ঢাকা: বিশ্ব ক্রিকেট জানে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। টাইগারদের বদলে দেওয়ার পেছনে মূল কাজটি একজন নেতা হিসেবেই করেছেন ম্যাশ।
জাদুকরী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছেন মাশরাফি। তার আশ্চর্য নেতৃত্বগুণ পুরো দলকে উজ্জীবিত করে তোলে এটা প্রমাণ হয়েছে বার বার। দলের জন্য খেলেন নিজের সর্বস্ব উজাড় করে।
মাশরাফির নেতৃত্বেই গত দেড়-দুই বছর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সময় পার করছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাশের অসাধারণ নেতৃত্বে খেলেছে টাইগাররা। দেশের মাটিতে ভারত, পাকিস্তান,দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েকে সিরিজ হারিয়েছে লাল-সবুজরা। এশিয়া কাপের আসরেও নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি তার দলকে ফাইনালের মঞ্চে তুলেছিলেন।
চলতি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন করে বাংলাদেশকে মূলপর্বে তুলেছেন মাশরাফি। তবে, সুপার টেনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে নামার আগে দুই সেরা বোলার তাসকিন এবং সানিকে হারিয়ে বেশ হতাশ হন ম্যাশ। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন বারবার কান্না থামিয়ে কথা বলেছিলেন টাইগার দলপতি। সংবাদ সম্মেলন শেষে কক্ষ থেকে বের হয়ে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি। মিরপুরে যেমনটি তিনি কেঁদেছিলেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের স্কোয়াড়ে জায়গা না পেয়ে। ইনজুরির কারণ দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয় তাকে। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারির মিরপুর একাডেমি মাঠে সেদিন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদেছিলেন মাশরাফি।
অজিদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে জয়ের আশ্বাস দেওয়া মাশরাফি জানিয়েছিলেন, ‘তাসকিন-সানিকে হারিয়ে দলের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। স্কোয়াডের সবাই হতাশ। সবারই মন ভেঙে গেছে। তাসকিন-সানির মতো বোলারকে নিষিদ্ধ করাটা অধিনায়ক হিসেবে মেনে নিতে পারছিনা। তাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে কেমন অধিনায়ক হলাম আমি? ব্যক্তিগত ভাবে আমি হতাশ। ’
সেটিই কি তাহলে মাঠে প্রকাশ পেয়েছিল মাশরাফির নেতৃত্বে?
গাভাস্কার মাশরাফির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান, দলে মাশরাফির ভূমিকা কি? অজিদের বিপক্ষে সে একটি ওভার বল করেছে। ব্যাট করার প্রয়োজন হয়নি তার। তাহলে সে দলে কেন? অধিনায়কত্ব? ঠিক আছে, কিন্তু সে সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।
টাইগারদের দলপতিকে নিয়ে এমন সমালোচনায় মেতে উঠা গাভাস্কার ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে কতটুকু সফল ছিলেন তা দেখে নেওয়া যাক।
ভারতকে সাদা পোশাকে গাভাস্কার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৪৭ ম্যাচ। যেখানে তার অধীনে দল জিতেছে ৯ বার আর হেরেছে ৮ বার। বাকি ৩০ টি ম্যাচ ড্র করে ভারত। টেস্টে গাভাস্কারের অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের হার শতকরা ১৯.১৪। মাশরাফি ইনজুরির কারণে টেস্টে খুব একটা ম্যাচ খেলেননি। তবে, টাইগারদের সাদা পোশাকের একটি ম্যাচেই নেতৃত্ব দিয়ে সেই ম্যাচে জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন ম্যাশ।
ওয়ানডেতে গাভাস্কার ৩৭ ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জেতাতে পেরেছিলেন ১৪ ম্যাচে। আর তার নেতৃত্বে ভারত হেরেছিল ২১টি ম্যাচে। বাকি দুইটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি। যেখানে তার সাফল্যের হার শতকরা ৪০। পক্ষান্তরে মাশরাফি ওয়ানডেতে টাইগারদের ২৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতে লাল-সবুজরা জিতেছে ২০ ম্যাচে আর হেরেছে মাত্র ৮টি ম্যাচে। এখানে ম্যাশের সফলতার হার শতকরা ৭১.৪২। টাইগারদের ২১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাশরাফি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মাঝে ৯টি ম্যাচেই শেষ হাসি বাংলাদেশের। মাশরাফির অধীনে ১১টি ম্যাচ হারলেও ম্যাশের সফলতার হার শতকরা ৪৫ (একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত)।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, ২২ মার্চ ২০১৬
এমআর