খুলনা থেকে: শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের ইনডোরের দরজায়, ভেন্যু ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার কচির সঙ্গে আড্ডারত নুরুল হাসান সোহান। কালো রংয়ের টি-শার্টে মুখটা যেন আরও উজ্জল হয়ে উঠেছে।
বিশ্বকাপ দলের সদস্য সোহানকে কাছে পেয়ে সেই হতাশার কথা শুনিয়ে হালকা হচ্ছেন আব্দুস সাত্তার। সোহান কেবল শুনছেন। সঙ্গে দাড়িয়ে ইনডোর দেখাশোনা করেন এমন কয়েকজন। তারা শুনছেন আর মাঝে মাঝে তিন-চার শব্দে কিছু বলে দর্শকদের কষ্ট বোঝাতে চেয়েছেন। ক্রিকেটাররা তাহলে কত কষ্ট পেয়েছেন? ওই দিন হোটেলের সামনে একটা জায়গায় বসে নাকি সারা রাত কাটিয়েছে বাংলাদেশ, পায়চারি করেছে। সারা রাত কেউ রুমে গিয়ে ঘুমাতে পারেননি। ওই হার এতটাই আঘাত দিয়েছিল টাইগারদের।
বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। সোহানের সঙ্গে এবার আমার কথা শুরু। দেখছি সবার সাথে মিশছেন, গ্রাউন্ডসম্যানদের সঙ্গেও আপানার ভালো বন্ধুত্ব। জাতীয় দলের ক্রিকেটার বলে কি তারা এখন মূল্যয়নটা বেশী করে? উত্তরে সোহান, ‘ক্রিকেটার হিসেবে এখানে মূল্যয়ন আমি আশা করি না। চাইও না। সবার ভালোবাসা নরমালি পেতে চাই। ’
সোহানের সাথে খোলা মনেই কথা বলছেন সবাই। সবার কাছেই খুব আদরের পাত্র। তাইতো বিশ্বকাপের ম্যাচে তাকে খেলানো হয়নি বলে আফসোস শুভাকাঙ্খীদের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠ খুলনায় টি-টোয়েন্টির ৫০তম খেলোয়াড় হিসেবে সোহানের অভিষেক। মিরপুরে এশিয়া কাপেও ম্যাচ পেয়েছিলেন। তবে বিশ্বকাপটা কেটেছে ড্রেসিংরুমে। বাছাইপর্ব ও সুপার টেন মিলিয়ে বাংলাদেশ দল ম্যাচ খেলেছে ৭টি। কিন্তু সোহানের জায়গা হয়নি একটি ম্যাচেও। দলের সঙ্গে এ ভেন্যু, ও ভেন্যু করেই কেটেছে পুরো বিশ্বকাপ। তাই বলে আফসোস বয়ে বেড়াচ্ছেন সোহান? মোটেও না।
বিশ্বকাপে খেলতে না পারার প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘অজানা অনেক কিছু জানা যায়, স্কিল সম্পর্কে আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। টিমের সাথে এতগুলো দিন এক সাথে ছিলাম। এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগানোর সুযোগ থাকবে সামনে। শেখার তো আসলে কোনো শেষ নাই। বলতে পারেন শুরু হলো এটা…। ’
ক্রীড়া পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সোহান। বাবা নাসিবুল হাসান সান্নু ছিলেন ফুটবলার। দীর্ঘদিন খেলেছেন প্রিমিয়ার লিগ। সোহানের দাদু (বাবার মামা) জসীমউদ্দিন জসি খেলেছেন মোহামেডান, আরামবাগের মতো ক্লাবে। সোহান বলেন, ‘আমার পরিবারের আরও অনেক সদস্য খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। ওখান থেকেই উৎসাহ পাওয়া। ছোটবেলায় বাড়ির সামনে টেনিস বলে খেলা হতো। আমি সবসময় দাঁড়াতাম উইকেটের পেছনে। কিপিং করতে খুব উপভোগ করি। ’
২০০৫ সালে ক্রিকেট শুরু এরপর বয়সভিত্তিক দল অনূর্ধ্ব ১৩, ১৫, ১৭, ১৯ ও একাডেমি দল হয়ে সোজা জাতীয় দলে সোহান, ‘ যখন প্রফেশনালি খেলা শুরু করেছি তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল ন্যাশনাল টিমে খেলার। আসলে শুধু খেলা না পারফর্ম করে অনেক দিন ন্যাশনাল টিমে থাকতে চাই। যেখানেই আমি খেলি না কেন ঘরোয়া ক্রিকেট হোক, জাতীয় দলে হোক। ‘এ’ টিমে হোক এমনকি খুলনা লিগে হোক সবসময় চাই নিজের পারফরম্যান্স ঠিক রাখতে। আমার শতভাগটা যেন দিতে পারি। ’
সোহান স্বপ্ন নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না। স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি যেতে পারলে তবেই জানাবেন, স্বপ্নটা নিজের ভেতরেই রেখে দিচ্ছি। অনেক বড় স্বপ্ন। ‘ইনশাআল্লাহ যদি স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি যেতে পারি তখন বলবো। ’
বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে বই-খাতা নিয়েই দিনগুলো পার করেছেন সোহান। তাই কোথাও তেমন যাওয়া হয়নি। গতকাল শেষ করেছেন বিবিএ শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা। আজ থেকে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করবেন সোহান। এখানকার সবারই চাওয়া অনেক বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠুক সোহান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল, ২০১৬
এসকে/এমএমএস