ঢাকা: ১৫২ বছরের পুরনো ক্রিকেটের স্বর্গোদ্যান কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২৫ বছর পর খেলতে নামছে বাংলাদেশ। বুধবার (১৬ মার্চ) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইডেনে খেলার দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরাবে বাংলাদেশের।
ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশ দল সর্বশেষ খেলেছিল ১৯৯০ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তখন বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এবার মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ইডেনে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। বর্তমান দলের প্রতিটা ক্রিকেটারই প্রথমবার (আন্তর্জাতিক ম্যাচে) নামবেন ইডেনের সবুজ চত্ত্বরে।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ইডেনে খেলার অভিজ্ঞতা হতে পারতো আরও দুই বছর আগে। ২০১৪ সালে ইডেন গার্ডেন্সের ১৫০তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে বিসিবি একাদশকে আমন্ত্রণ দেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঞ্চলের (সিএবি) প্রতিনিধি ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি। তবে অজানা এক কারণে ইডেনের পরিবর্তে পুরো টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার যাদবপুরে।
সেই ঘটনার জন্য কিছুটা হতাশা ছিল ক্রিকেটারদের মনে। সেই হতাশা ফুরাচ্ছে এবার। ইডেনে খেলার সেই দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ। ইডেনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) অনুশীলনও করেছে মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা।
ক্রিকেটের ‘তীর্থভূমি’ ইডেন গার্ডেন্সে ১৬ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর ২৬ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইডেনে আরও একটি ম্যাচ পাবে মাশরাফিবাহিনী। ০৩ এপ্রিলের ফাইনাল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে এ মাঠে। ফাইনালে উঠতে পারলে ইডেনে তিন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ভরা গ্যালারির সমর্থন থাকবে বাংলাদেশের দিকেই। আর পরের ম্যাচ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে। এমন দিনে বিশ্বকাপের মতো আসরে মাঠে নামা বাংলাদেশ যে বাড়তি উদ্যোম নিয়ে খেলবে সেটি বলাই যায়। টি-টোয়েন্টিতে পরিবর্তীত বাংলাদেশকে দেখছে বিশ্ব। বিশ্বকাপে টাইগারদের পারফরম্যান্সে হয়তো নতুনভাবে বাংলাদেশকে চিনবে ক্রিকেট বিশ্ব। পরিবর্তনের আরও একটি ধাপে বাংলাদেশ পৌঁছে যাক, যার শুরুটা হোক ইডেন থেকেই।
ইডেন গার্ডেন্স ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন স্টেডিয়াম। এই মাঠে ১৯১৭-১৮ সালে প্রথমবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৪ সালে গড়ায় প্রথম টেস্ট ম্যাচ। এই মাঠে প্রথম ওয়ানডে গড়ায় ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়।
ইডেনের কলঙ্ক: গৌরবগাঁথার সঙ্গে ইডেনের কলঙ্কও রয়েছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দর্শকদের বিশৃঙ্খল-উন্মত্ত আচরণে কলঙ্কের জন্ম নেয় ইডেনে। শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৫২ রানে টার্গেটের জবাব ভালোই দিচ্ছিলো ভারত। কিন্তু মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যখন ভারতের স্কোর বোর্ডের শোচণীয় হাল (১২০/৮) তখন শুরু হয় জনরোষ। স্টেডিয়ামের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন জ্বালানো শুরু হয়, মাঠের দিকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়া তো ছিলই!
ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড তাৎক্ষণিকভাবে দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে তুলে নেন। ১৫ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত মনে হওয়ায় আবারও মাঠে নামে দুই দল। কিন্তু এবার শুরু হয় বোতল বৃষ্টি। উপায় না দেখে খেলা বন্ধ করে দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দর্শকের এমন আচরণ ভারতের লজ্জার কারণ হয়েছিল দীর্ঘদিন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এসকে/আরএম