ময়মনসিংহ: ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে গিয়ে সেমিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা।
ক্যাচ মিসের মহড়া ও দুর্বল ফিল্ডিং নিয়ে আক্ষেপের সঙ্গে যোগ হয়েছে আবারো মাহামুদুল্লাহ’র কম বল খেলার সুযোগ।
ক্রিকেট সংস্কৃতির অন্যতম সূতিকাগার ময়মনসিংহের ছেলে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের দলের দুঃসময়ে মারকুটে দুর্দান্ত ইনিংসের বন্দনায় মেতে ওঠে তার এলাকার ক্রিকেটপ্রেমী ও ভক্তরা। শুধু নগরেই এ উচ্ছ্বাস নয়। প্রত্যন্ত গ্রামেও মাহামুদুল্লাহ’র মারমার-কাটকাট ব্যাটিংশৈলী রাজ্যের হতাশার মধ্যেও বেদনাবোধ ভুলিয়ে দিয়েছে ভক্ত-সমর্থকদের।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাতে ময়মনসিংহ নগর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া, দেওখোলাসহ বিভিন্ন বাজারে অবস্থান করে দেখা গেলো এমন চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হাইভোল্টেজ এ ম্যাচ নিয়ে মাতামাতির বেলায় ময়মনসিংহ নগরী থেকে একটুও পিছিয়ে ছিলো না গ্রামের সহজ-সরল ক্রিকেটপ্রেমী ও ভক্তরা।
সেই উত্তাপই আঁচ করা গেলো গ্রামের এসব পয়েন্টে ঘুরে ঘুরে। গ্রামের চায়ের স্টলগুলোতে নির্বাচনের আলাপের চেয়েও ঢের সরগরম ক্রিকেট প্রসঙ্গ।
উপজেলার ৪০ নম্বর জোরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই ছোটখাটো একটি বাজার। এখানকার প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানেই আছে রঙিন টেলিভিশন।
এসব দোকানে দলবেঁধে একসঙ্গে বিগ ম্যাচ দেখার আনন্দই আলাদা, জানালেন ক্রিকেট প্রেমীরা।
চার, ছক্কা হলেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা, উল্লাসে ফেটে পড়া। এমন উৎসাহে বাড়তি মাত্রা যোগ করে নিজেদের ঘরের ছেলে মাহামুদুল্লাহ’র টপ গিয়ার ইনিংস খেলা।
টিভি সেট থেকে দু’এক গজ দূরে বসে খেলা দেখছেন জয়নাল আবেদিন। ৩৫’র মতো বয়স তার। সবার মতো তার দৃষ্টি নিবদ্ধ টিভি পর্দায়। ‘মাহামুদুল্লাহ তো আমগরই পোলা। ওর খেলায় বেকেই (সবাই) খুশি। ও মানেই মারমার-কাটকাট ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ারেও ছাড় দেয় নাই। ২৯ বলে করছে হার না মানা ৪৯ রান। ওর লেইগ্যাই আইজ অস্ট্রেলিয়ার খেইল্লা জিতুন লাগছে। এইল্লেইগ্যা ঠকলেও কষ্ট লাগতাছে না। ’
মাহামুদুল্লাহ কম বল খেলার সুযোগ পাচ্ছে। বল গুণে খেলার পাশাপাশি দলকেও কিভাবে টেনে নিয়ে যেতে হয় এটা ভালোই জানেন। ছেলেটা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। ওর হাফ সেঞ্চুরি হলে আরো ভালে লাগতো- জয়নালের সঙ্গে যোগ করেন পাশে বসা ইব্রাহিম খলিল।
বয়স চল্লিশের কোটায়। স্থানীয় একটি বাসের সুপারভাইজারের কাজ করেন। বাংলাদেশের ম্যাচ থাকায় আর কাজে যাননি। সন্ধ্যা থেকেই সবার সঙ্গে বাজারে বসে খেলা দেখতে শুরু করেন।
দীর্ঘ বিরতির পর টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়েও নিজের নামের সঙ্গে মোটেও সুবিচার করতে পারেননি ময়মনসিংহের আরেক ছেলে শুভাগত হোম। দলের ১২ তম ওভারে পর পর দু’বলে ছক্কা-চার হাঁকানোর পর নিজের ইনিংস দীর্ঘ করতে পারেননি।
ময়মনসিংহের মাহামুদুল্লাহ’র মতো শুভাগতও বোলারদের শাসন করতে পারলে দলের সংগ্রহটা আরেকটু লম্বা হতো। অস্ট্রেলিয়াকেও পরাজয় মেনেই মাঠ ছাড়তে হতো, অন্যদের।
মাহামুদুল্লাহ’র ধারাবাহিক ও অনবদ্য পারফরম্যান্সে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেটপাগল গ্রামের মানুষেরা। মোফাজ্জলের এ চায়ের দোকানে বসে সবাই যখন মন্তব্য করছিলেন তখন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন সোলায়মান নামের আরেকজন।
এবার বোধ হয় আর চুপ থাকতে পারলেন না। একগাল হেসেই বললেন, ‘আরে ভাই লিখেন। মাহামুদুল্লাই আমগর রান মেশিন। আর ৫টা বল বেশি খেলতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার খবর ছিলো। সাবাস ময়মনসিংহের পোলা। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
এটি