ঢাকা: ইনজুরি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বল হাতে ঝড় তুলতে দেখা যেত পেসার রুবেল হোসেনকেও। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আলোচিত বোলারকে এখন টিভি সেটের সামনে বসে দেখতে হচ্ছে টি-টোয়েস্টি বিশ্বকাপ।
গত বছরের মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে প্রথমবার ইনজুরিতে পড়েন রুবেল হোসেন। এরপর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন কেবল ওয়ানডে সিরিজ। অক্টোবরে ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফরে গিয়ে আবার ইনজুরিতে পড়েন এই ডানহাতি পেসার।
এরপর থেকেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে এই গতিতারকা। এপ্রিলে প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের মঞ্চে ফিরতে চান তিনি। এ জন্য মিরপুর একাডেমি মাঠে চলছে তার নিবিড় অনুশীলন। আরও বিধ্বংসী হয়ে ফিরতে চান দলে। অনুশীলনে রুবেল রপ্ত করেছেন ‘বাটারফ্লাই’ নামে এক স্লোয়ার। ব্যাটসম্যানের জন্য যা হতে পারে খুবই অস্বস্তির। নিজের ইনজুরি, ভবিষ্যত ভাবনা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স- এসব বিষয় নিয়ে রুবেল হোসেন কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট সাজ্জাদ খান।
বাংলানিউজ: লম্বা সময় ধরে ইনজুরিতে ভুগছেন। এখন কি অবস্থা আপনার?
রুবেল হোসেন: এখন অনেকটাই ফিট আমি। সপ্তাহে আমার তিনটা বোলিং সেশন। বোলিং সেশনে ৭ ওভার করে বল করছি। আগে ইনটেনসিটি কম ছিল। যেমন ৭০ শতাংশ, কখনও ৮০ শতাংশ। ফুল স্পিডে বল করতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ, শেষ তিনটা সেশনে আমি ১০০ ভাগ ইনটেনসিটিতে বল করেছি।
বাংলানিউজ: মাঠে কবে দেখবো আপনাকে?
রুবেল হোসেন: বিসিএলের শেষ রাউন্ডে মাঠে নামতে চেয়েছিলাম। পরে ভাবলাম আরেকটু সময় নিই। এখন প্রিমিয়ার লিগকে টার্গেট করছি।
বাংলানিউজ: ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে পেস আক্রমণে বাংলাদেশ দলের মূল বোলার ছিলেন আপনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চয়ই খুব মিস করছেন?
রুবেল হোসেন: গত ৭-৮ বছর ধরে বেশিরভাগ বিশ্বকাপেই আমি দলে ছিলাম। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে যখন টিভিতে খেলা দেখি। আমিও তো এই দলটাতে খেলেছি। ক্রিকেটারদের জীবনে এমনটা আসবেই। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে হবে।
বাংলানিউজ: একটা সময় বাংলাদেশ ছিল স্পিননির্ভর দল। এখন প্রায়ই একাদশে চার পেসার রাখা হয়। বাংলাদেশ দলে পেসশক্তির এই উত্থানকে কিভাবে দেখছেন?
রুবেল হোসেন: এই পথটা আমরা পেসাররাই তৈরি করে দিয়েছি। পেসাররা ভালো করায় চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এক সময় এমনও হয়েছে একজন পেসার নিয়ে খেলতে হয়েছে। বাংলাদেশের কোচ (চন্ডিকা হাথুরাসিংহে) ও অধিনায়ক মাশরাফি ভাই পেস বোলারদের ও পর অনেক বেশি নির্ভর করেন। একাদশে চারটা পেস বোলার দেখতে ভালো লাগে। বাইরের দলগুলো তিনটা-চারটা করে পেস বোলার খেলায় আগে থেকেই। আমরা দুটি খেলাতাম। এখন সব পাল্টে গেছে। দেশের মাটিতে চারটা, বিদেশের মাটিতেও চারটা পেসার খেলছে। একটা সময় স্পিনারদের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন পেসারদের ওপর। সময় তো সবসময় এক রকম যায় না।
বাংলানিউজ: আপনি তো অনেক দিন ধরেই দলের বাইরে। এখন দলে অনেক পেসার। আপনাকে নিশ্চয়ই প্রমাণ করেই দলে আসতে হবে?
রুবেল হোসেন: দেখেন, দলে যারা এসেছে তারা নিজেদের প্রমাণ করেই এসেছে। রনি (আবু হায়দার) বিপিএলে পারফর্ম করেই কিন্তু এসেছে। তাসকিন, আল-আমিনরা অসাধারণ বোলিং করছে, মাশরাফি ভাই তো আছেই। পেসারদের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকলে সেটা বাংলাদেশ দলের জন্যই ভালো। এই চ্যালেঞ্জটা থাকলে পেসারদের পরিশ্রম করার ইচ্ছা বাড়বে। কেউ দুইটা-তিনটা ম্যাচে টানা খারাপ করলেই হয়তো দল থেকে বের হয়ে যাবে। এক ম্যাচ খারাপ করলেই পরের ম্যাচে ড্রপ যাবে। কারণ, বিকল্প পেসারও আছে। এই প্রতিযোগিতাটা দলের জন্যই ভালো হবে।
বাংলানিউজ: শুনেছি বিশেষ ধরনের একটা স্লোয়ার নিয়ে কাজ করছেন। সেটা আসলে কী?
রুবেল হোসেন: আমার শক্তি সাধারণত রিভার্স সুইং, পুরনো বলে যেটা আমার ভালো হয়। আর অফ-কাটারটা মারি। এখন স্লোয়ার নিয়ে কাজ করছি, এটিকে বলে বাটারফ্লাই। তিন আঙুলের মাঝখানে বলটা রেখে ডেলিভারি দিতে হয়। ভারতের জহির খান স্লোয়ারটা মারতো। সবচেয়ে ভালো মারতে পারতো অস্ট্রেলিয়ার লেঙ্গাভেল্ট। এসব বলে ব্যাটসম্যান বিভ্রান্ত হয়। উইকেট যদি ফ্ল্যাট হয় তাহলে টার্নও পাওয়া যায়।
বাংলানিউজ: বাটারফ্লাই স্লোয়ার রপ্ত করার আগ্রহ কিভাবে এলো?
রুবেল হোসেন: রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) ভাই বলতো, ওটা (বাটারফ্লাই স্লোয়ার) তোর তো ভালো হয়। ভালো হচ্ছে, চেষ্টা কর। চেষ্টা করছি। ভালোও হচ্ছে। অনুশীলনে ৭-৮টা মারি। কোনোদিন হয়তো কেবল ইয়র্কার নিয়ে কাজ করি আবার কোনোদিন স্লোয়ার নিয়ে। এখন লাইন-লেন্থে জোর দিচ্ছি। সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে। প্রিমিয়ারে ভালো করতে হবে।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশ দলের কয়েকজন ক্রিকেটার খেলার পাশাপাশি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। হয়তো ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। এরকম আপনার কোনো উদ্যোগ বা ইচ্ছা আছে কি না?
রুবেল হোসেন: সাকিব ভাই অনেক দিন ধরেই ব্যবসা করছেন। নাসিরও (নাসির হোসেন) কয়েকদিন আগে পারফিউমের ব্যবসা শুরু করলো। আমি এখনো চিন্তা করিনি। তবে শিগগিরই হয়তো চিন্তা করবো, কিছু করার উদ্যোগও নিতে পারি।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে ফিরি। বাংলাদেশ তো সুপার টেনে উঠলো। কেমন সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের?
রুবেল হোসেন: আমি তো স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপ নেবে বাংলাদেশ। এটা আমার মনের কথা। আর সেটা অসম্ভব কিন্তু না। আমাদের দলে ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনার সাকিব আল হাসান আছে। ট্যালেন্ডেড বোলার মুস্তাফিজ আছে। যে এখন বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। তাসকিন, আল-আমিন অসাধারণ বোলিং করছে, মাশরাফি ভাই তো আছেই। আমাদের দলে অনেক ভালো ভালো বোলার আছে। বোলিং সাইড থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক শক্তিশালী দল। ব্যাটসম্যানরাও তো প্রমাণ করতে শুরু করেছে। তামিম ভাই যেই ফর্মে আছে..! সাকিব ভাই রান পেতে শুরু করেছে। মুশফিক ভাই রানে ফিরলেই হয়। তামিম ভাই তো বলেছেনই মূলপর্বে চমক দেখানো ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ। আমি বিশ্বাস করি, সুপার টেনে চমকে দেবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে তো এশিয়া কাপেই হারালাম। আর ভারত এখন আমাদের ভয় পায়। এবার কাপ নেওয়ার সম্ভবনা আছে বাংলাদেশের। মনে হচ্ছে, সুপার টেনে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।
বাংলানিউজ: তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিটা তো দেখেছেন। তার বদলে যাওয়া নিশ্চিয়ই আপনারও চোখে পড়েছে?
রুবেল হোসেন: তামিম ভাইয়ের সেঞ্চুরিটা অসাধারণ লেগেছে। আমার চোখে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। একটা সময় কিন্তু তামিম ভাইয়ের খারাপ সময় যাচ্ছিলো। ওই সময়টায় হয়তো ভালোভাবে ফেরার পণ করেছিলেন! তিনি জানেন তার স্ট্রং জোন, আগের চেয়ে অনেক সেনসিবল হয়েছেন। তামিম ভাই এখন বুঝতে পারছেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলানিউজ: তাসকিন আহমেদের ডেলিভারিকে অবৈধ বলা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়াররা আইসিসির কাছে রিপোর্ট করেছেন। নিশ্চয়ই শুনেছেন?
রুবেল হোসেন: আমি কখনও ভাবি নাই, কেউ-ই ভাবেনি তাসকিন এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। আশ্চর্যজনক! আমি অবাকই হয়েছি। বোলিং পরীক্ষায় আশা করি খারাপ কিছু আসবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ