ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অজিদের হারিয়েই সব বিতর্কের জবাব

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
অজিদের হারিয়েই সব বিতর্কের জবাব

ঢাকা: সংবাদ সম্মেলনে (রোববার-২০ মার্চ) আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কেঁদেই ফেলেছিলেন।

আক্ষেপ একটাই- কেন এমন হলো! এতো স্রেফ অবিচার, কেবলই বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস। প্রতিবাদ জানাতে ভুল করেননি অধিনায়ক, সরাসরি বলেছেন, এই অধিনায়কত্বের কী-ই বা মূল্য আছে যদি না এই তরুণ ছেলেদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু করতে না পারি তো! আমরা তো চলে যাবো- যারা আগামী ১০/১৫ বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলকে সার্ভিস দেবে তাদের দুঃসময়ে অধিনায়ক হিসেবে কিছু করতে চাই।

নিশ্চয়ই কিছু করবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাসকিন-সানি যে অবিচারের শিকার তাও যেমন দেশবাসী জানেন, ঠিক তেমনি এই অবিচারের জবাব যে ‘ফাইটার’ ম্যাশ ভালো করেই দিতে জানেন এটিও কোটি বাঙালির অজানা নয়।

একে তো বাংলাদেশ এখন আহত বাঘের মতো বেদনায় ক্ষত-বিক্ষত। সুযোগ বুঝে তাই থাবার অপেক্ষায়। অন্যদিকে বিশ্বকাপে বাঁচা-মরার লড়াই তাদের। সে জন্যই হয়ত একটু বেশিই সতর্কতা বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সোমবারের (২১ মার্চ) ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সে সুযোগই কাজে লাগতে মরিয়া মাশরাফি বাহিনী।

খেলার আগে অবশ্য কয়েকটি বিষয় মনে পড়ার কথা ম্যাশের। তা হলো কার্ডিফ স্মৃতি। ২০০৫ সালের পর আর কখনই অজি বধ করতে সক্ষম হয়নি টাইগাররা। এবার সে সুযোগও বাংলাদেশের সামনে।

ম্যাচের আগে আরেকটি বিষয়কে সামনে তুলে আনা যায়, তা হলো- গত ২০১৫ সালে স্রেফ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসেনি টিম অস্ট্রেলিয়া। এরপর নারী বিশ্বকাপও বয়কট করে তারা। এতে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ভাবমূর্তি অনেকটা সংকটে পড়ে। হারিয়েই হয়ত সে সমীকরণের জবাবও দিতে চাইবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার ওপর আবার এই ম্যাচটি মাশরাফির জন্য ৫০তম নেতৃত্বের। সব ফরমেটের খেলায় এটি ম্যাশের নেতৃত্বের ৫০তম ম্যাচ।

অতীত বলে বাংলাদেশ দুঃসময়ে সব সময় জেগে উঠতে বদ্ধপরিকর। আর যে দলের অধিনায়ক চির ফাইটার তাদের আর চিন্তা কিসে! এছাড়া দলে তো রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আরও আছেন তামিম, সাব্বির, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক, আল-আমিন ও ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা ‘দ্য ক্যাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ।  

এদিকে তাসকিনের বোলিং নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভটা আরও বেড়েছে। এ নিয়ে সরাসরি রিভিউয়ের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি। জানা যায়, খেলতে না পারলেও তার আগ পর্যন্ত ভারতেই থাকছেন তিনি।

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান সোমবার (২১ মার্চ) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মধ্য দিয়ে নিজের ৫২তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন। গত ৫১ ম্যাচে সাকিব করেছেন ১ হাজার ৪৬ রান। ‘সুপার সাকিব’ গত ম্যাচেই (পাকিস্তানের বিপক্ষে) দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে হাজার রানের ক্লাবে ঢুকেছেন। সে ম্যাচে সাকিব খেলেন অসাধারণ ৫০ রানের একটি ইনিংস। এই ছোট ফরম্যাটে সাকিবের স্ট্রাইক রেটও দারুণ- ১২২ দশমিক ৩৩।

শুরুর দিকে অর্থাৎ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ব্যাট হাতে সাকিব তেমন ধারাবাহিকভাবে জ্বলে না উঠতে পারলেও বল হাতে কিন্তু ঠিকই নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ব্যাট হাতেও ওমান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচে জ্বলে ওঠেন তিনি।

এছাড়া বর্তমানে আইসিসি টি-২০ শীর্ষ বোলারদের তালিকায় সাকিব উঠে এসেছেন বিশ্বের আট নম্বর বোলারে।

তামিম ইকবাল
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবাল শেষ ১১টি টি-টোয়েন্টি খেলে করেছেন ৪৩৯ রান। যার মধ্যে দুবাই-শারজাহতে পাকিস্তানের প্রিমিয়ার লিগও রয়েছে। তার শেষ এগারো ম্যাচের গড় ৪৪.৮১! দারুণ এক ফর্মে রয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হতেই পারে আরেকটি ‘তামিম তাণ্ডব’। ২০১৬ বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি তার জন্য বার্তি অনুপ্রেরণা হতেই পারে।

সাব্বির রহমান
এ বছর টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত শীর্ষ তিন রান সংগ্রাহকের তালিকায় থাকা বাংলাদেশের সাব্বির রহমান যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা তার ব্যাটিং না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন না।

ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই ভার্সনে ভারতের বাঘা-বাঘা ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলে ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছেন এই হার্ড হিটার। তামিম ইকবাল যেমন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় ব্যাটিং করে যাচ্ছেন ঠিক তেমনি সাব্বিরও ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে নেমে দিয়ে যাচ্ছেন ধারাবাহিকতার অনন্য নিদর্শন। এ বছর মোট ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩১ দশমিক ৭৬ গড়ে ৪১৩ রান করেছেন সাব্বির রহমান।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেন এক ভরসার নাম। অজিদের বধে তিনিও হয়ে উঠতে পারেন নায়ক। যেমনটা তিনি করেছিলেন গত বছর-২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। সেবার এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পর পর দু’টি সেঞ্চুরি করেন। বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যান এক নতুন উচ্চতায়।

টি-টোয়েন্টিতে শেষ দিকের পাওয়ার হিটার হিসেবে নির্বাচকদের ভরসার নাম মাহমুদুল্লাহ। তার ঝড়ো এবং পাওয়ার হিটে বিশ্বমঞ্চে টাইগারদের দারুণ কাম-ব্যাক হতেই পারে। পাশাপাশি হাত ঘুরাতেও কার্যকরী এই অফব্রেক বলার। এ পর্যন্ত ৫০ টি-টোয়েন্টিতে রিয়াদের রান ৬১৪ আর বল হাতে নিয়েছেন ২০ উইকেট।

দ্য কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর
ইনজুরি কাটিয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলবেন মুস্তাফিজুর রহমান। তাসকিনকে হারালেও কাটার মাস্টারের অন্তর্ভুক্তি বাড়তি শক্তি টিম বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে সেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটার হয়েছেন মুস্তাফিজ। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলা ক্যারিয়ারের ১০ টি-টোয়েন্টিতে তার সংগ্রহ ১৩ উইকেট। বোলিং গড়ও ভালো- ৫ দশমিক ৬১। তার কাটারে কাবু হতেই পারে অজি ব্যাটসম্যানরা।

আল-আমিন হোসেন
আল-আমিন টি-২০ শীর্ষ বোলারের তালিকায় উঠে এসেছেন ছয় নম্বরে। শেষ ১১টি ম্যাচে ৯টিতে বোলিং করে আল-আমিন নিয়েছেন ১৭টি উইকেট। ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের গতি দিয়ে ঘায়েল করে উইকেট তুলে নিতে পটু এই পেসার। ভূষিত হয়েছেন বিশ্ব একাদশের ক্রিকেটার হিসেবেও।

এছাড়া ফর্মহীনতায় ভোগা মুশফিক, সৌম্য সরকারও জ্বলে উঠতে প্রস্তুত। অতীত বলে, নিজেদের দিনে তারাও কম ভয়ানক নয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্রই খুঁজে পাচ্ছেন কোটি বাংলাদেশি। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ মাশরাফির অধিনায়কত্বে দারুণ খেলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই শুরু হয় নানাভাবে বিতর্কিত করার নগ্ন অপপ্রয়াস। যার দায় তিন মোড়লের বলেও মন্তব্য উঠে এসেছে। এক মোড়লকে পাওয়া গেছে বাঘের ডেরায়, বধ করেই না হোক সব বিতর্কের জবাব দেওয়া...। বাকিটা ম্যাচের পরেই হচ্ছে পরিষ্কার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
আইএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।