ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো কেমন আচরণ করবে

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো কেমন আচরণ করবে ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মার-মার, কাট-কাট ধরনের শর্ট ভার্সন ক্রিকেটের জমজমাট আসর শুরু হয়েছে ভারতে। ক্রিকেট বিশ্ব মুখিয়ে আছে সেই জাঁকজমকপূর্ণ টুর্নামেন্টের সুপার টেন দেখার অপেক্ষায়।



মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বের (সুপার টেন রাউন্ডের) ম্যাচ। ৩ এপ্রিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে ফাইনালের মধ্যদিয়ে টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে। মূলপর্বে ১০ টি দল দু’গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নিচ্ছে। প্রতি গ্রুপ থেকে ২টি করে চারটি দল সেমিফাইনাল খেলবে। ভারতের ৭টি ভেন্যুতে টুর্নামেন্টের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ভেন্যুগুলোর ইতিহাস ও উইকেটের আচরণ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

নাগপুর স্টেডিয়াম:
স্টেডিয়ামটি মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ভারদা রোডে অবস্থিত। এটি নিউ ভিসিএ স্টেডিয়াম (বির্দভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়াম) নামেও পরিচিত। ২০০৮ সালের নভেম্বরে স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে এই ভেন্যু আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এ মাঠে একটি মাত্র টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মাঠ থেকেই সৌরভ গাঙ্গুলী ২০০৮ সালে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

এ ভেন্যুর উইকেটটি বেশ স্পোর্টিং। বাউন্সি পিচ হলেও স্পিনাররাও এ পিচে সহায়তা পাবেন। সহায়তা পাবেন ব্যাটসম্যানরাও। এ ভেন্যুতে যারা প্রথমে টসে জয়লাভ করবেন, তারা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।  

এখানে সুপার টেনের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলাগুলো হলো:
১৫ মার্চ: ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড
২৫ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২৭ মার্চ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম আফগানিস্তান।

ধর্মশালা:
এটি হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। ভারতের হিমাচল প্রদেশের জাওয়াহার নগরে এ স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। এটি ২০০৩ সালে নির্মাণ করা হয়। এ স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ২৩  হাজার। ২০১০ সালে এ মাঠে প্রথম টি-২০ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যে ওই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এ ভেন্যুর উইকেট ব্যাটিং বান্ধব। এ পিচে যে ব্যাটসম্যানরা টেকনিক নিয়ে খেলবেন তারা পিচ থেকে সহায়তা পাবেন। রাতে কুয়াশা পড়ে। যারা প্রথমে ব্যাট করবেন তারাই পিচ থেকে সহায়তা পাবেন। এখানে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ২৩২ রান করেছিল। পেস বোলাররা এখান থেকে সুবিধা পাবেন যদি লাইন লেন্থে বল করতে পারেন। এটি ভারতের অন্যতম সেরা একটি পিচ।  

এ ভেন্যুতে সুপার টেনের দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারনে ১৯ মার্চ ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি কলকাতার ইডেন গার্ডেনে স্থানান্তরিত করা হয়। এ মাঠে ১৮ মার্চ নিউজিল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।

মুম্বাই স্টেডিয়াম:
এ স্টেডিয়াম ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৩  হাজার ১০৮ জন (২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের হিসেব অনুযায়ী)। ২০১০ সালে এ মাঠে প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠেই ২০১১ সালে ধোনির ভারত শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ভেন্যুর উইকেট পেসার ও স্পিনার উভয়ের জন্যই সহায়ক। নতুন বলে পেসাররা হয়ে উঠতে পারেন যে কোন দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর। আরব সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে সুইং বোলাররা সাহায্য পাবেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবেন।

এ ভেন্যুতে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ও সুপার টেনের তিনটি ম্যাচসহ ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলা গুলো হলো:

১৬ মার্চ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ড
১৮ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড
২০ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম আফগানিস্তান
৩১ মার্চ: দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

ইডেন গার্ডেন:
ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়াম ভারতের অন্যতম বড় স্টেডিয়াম। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার এই স্টেডিয়াম স্থাপিত হয় ১৮৬৪ সালে। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৬ হাজার ৩৪৯ জন। এক সময় এর ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ১ লাখ। পরবর্তীতে তা কমিয়ে আনা হয়। এ মাঠে ১৯৩৪ সালে প্রথম টেস্ট ম্যাচ (ভারত বনাম ইংল্যান্ড) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এটি ফুটবল মাঠে পরিণত হয়। পরে ১৯৮৭ সালে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে।

এ মাঠে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৫২ রান তাড়া করতে গিয়ে ভারত ১২০ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে। পরে দর্শকদের বিশৃঙ্খলার জন্য ম্যাচটি বন্ধ থাকে। পরে লঙ্কানদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ মাঠে সর্বোচ্চ ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এ মাঠের উইকেট সব সময় ব্যাটিং সহায়ক। এ মাঠেই ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২৬৪ রানের ইনিংসটি খেলেন। সাধারণত স্পিনাররা এ মাঠে বেশি সুবিধা পান। এ মাঠে ১৯৯৩ সালের হিরো কাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনিল কুম্বলে ১২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন।

এ ভেন্যুতে ফাইনাল ও সুপার টেনের তিনটি ম্যাচসহ ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, ধর্মশালা স্টেডিয়ামের পাকিস্তান বনাম ভারতের ম্যাচটি এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচগুলো হলো:

১৬ মার্চ: পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ
১৭ মার্চ: শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান 
১৯ মার্চ: ভারত বনাম পাকিস্তান
২৬ মার্চ: নিউজিল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ
৩ এপ্রিল: ফাইনাল

বেঙ্গালুরু স্টেডিয়াম:
এই ভেন্যু এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। এটি ১৯৬৯ সালে স্থাপিত হয়। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ভারতের মধ্যে টেস্ট ম্যাচের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে এই ভেন্যু। এ মাঠে ১৯৯৬ সালে ফ্লাডলাইট স্থাপিত হয়। ১৯৯৬ সালে এ মাঠে বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ দিয়ে দিবা-রাত্রির ম্যাচের শুরু হয়।

এ ভেন্যু ভারতের জন্য অপয়া ভেন্যু হিসেবে পরিচিত। এখানকার উইকেটে অতিরিক্ত পেস ও বাউন্স থাকায় পেস বোলিং নির্ভর বিদেশি দলগুলোর কাছে এটি ভালো ভেন্যু। তাই পেসাররা এ মাঠে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তবে শর্ট ভার্সন ক্রিকেটে এ মাঠ ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ। কারণ মাঠের সীমানা ছোট। এ মাঠেই রোহিত শর্মা ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২০৯ রান) করেছিলেন।

এ ভেন্যুতে সুপার টেনের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলাগুলো হলো:

২০ মার্চ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম শ্রীলঙ্কা
২১ মার্চ: অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান
২৩ মার্চ: ভারত বনাম বাংলাদেশ
 
মোহালি স্টেডিয়াম:
১৯৯৩ সালে এ মাঠের উদ্বোধন হয়। এর আরেকটি নাম বিন্দ্রা স্টেডিয়াম। তবে এটি মোহালি স্টেডিয়াম নামে ব্যাপক পরিচিত। এটি বিশ্বমানের একটি স্টেডিয়াম। এটি তৈরি করতে ৩ বছর সময় লেগেছিল। খরচ হয়েছিল ২৫ কোটি রূপি। এটি পাঞ্জাব দলের নিজস্ব স্টেডিয়াম। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার ৯৫০ জন। তবে আনুষ্ঠানিক হিসেবে এর ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার। এটি ভারতের ১৯তম স্টেডিয়াম।

১৯৯৩ সালের ২২ নভেম্বরে হিরো কাপে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যদিয়ে এ মাঠ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এ মাঠে ২০০৯ সালে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১১ রান করে। পরে লঙ্কানরা ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২০৬ রান তোলে।
 
এ ভেন্যুর উইকেট এক সময় পেস বোলারদের জন্য বেশ সহায়ক থাকলেও সম্প্রতি স্পিনাররাও এ পিচে সহায়তা পাচ্ছেন। তবে এটি ব্যাটসম্যানদের জন্যও বেশ ভালো। মোট কথা এটি একটি স্পোর্টিং পিচ।

এ ভেন্যুতে সুপার টেনের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলাগুলো হলো:

২২ মার্চ: পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড
২৫ মার্চ: অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান
২৭ মার্চ: ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া
 
ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম:
ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম ১৮৮৩ সালে স্থাপিত হয়। ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন স্টেডিয়াম এটি। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৮ হাজার। দিল্লির রঞ্জি দল ও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ঘরের মাঠ ফিরোজ শাহ কোটলা। এ মাঠে ১৯৪৮ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি ছিল ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।   এখানকার উইকেট বেশ স্পিন সহায়ক। এ মাঠে ১৯৬৯-৭০ সালে বিষেণ সিং বেদি ও ইরাপাল্লি প্রসন্ন দুজনে মিলে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। ফলে ভারত ৭ উইকেটের জয় পায়। এ মাঠেই ১৯৯৯-২০০০ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে অনিল কুম্বলে একাই ৭৪ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। এটি ভারতের পয়মন্ত ভেন্যু হিসেবে পরিচিত।

২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে এ মাঠের পিচটি ক্রিকেট খেলার জন্য অনুপযোগী হওয়ায় ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে আইসিসি এ মাঠটিকে ১২ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে। পরে অবশ্য ২০১১ সালে এ মাঠে বিশ্বকাপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি ব্যাটসম্যানদের সহায়ক গ্রাউন্ড।

এ ভেন্যুতে প্রথম সেমিফাইনাল ও সুপার টেনের তিনটি ম্যাচসহ ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলাগুলো হলো:

২৩ মার্চ: ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান 
২৬ মার্চ: শ্রীলঙ্কা বনাম ইংল্যান্ড
২৮ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা
৩০ মার্চ: প্রথম সেমিফাইনাল

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬/আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা
এমআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।