ঢাকা: ‘১৯ মার্চ’ তারিখটিই যেন বিতকির্ত হয়ে রইলো ক্রিকেটে। বাংলাদেশের জন্য তো বটেই।
২০১৫ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মেলবোর্নে আম্পায়ারদের বিতর্কিত ‘নো বল’ সিদ্ধান্তের কারণে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মাশরাফিবাহিনীর। সেদিন প্রতিপক্ষ ছিলো ক্রিকেটের এক ‘মোড়ল’ ভারত। দেশ-বিদেশের কোটি টাইগারভক্তের চোখে সেদিন ঝরেছিল অশ্রু। সমালোচনার ঝড় বয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মেলবোর্নে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে সেদিন প্রযুক্তির যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি আইসিসি। এসব কারণ থেকে সৃষ্ট অসন্তোষে শেষ পর্যন্ত আইসিসি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ক্ষত এখনও পোড়ায় কোটি টাইগারভক্তকে।
১৯ মার্চের বিতর্কিত সে ম্যাচের ক্ষত না শুকাতেই আইসিসি যেন একইভাবে ‘এক বছর পূর্তি উদযাপন’ করলো। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ এলো বিতর্কিত আরেক দুঃসংবাদ। এবার ম্যাচে হার নয়, টাইগারদের বিশ্বকাপ দল হারালো ইনফর্ম বোলার তাসকিন ও সানিকে।
আইসিসির হঠকারি সিদ্ধান্তে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ।
হঠকারি সিদ্ধান্ত বলা হচ্ছে কারণ, তাসকিনের রিপোর্টের সঙ্গে আইসিসির সিদ্ধান্তের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে ম্যাচে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়াররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেই ম্যাচে তাসকিনের কোনো নির্দিষ্ট ডেলিভারির কথা তারা সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করেননি। কিন্তু তাকে অবৈধ বলা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ডেলিভারির জন্য।
রিপোর্টে বলা আছে, তাসকিনের শুধু বাউন্সারে সমস্যা ছিলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যে ম্যাচে তাসকিনের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করা হয়েছিল সেই ম্যাচে তিনি কোনো বাউন্সারই দেননি! চেন্নাইতে মাত্র ৩ মিনিটে ৯টি বাউন্স দিতে বলা হয় তাকে। যেখানে তিনটিতে সমস্যা ধরা পড়ে বলের গতি কম হয়ে যাওয়ার কারণে।
তাসকিনের দেওয়া স্পট ডেলিভারি ও ইয়র্কারেও কোনো সমস্যা পাননি বায়োম্যাকানিক্যাল পরীক্ষকরা।
বোলিং অ্যাকশন ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আইনজীবী হিসেবে কাজ করা মুস্তাফিজুর রহমান খানের মতে, পরীক্ষার রিপোর্ট ও আইসিসির ধারা অনুযায়ী তাসকিনকে সর্বোচ্চ সতর্ক করা যেতো, কিন্তু এই উল্টো নিষেধাজ্ঞা নিছক ‘ফাইজলামি’।
ঘটনার পর এক ফেসবুক পোস্টে নিতি লিখেছেন, যে ম্যাচে তাসকিন রিপোর্টেড হন, সে ম্যাচে তিনি কোনো বাউন্সার দেননি বিধায় প্রটোকল অনুযায়ী ল্যাবে তার এই ধরনের বলের পরীক্ষা করার কথা নয়। তবু তা করা হয়েছে। তাছাড়া, অফিসিয়ালরা তাসকিনের যে লেংথ বল আর ইয়র্কারের অ্যাকশন নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, ল্যাবে সেটা স্পষ্টই বৈধ প্রমাণ হয়েছে।
এছাড়া কোনো বিশেষ ডেলিভারিতে সন্দেহজনক কিছু থাকলে আইসিসির ধারা অনুযায়ীই সেই নির্দিষ্ট ডেলিভারির (স্টক ডেলিভারি ছাড়া) ব্যাপারে বোলারকে সতর্ক করা হতে পারে, ওই ডেলিভারি দিলে দ্বিতীয়বার রিপোর্টের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। সুতরাং তাসকিনের যেহেতু স্টক ডেলিভারি বৈধ প্রমাণ হয়েছে এবং তার ৯টি বাউন্সারের মধ্যে ৩টি বাউন্ডার ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আইসিসিরই নিয়ম অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ সতর্ক করা যেতো, কিন্তু কোনোভাবেই সাসপেন্ড নয়। এরমাধ্যমে আইসিসি নিজের আইনই ভেঙেছে।
বিসিবির এ আইনজীবী স্পষ্ট করে বলেন, তাসকিন অবিচারের শিকার। আমি বিসিবিকে ধারাগুলো নির্দিষ্ট করে এর আওতায় সংশ্লিষ্ট কোর্টে রিভিউ করার পরামর্শ দিয়েছি।
বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে এবার বাংলাদেশের দুই বোলারকে ছেঁটে ফেলাকেও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই দেখছেন টাইগারভক্তরা। তাদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের মাটিতে এসে ক্রিকেটের ‘মোড়লরা’ রীতিমতো নাকানিচুবানি খাওয়ার পর নিজ দেশের মাটিতেও টাইগারদের নিরাপদ ভাবতে পারছে না। তাই এ ‘ষড়যন্ত্র’।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
এসকে/এএ