ঢাকা: আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকেই একটানা ক্রিকেট খেলে চলেছেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক (টি-টোয়েন্টি) অভিষেকের পর থেকে গেল ১৩ মাসে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৯টি ওয়ানডে, দুটি টেস্ট ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি।
আইপিএলে হায়দ্রাবাদকে শিরোপা তুলে দিয়ে আর সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পালক যোগ করে দেশে ফেরেন ক্লান্ত মুস্তাফিজুর রহমান। যে ছেলেকে একা কখনো দেশের বাইরে থাকতে হয়নি, তাকেই কিনা ৫৫ দিন কাটাতে হলো ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে!
বিসিবির চিকিৎসক-ফিজিওরা বলছেন শরীরের চেয়ে মনের উপর দিয়েই ধকলটা বেশি গেছে কাটার মাস্টারের।
প্রশ্ন হলো, হায়দ্রাবাদের এতো ক্রিকেটারের মাঝেও কি পরিবার-কাছের লোকজনের কথা ভেবে একাকী, বিষন্নবোধ করেছেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের ছেলে মুস্তাফিজ? স্বল্পভাষী মুস্তাফিজের কাছ থেকে এটি জানা না গেলেও হোমসিকনেসের আঁচ পাওয়া যায় তার কথাতেই, ‘প্রথমে বাংলাদেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল ছিলাম। এখন মা-বাবার কাছে যেতে চাই। ’
ক্রিকেটের বাইরের সময়গুলো কি ভারতে উপভোগ করেননি মুস্তাফিজ! নইলে দুই মাসে তিন কেজি ওজন কমে যাওয়া তো সহজ ব্যাপার নয়। ‘হোমসিক’ দ্রুত কাটিয়ে না উঠতে পারলে কিভাবে হবে মুস্তাফিজের? বিভিন্ন দেশের লিগ গুলো এমন ক্রিকেটারকে পেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, মুস্তাফিজ বিভিন্ন দেশে ছুটে বেড়াতে কতটা প্রস্তুত?
আইপিএল শেষে তার যাওয়ার কথা কাউন্টি দল সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট এবং রয়্যাল লন্ডন ওযানডে কাপে খেলার জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা মুস্তাফিজের। সূত্রমতে, ঘনিষ্ঠজনদের মুস্তাফিজ নাকি বলেছেন, শরীর কুলিয়ে উঠলেও আপাতত ইংল্যান্ডে যেতে মন টানছে না তার।
মুস্তাফিজকে নিয়ে চলছে সাসেক্স ও মোহামেডানের টানাটানি। প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফটে ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে দলে নিয়েছে মোহামেডান। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া সুপার লিগ থেকে মুস্তাফিজকে পাওয়া যাবে-এমন আশায় মোহামেডান কর্তৃপক্ষ। এদিকে সাসেক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় দলটি আগামী ১০ জুন ঘরের মাঠে কেন্টের বিপক্ষে ম্যাচেই মুস্তাফিজকে পাবে এমন আশা করছে। কয়েকদিন বিশ্রামের পর ফিট মুস্তাফিজ কোথায় খেলবেন? কাউন্টি নাকি ঘরোয়া লিগে?
ক্রিকেটপ্রেমীরা তো বটেই; ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরাও মুস্তাফিজের কাউন্টিতে খেলতে যাওয়ার পক্ষে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মুস্তাফিজের কাউন্টিতে খেলার ব্যাপারে জানান, মুস্তাফিজ যদি দ্রুত উন্নতি করে এবং পারফর্ম করে, তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই। কাজেই ওর শরীরের যদি ক্ষতি না হয়, আমার মতে ইংল্যান্ডে গিয়ে খেলাই ওর জন্য ভালো হবে। মুস্তাফিজ এখন খেলতে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টুর্নামেন্টের জন্যও ভালো প্রস্তুতি হবে। পারফরমেন্স ভালো করতে হলে ওই কন্ডিশনে খেলতে হবে। ওখানে না গেলে সেটা জানা যাবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে এমন সুযোগ বার বার আসেনা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল মুস্তাফিজের কাউন্টিতে খেলার পক্ষেই মত দিলেন। তিনি জানালেন, মুস্তাফিজ যত খেলবে ততই পরিপক্ক হবে। তাকে বসিয়ে রাখা ঠিক হবে না। সারা বিশ্ব চষে বেড়ানো উচিৎ মুস্তাফিজের। নইলে ক্রিকেটের ব্যাপ্তি জানতে হলেও তার কাউন্টিতে খেলতে যাওয়া উচিত।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এ প্রসঙ্গে জানান, বেশি বেশি ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজের জন্য খারাপ নয় বরং ভালোই হবে। বেশি ম্যাচ আর কি এমন খেলছে মুস্তাফিজ। টি-টোয়েন্টিই তো খেলছে। সে তো আর বেশি টেস্ট খেলছে না, যে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। একজন ক্রিকেটার যখন ভালো ফর্মে থাকে তখন তার কাছ থেকে যতটা সম্ভব পারফরমেন্স বের করে নেয়া উচিৎ। একজন ক্রিকেটার অফ-ফর্মে পড়তেই পারে। মুস্তাফিজের সেরা সময়টা ব্যবহার করা দরকার।
ভারত থেকে ফিরে পরদিন বিসিবিতে এসে ফিজিওর শরণাপন্ন হন মুস্তাফিজ। জানা গেছে, মুস্তাফিজের হ্যামস্ট্রিংয়ে সামান্য কিছু সমস্যা আছে। তবে সেটা না খেলার মতো গুরুতর কিছু নয়। চাইলে এখনই মাঠে নামতে পারেন মুস্তাফিজ। মানসিক ক্লান্তি নিয়েই যা একটু চিন্তিত ফিজিওরা। সেটাও অবশ্য বেশি কিছু নয় বলে মনে করছেন তারা। তাদের ধারণামতে এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিলেই ফিট হয়ে উঠবেন মুস্তাফিজ। তবে কৌশলগত কারণে বিসিবি তাকে আনফিট দেখালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শেষ পর্যন্ত বিসিবি কি চাইছে সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে তাকিয়ে সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, ০৪ জুন ২০১৬
এসকে/এমআরপি