কলকাতা থেকে: ইডেন গার্ডেন ভারতের সব চাইতে পুরনো ও বড় স্টেডিয়ামের নাম। ভারতের কলকাতায় অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি দর্শক ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে মেলবোর্নের পরেই যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম।
৬৬ হাজার ৪শত ৩৯ জন দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে প্রায় ১৫২ বছর আগে ১৮৬৪ সালে। আর ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামটিতেই আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের মূল পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে মোকাবেলা করবে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
এটি ইডেনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ। এর আগে ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত এখানে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। তখন বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ওই ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে ৭১ রানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল লাল সবুজের দল।
১৮৬৪ সালে ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও প্রাথমিক অবস্থায় এটি ছিল ভারতের একটি পার্ক। ১৮৪১ সালে তদানিন্তন ভারতের বৃটিশ গভর্নর লর্ড অকল্যান্ডের বোন ইডেনের নামে পার্কটি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।
স্থাপত্যের বিচারে স্টেডিয়ামটির নান্দনিক সৌন্দর্য এক কথায় অতুলনীয়। বাইরে থেকে দেখলে যে কেউই ইডেন গার্ডেনকে একটি দৃষ্টিন্দন ক্রিকেট যাদুঘর বলে মনে করতে পারেন। সামনের মুল গেটের বাইরে রঙিন গ্লাসে সাদা কালো ছবিতে শোভা পাচ্ছে এই ইডেনেই বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বড় বড় ম্যাচগুলোর ঐতিহাসিক সব মুহুর্তের ছবি। তাছাড়া স্টেডিয়ামটির মুল গেট থেকে শুরু কর একবারে ১৪ নম্বর গেট পর্যন্ত টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে আইসিসিরি সাবেক সভাপতি জাগ মোহন ডালমিয়ার পোস্টারাকৃতির সব ছবি।
স্টেডিয়ামের মুল গেট দিয়ে ঢুকে তৃতীয় তলার প্রেস কনফারেন্স রুমের দিকে উঠতে সিড়িগুলো বেশ রাজকীয় স্টাইলে তরী করা। যে কেউই একে কোন পুরোণো রাজ প্রাসাদ বলে ভুল করতে পারেন।
এমন রাজ প্রাসাদ তুল্য সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তিন তলায় গেলে দেখা মিলবে প্রেস কনফারেন্স রুমের। তবে প্রেস কনফারেন্স রুমটি স্টেডিয়ামের প্রথম দর্শনের মত চমকপ্রদ নয়। কিছুটা সেকেলে ধরণের।
এখানে গণমাধ্যম কর্মীদের বসার জায়গা থেকে শুরু করে, মাল্টিমিডিয়া ব্যবস্থা ও আনুসাঙ্গিক সব কিছুই কেমন যেন ঘিঞ্জি।
শুধু প্রেস কনফারেন্স রুমই নয়। সেকেলে ধরণের খাঁড়া সিঁড়ি বেয়ে যাওয়া চারতলায় অবাস্থিত স্প্রেস বক্সটিও বেশ সকেলে, হয়তো ইডেনের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এখনও এমন আধুনিক ও সেকেলে করে রাখা হয়েছে।
এখানে আধুনিক বলার কারণ হলো প্রেস কনফারেন্স রুমের গণমাধ্যম কর্মীদের বসার চেয়ারগুলো কেননা এতটাই লাগোয়া যে যে কেউ দুই আসনের মাঝ পথ দিয়ে হাঁটতে গেলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা না হলে শরীরের সামান্য ছোয়াঁয় টেবিল থেকে পড়ে যেতে পারে প্রয়োজনের ল্যাপটপটি।
শুধু তাই নয়, ভারতের ধর্মশালা, বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুর কিংবা চট্টগ্রামের প্রেস বক্সের মত এখানে নেই কোণ গণমাধ্যম কর্মীদের চা, কফি কিংবা পানি পানের ব্যবস্থা। পানি রাখার জন্য দু পশে দুটি ফ্রিজ তা অচলাবস্থায় পড়ে আছে।
শুধু প্রেস বক্সই নয়, ইডেনের দর্শকদের বসার আসনটিও বেস নড়বড়ে। প্লাস্টিকের পুরনো ও আধপুরনো চেয়ারগুলো যেন যে কোন সময়ই ভেঙে পড়বে।
তবে যে বিষয়টি উল্লেখ করার মত সেটি হল, মুল মাঠের চাইতে দর্শকদের জন্য যে জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে তার বিশালতায় মুগ্ধ হবেন যে কেউই, যা শতাব্দীর শতাব্দী ধরে রেখেছে ইডেনের ঐতিহ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
বিএস
** জয়ের ধারায় থাকতে চায় বাংলাদেশ