মহিশুর এক্সপ্রেস থেকে: পরদিন সকাল বেলা আধো ঘুমের আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতেই দেখি, ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। সেই রামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমরা কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘বিজয়ওয়াড়া’।
বুঝলাম, দু’টি প্রদেশ পার করে তৃতীয়টিতে প্রবেশ করলাম। এটি পার হলেই পরেরটি তামিলনাড়ু, যেখানে আমাদের গন্তব্য। ট্রেন থেকে নেমে স্থানীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘অন্ধ্রপ্রদেশ পার হতে কতক্ষণ লাগবে?’ উত্তরে তারা যা বললেন, তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। ‘১৪ ঘণ্টা লাগবে।
বেঙ্গালুরু যেতে যতোগুলো প্রদেশ পথে পড়বে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এই অন্ধ্রপ্রদেশ!’
১৫ মিনিটের বিরতির পর আমাদের মহিশুর এক্সপ্রেস আবার লম্বা হুইসেল দিয়ে মাটি দাপিয়ে ছুটে চললো। বাইরে তাকিয়ে দেখি, রেললাইনের দুই পাড়ের কৃষিজমিতে যতোদূর চোখ যায়, শুধু ভুট্টা আর ভুট্টার ক্ষেত। সকাল বেলার রোদে সবুজ রঙের ভুট্টা ক্ষেত কী যে অপরূপ!
ভুট্টা ক্ষেতই নয়, আছে বিস্তীর্ণ আমের বাগান। সারি সারি তালগাছগুলো মাথা উঁচু করে যেন ট্রেনের যাত্রীদের অন্ধ্রপ্রদেশে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। আর লাল-সবুজ রঙের পাহাড়গুলো আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাড়তি মোহনীয়তা। পাশাপাশি সারি সারি নারকেল গাছের সবুজ পাতা দেখে মনে হচ্ছে যেন, বাতাসের দোলায় চুল ছেড়ে দিয়েছে। আর এলোমেলো বাতাস তাদের সেই খোলা চুল নিয়ে সৃষ্টি করছে তরঙ্গ যা আছড়ে পড়ছে আমাদের এই মহিশুর এক্সপ্রেসের প্রত্যেক যাত্রীর ওপর।
কিছুক্ষণ পর পরই চোখে পড়ছে মহিষের পাল ও গম্বুজাকৃতির খড়ের গাদা। আরও রয়েছে হলুদ গাঁদা ফুলের বিস্তীর্ণ এক একটি ক্ষেত। পাশাপাশি ‘গোদবিরী’ আর ‘কৃষ্ণা’র নীল পানি আমাদের চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে।
বাইরের এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপশি ট্রেনের ভেতরে আমাদের কম্পার্টমেন্টে আছেন সুমন নামে এক মজার মানুষ। তিনি নিজেকে বান্দরবানের ছেলে আর সুন্দরবনের জামাই বলে পরিচয় দিয়েছেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের বান্দরবানে, আর বিয়ে করেছেন খুলনার দৌলতপুরে। যাত্রাপথে তার মজার মজার কৌতুক আর গান শুনে ভ্রমণের ক্লান্তি লাঘব হয়ে যাচ্ছিলো।
ট্রেনের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে গরম বাতাসের ছোঁয়া লাগছে। তাপমাত্রা তখন ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস! আর এমন রুক্ষতার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে গোধূলি বেলায় আমাদের ট্রেন এসে থামলো তামিলনাড়ুর রেনিগুনতা স্টেশনে। সেখানে যাত্রাবিরতি ছিলো ১৫ মিনিট। বিরতির ফাঁকে ট্রেন থেকে চোখে পড়ছিলো সারি সারি পাহাড়ের আড়ালে সূর্যের অস্ত যাওয়া।
মাত্র কয়েকটি মুহূর্ত পরেই তামিলনাড়ু জুড়ে নেমে এল অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারের মধ্যে আবার আমাদের ছুটে চলা।
এখান থেকে আবার একটানা ছয় ঘণ্টা চলার পর আমরা এসে পৌঁছালাম বেঙ্গালুরু সিটি রেলওয়ে স্টেশনে। স্টেশন থেকে আমাদের হোটেলের দূরত্ব ট্যাক্সিতে ১৫ মিনিট। ট্যাক্সিতে চেপে হোটেলে পৌঁছে গন্তব্য ছোঁয়ার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
এটি/এএসআর
** পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা-অন্ধ্রপ্রদেশ-ব্যাঙ্গালুরু