ঢাকা: যে দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ নিয়ে এ মুহূর্তে এতো আলোচনা, সেই দিবা-রাত্রির টেস্ট আরও তিন বছর আগে খেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ফাইনাল ম্যাচটি (পাঁচ দিনের ম্যাচ) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলোয় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ম্যাচটি শুরুর আগে দুই দলের অধিনায়কের হাতে গোলাপি বল তুলে দেন। ভিন্ন ধর্মী এ ম্যাচে শতক হাঁকান রকিবুল হাসান, এক ইনিংসেই আটটি উইকেট তুলে নেন সাঞ্জামুল ইসলাম। মোহাম্মদ আশরাফুল ১ ওভার বল করেই হ্যাটট্রিক করেন। এ ম্যাচে আরও খেলেছিলেন নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, নুরুল হাসান সোহান, শামসুর রহমান, শুভাগত হোম, শাহাদত হোসেন, নাঈম ইসলাম, ফরহাদ রেজা, সাকলাইন সজীবরা।
২০০০ সালেই প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেট। তবে, পরের ১৫ বছরেও টেস্ট খেলুড়ে কোনো দল সাদা পোশাকে ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলতে নামেনি। কিন্তু, জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে ১৫ বছর ধরে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণা করার পর গত বছর নভেম্বরে এসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত হয় কৃত্রিম আলোয় বিশ্বের প্রথম টেস্ট ম্যাচ।
ইতিহাসের প্রথম গোলাপি বল আর কৃত্রিম আলোর টেস্ট ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল ক্রিকেটভক্তদের মাঝে।
২০১২-১৩ মৌসুমের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ফাইনালটি মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয় ২২ থেকে ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি। একদিন হাতে রেখেই জয় পায় মোশাররফ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে খেলা সেন্ট্রাল জোন। জহুরুল ইসলামের নর্থ জোনের বিপক্ষে পাঁচদিনের ম্যাচের চতুর্থ দিনে গিয়ে সেন্ট্রাল জোন জয় পায় ৩১ রানে।
আগে ব্যাট করা সেন্ট্রাল জোন নিজেদের প্রথম ইনিংসে রকিবুল হাসানের শতকে ভর করে ২৭৭ রান তুলে অলআউট হয়। নিজেদের প্রথম ইনিংসে নাসির হোসেনের ব্যাটে ভর করে নর্থ জোন ২৭৪ রান সংগ্রহ করে। সেন্ট্রাল জোন দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৭ রান করে অলআউট হলে জয়ের জন্য নর্থ জোনের টার্গেট দাঁড়ায় ২৫১ রান। তবে, ২১৯ রানে গুটিয়ে যায় নর্থ জোন।
এ ম্যাচে সেন্ট্রাল জোনের হয়ে প্রথম ইনিংসে ওপের করেন শামসুর রহমান (২০) ও ইলিয়াস সানি (৫)। তিন নম্বরে নেমে রকিবুল হাসান করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১২৫ রান। মার্শাল আইয়ুব (৬), মোহাম্মদ আশরাফুল (১৩), মেহরাব হোসেন জুনিয়র (২৫), শুভাগত হোম (২৪), মোশাররফ রুবেল (১৮) আর নুরুল হাসান সোহান করেন ৩১ রান।
নর্থ জোনের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নেন ফরহাদ রেজা। এছাড়া তিনটি উইকেট নেন সাঞ্জামুল ইসলাম। আর দুটি উইকেট নেন সুবাশিষ রায় ও একটি উইকেট নেন সাকলাইন সজীব। সাব্বির উইকেটশূন্য থাকেন।
নর্থ জোনের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন নাসির হোসেন। এছাড়া মাইশুকুর রহমান ৩৫, জহুরুল ৪৭, নাঈম ইসলাম ৩৫, সাব্বির ১৮, ফরহাদ রেজা ৩০ রান করেন। সেন্ট্রাল জোনের হয়ে চারটি উইকেট নেন মোশাররফ রুবেল। তাসকিন নেন তিনটি উইকেট। আর ১ ওভার বল করে মাত্র চার রান দিয়ে হ্যাটট্রিকসহ তিনটি উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল। উইকেট পাননি শাহাদত হোসেন, ইলিয়াস সানি আর শুভাগত হোম।
দ্বিতীয় ইনিংসে সেন্ট্রাল জোনের হয়ে আবারো ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৮ রান আসে রকিবুল হাসানের ব্যাট থেকে। ওপেনার শামসুর রহমান ২৪ আর ইলিয়াস সানি ১ রান করে বিদায় নেন। আশরাফুল খেলেন ৪১ রানের ইনিংস। আর নুরুল হাসান সোহান অর্ধশতক (৫৫) হাঁকিয়ে বিদায় নেন। নর্থ জোনের হয়ে ২০ ওভারে ৭৩ রান খরচায় একাই ৮টি উইকেট তুলে নেন সাঞ্জামুল ইসলাম। দুটি উইকেট পান ফরহাদ রেজা।
২৫১ রানের টার্গেটে নামা নর্থ জোনের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৮১ রান করেন দলপতি জহুরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১ রান আসে সাঞ্জামুলের ব্যাট থেকে। নাসির ১৯ আর সাব্বির ১২ রান করে বিদায় নেন। সেন্ট্রাল জোনের হয়ে মোশাররফর, ইলিয়াস সানি তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। দুটি উইকেট দখল করেন আশরাফুল। আর একটি করে উইকেট পান শাহাদত হোসেন ও তাসকিন।
শতক হাঁকানো সেন্ট্রাল জোনের ব্যাটসম্যান রকিবুল (দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯৩ রান) আর নর্থ জোনের ১১ উইকেট (দুই ইনিংস মিলিয়ে) পাওয়া বোলার সাঞ্জামুল ইসলাম ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ০৫ মে ২০১৬
এমআর