন করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
আইসিসির কর্মকর্তাদের আলোচিত এই পদক্ষেপের পাল্টা হাতুরুসিংহের এমন কড়া জবাব নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ইএসপিএন-ক্রিকইনফো। ওই প্রতিবেদনে হাতুরুসিংহের বরাত দিয়ে ক্রিকইনফো জানায়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ আসরের ঠিক শুরুতে এই সন্দেহ প্রকাশ হলেও চাপ নেওয়ার মতো মনোবল আছে বোলার ও দলের অন্য ক্রিকেটারদের মধ্যে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় দল এখন ধর্মশালায়। তিন ম্যাচের মধ্যে প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮ রানে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। ওই ম্যাচেই তাসকিন ও সানির বোলিংয়ে ‘সন্দেহজনক অ্যাকশন’ দেখতে পান আইসিসির কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে হাতুরুসিংহে বলেন, তারা যদি আমার বোলারদের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, তাদের (আইসিসি) কর্মকাণ্ড নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। আমি কোনো ভুল দেখছি না (বোলিংয়ে)। তারা (তাসকিন ও সানি) এভাবে গত ১২ মাস বল করেছে। তারা (আইসিসি) যদি গত ম্যাচ (নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে) দেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে তো তারা এর আগের ম্যাচগুলোও দেখেছিল। আমি তো এই কথা বলবো।
সন্দেহের বিষয়টি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাঠে থাকা আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি। টাইগারদের কোচ হাতুরুসিংহের তথ্যানুযায়ী, মাঠে থাকা আম্পায়ার রড টাকার ও ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পিক্রফট গত জুনেও বাংলাদেশের কয়েকটি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন। নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশ যে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল, সেখানেও মাঠে দায়িত্ব পালন করেন টাকার, আর ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেন পিক্রফট।
হাতুরুসিংহে বলেন, তারপর থেকে গত ১২ মাসে তো এই বোলাররা অ্যাকশনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এখন এমন সন্দেহ কেন?
এই সন্দেহ প্রকাশের ফলে দলে এখন কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে টাইগার দলের কোচ সাফ বলে দেন, আমার বোলাররা তাদের অ্যাকশন পরিবর্তন করবে না। এটা আসলে আপনি কীভাবে নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে। বোলারদের এ ধরনের চাপ নেওয়ার মনোবল আছে।
তিনি বলেন, বোলাররা ভালোভাবেই জানে তারা যা করছে তা ঠিক। আমরা মনে করি এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা (তাসকিন-সানি) সম্প্রতি অনেক ম্যাচ খেলেছে। যদিও এটা আমাদের জন্য বিস্ময়কর ছিল।
এদিকে, আইসিসি ওই সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাসকিন ও সানিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তারা বোলিং চালিয়ে যেতে পারবেন।
ক্রিকেটপ্রেমীদের শঙ্কা, রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত বোলিং চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ম্যাচ চলাকালে যদি সন্দেহের বশে তাসকিন-সানিদের বলে ‘নো’ ডাকা হয়, সেক্ষেত্রে ম্যাচে দারুণ বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে- এ নিয়েও ভাবছেন কেউ কেউ।
এক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালের ২৩ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচে ‘মুরালিধরন-রানাতুঙ্গা’র পদক্ষেপের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রস এমারসন শ্রীলঙ্কান বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের বলে নিয়মের বাইরে কনুই ভাঙার অভিযোগ তুলে ‘নো’ ডাকলে প্রতিবাদে দল নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। পরে অবশ্য ম্যাচ অফিসিয়ালরা তৎক্ষণাৎ লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হন এবং ১৪ মিনিট পর মাঠে ফেরেন ‘বীর‘ রানাতুঙ্গা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
এইচএ/
** আইসিসির সমালোচনা ফেসবুকে, ক্রিকেটপ্রেমীদের সন্দেহে বুমরা-অশ্বিন