ঢাকা: হিসাব কষলে নিশ্চিত বিবর্ণ হতে হবে ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের। দু’দেশের ক্রিকেটীয় হিসাব মতে, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে ঢের।
এই ১৯ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের উত্থানের ক্রমিক পরিসংখ্যানে জয়, সেঞ্চুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলেছে টাইগাররা।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও দারুণ এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপসহ ১৮টি ওয়ানডে খেলে যেখানে ১৩টিই জিতেছে টাইগাররা, সেখানে আরও পাঁচটি বেশি খেলা ভারতেরও জয় সমানসংখ্যক। এরমধ্যে টাইগারদের নিজেদের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে বধের খবর সবার জানা।
২০১৫ সালে ওয়ানডেতে জয়ের পরিসংখ্যানে অস্ট্রেলিয়ার পরেই সাফল্যের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো বাংলাদেশ। তবে, এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ানডে খেলা হয়নি টাইগারদের।
সবশেষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে ক্রিকেটীয় মহলে চাউর ছিলো বোধহয় টাইগারদের ঠেকাতেই এ ফরম্যাট! কিন্তু সেখানেও পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল খেলেছে সবসময় আইসিসির ‘শূলে চড়া’ বাংলাদেশ। ‘বাঘেরা জবাব বাঘের মতোই দেয়’- টাইগারভক্তদের মন্তব্য ছিলো এমন। এরপর ফাইনালে ভারতের কাছে হারলেও ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টিতে বাছাইপর্বের সব ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে বুকে কাঁপুনি ধরায় ‘ধামাধরা আইসিসি’র তিন মড়লের দুই- অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের। এ কারণেই নিয়মিত পারফর্ম করা টাইগার ‘গতিদানব’ তাসকিন ও ‘ঘূর্ণি জাদুকর’ সানির ওপর নেমে আসে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়্গ। ভক্তদের দাবি এমনই।
আর যদি নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়, তাহলে আইসিসি যে নিজেদের আইনই ভঙ্গ করেছে- সেটা এখন আর বালিচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। ইয়ান চ্যাপেল, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতারদের মতো গ্রেটরা তো এরইমধ্যে বলে দিয়েছেন ‘আইসিসির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ওপর অবিচার’।
বাঘকে দমন, নিপীড়ন করতে গেলে সে আরও জোরে হুঙ্কার ছেড়ে বুক কাঁপায়। মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুস্তাফিজদের অবস্থাও এখন তাই। তাসকিনের না থাকলেও মুস্তাফিজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেভাবে ফুঁসে উঠেছিলেন, সাকিব যেভাবে দেখিয়েছেন ভেলকি, তাতে বুক দুরু দুরু কোহলি, রহিত, ধোনি, যুবরাজদের।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মোটেই অশ্বিন-ধোনির মতো নেহরার ঔদ্ধত্য উক্তি শোনা গেলো না। বরং টাইগারদের সমীহ আর প্রশংসা ঝরলো তার কণ্ঠে।
সংবাদ সম্মেলনে নেহরা বলছিলেন, তাসকিনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কোনো সন্দেহ নেই ওদের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ বোলার ছিল; কিন্তু মুস্তাফিজ কয়েক ম্যাচ খেলেনি সাইড স্ট্রেইন নিয়ে, ও ফিরে এসেছে। আল আমিন আছে, সাকিব আল হাসান তো দারুণ অলরাউন্ডার। বোলিং গভীরতা ওদের অনেক। আমার মনে হয় না ২-১ জন বোলার না থাকায় ওদের বোলিং দুর্বল হয়েছে।
নেহরার কণ্ঠে মুস্তাফিজকে নিয়ে ছিল উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। তিনি বলেন, আমি মনে করি, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুস্তাফিজ দারুণ। বিশেষ করে যে স্লোয়ার ডেলিভারি সে করে। ঈশ্বর প্রদত্ত এটি স্লোয়ার বল পেয়েছে সে। অ্যাকশনও দারুণ। সে দারুণ সম্ভাবনাময় এক ক্রিকেটার, বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে শুধু ফিল্ডিং আর বোলিংয়ে সামান্য ভুল না হলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো। ‘তাসকিন ধাক্কা’ সামলে অনেকটা গোছানো লাগছিলো দলকে। বুধবার (২৩ মার্চ) রাতে বেঙ্গালুরুর চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে চেনা ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা। সুপার টেন পর্বের ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি হচ্ছে তাদের। সেই ধারাবাহিকতায় টাইগারদের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করছে ভারত।
তবে, টাইগাররা যদি আজ জিতে যায়, টুর্নামেন্ট থেকে ভারতেরও ছিটকে পড়াটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ‘তাসকিন-সানি ইস্যুতে আইসিসির কলকাঠির পরিচালক’ ভারতকে বিদায় করে দেওয়াটাই ‘বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়’ বলে ভেবে নেবেন ক্রিকেটভক্তরা। সেই ভাবনা থেকেই তাদের প্রত্যাশা, টাইগাররা আজ জিতবেই!
আরও ভারতের বিপক্ষের ম্যাচের আগে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম তো সাফ বলেই দিলেন কোটি বাঙালির কথা, ‘দলকে যারা দিনের পর দিন সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ। এখন হয়তো সময়টা ভালো যাচ্ছে না ... কিন্তু বাংলাদেশ আবার নিজের রূপে ফিরে আসবেই। চলো বাংলাদেশ! দোয়া করবেন আজকের ম্যাচের জন্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এএ/এইচএ