মোস্তাফিজের কোমড়ে ব্যথা অনুভবের খবরটি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদমাধ্যমকে জানান। ব্যথার প্রসঙ্গটি দলের সঙ্গে থাকা ফিজিও ডিন কনওয়েকে খোলাসা না করলেও জাতীয় দলের সাবেক ফিজিও (বর্তমানে একাডেমির ফিজিও হিসেবে কর্মরত) বায়েজিদুল ইসলাম খানের কাছে বিস্তারিত জানিয়েছেন মোস্তাফিজ।
মোস্তাফিজের কোমড়ের চোট নিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ফোনে কথা বলে যেটা বুঝলাম সাধারণ কোমড়ের ব্যথা। বোলিং করতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। বেশি মুভমেন্ট করলেও ব্যথা অনুভব হচ্ছে। ব্যথার অনুভূতিটা কী রকম সেটা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছে। দেশে ফিরলে... অবশ্যই ন্যাশনাল টিমের ফিজিও একটা গাইডলাইন দেবে। পর্যবেক্ষণের পর যা করা লাগে করবো। রিহ্যাব লাগলে রিহ্যাব করাবো, ট্রিটমেন্ট লাগলে ট্রিটমেন্ট করাবো। ’
২০১৬ সালের প্রায় পুরোটাই মোস্তাফিজের পার হয়েছে ইনজুরির সঙ্গে লড়ে। জানুয়ারিতে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে বাম কাঁধে চোট পেয়েছিলেন। পরে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচে তার খেলা হয়নি।
চোট কাটিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ফেরেন জাতীয় দলের জার্সিতে। শ্রীলঙ্কাকে ২৩ রানে হারানোর ম্যাচে পেশিতে টান লাগে মোস্তাফিজের। তিন ম্যাচ খেলেই শেষ হয়ে যায় মোস্তাফিজের এশিয়া কাপ। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে ফিট হয়ে আইপিএল খেলতে যান ভারতে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে শিরোপা জিতিয়েই ফেরেন দেশে। সঙ্গে নিয়ে আসেন হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলের চোট।
মোস্তাফিজকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে জুলাইয়ে সাসেক্সের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে পাওয়া বাঁ-কাঁধের চোট। যেটি সারিয়ে তুলতে যেতে হয় শল্যবিদের ছুরির নিচে। চিকিৎসা-পুনর্বাসন প্রক্রিয়া মিলে প্রায় পাঁচ মাস মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাকে।
নিউজিল্যান্ড সফরে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মোস্তাফিজ নামেন প্রায় ৯ মাস পর। এবারও ধারাবাহিক হতে পারলেন না মোস্তাফিজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আবারো বিরতি নিতে হচ্ছে তাকে। কাকতালীয়ভাবে মোস্তাফিজুর ইনজুরিতে পড়ছেন কেবল টি-২০ ম্যাচ খেলতে গিয়ে।
বিসিবি সভাপতির ভাষ্যমতে, কোমড়ে ব্যথার কথা নাকি টিম ম্যানেজমেন্টকে সঠিকভাবে জানাননি মোস্তাফিজ। না খেলে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন দেশে। এজন্য অনেকে মোস্তাফিজের মানসিক দৃড়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। ফিজিও ডিন কনওয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ২১ বছরের তরুণ কেন মানসিক শক্তি ফিরে পাচ্ছেন না। কনওয়ের হয়তো তখনো জানা ছিলো না কাঁধের জন্য নয় কোমডের ব্যথায় কাতর রয়েছেন মোস্তাফিজ।
বিসিবি সভাপতি হস্তক্ষেপ না করলে হয়তো তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে হতো মোস্তাফিজকে। প্রথম টেস্টে বিশ্রাম দিয়ে দ্বিতীয় টেস্টের দলে রাখার চিন্তা-ভাবনাও করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। বিসিবি সভাপতি অবশ্য বলে দিয়েছেন পুরোপুরি ফিট না হলে মাঠে নামানো যাবে না মোস্তাফিজকে।
টেস্ট সিরিজে না খেলালেও মোস্তাফিজকে দেশে নিয়ে আসার পক্ষপাতী নন বিসিবি সভাপতি। শতভাগ সুস্থতার নিশ্চয়তা না পেলে আইপিএলে পাঠানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘মোস্তাফিজের সাথে আমার নিয়মিত কথা হয়। ওর কিন্তু তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে খেলার কথা ছিলো। যখন শুনলাম খেলছে না তখনই আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। সাথে সাথে মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলি। শনিবার সকালে আমি ওর সাথে কথা বলেছি। তখন ও আমাকে বলল আমার ব্যথা লাগছে। ’
বিসিবি প্রধান আরও বলেন, ‘মোস্তাফিজের মতো একজন খেলোয়াড় হঠাৎ করে ব্যথা পাচ্ছে আর আমরা তাকে দ্বিতীয় টেস্ট খেলানোর কথা ভাবছি এটা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম। ও তো আবার কথা কম বলে। ‘ব্যথা’ বলে আর কোনো কথা বলে না। এরপর আমি সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, প্রধান নির্বাচক, ফিজিও, কোচদের এবং মোস্তাফিজকে নিয়ে বসে ওর সমস্যাটা কোথায় বের করতে বলি। সমস্যা হয়ে থাকলে তো আমরা ঝুঁকি নিতে পারিনা। ’
‘সাথে সাথে আমি বায়েজিদকে ডেকে নিয়ে আসলাম। খোঁজ নিয়ে দেখলাম বায়েজিদের সাথে তার যোগাযোগটা ভালো। আমি বায়েজিদকে আমার বাসায় ডেকে নিয়ে ওর সাথে ২০ মিনিট কথা বলিয়েছি। বায়েজিদ আমাকে বললো ওর একটা সমস্যা আছে। তবে যে জায়গায় অপারেশন হয়েছে ওখানে কোনো সমস্যা নেই। ওর কোমড়ে ব্যথা হচ্ছে এবং ব্যথাটা আছে। পরে আমি বায়েজিদকে বলি তুমি যা বুঝেছো ফিজিওর সাথে কথা বলে ব্যাখ্যা দাও। আমি ওখানে ইনফর্ম করে বলেছি, যেহেতু ব্যথা আছে খেলানোর প্রশ্নই ওঠে না। ওকে ওখানে রেখে সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনবো আমরা। ওকে সুস্থ করে নিয়ে আসবো বাংলাদেশে, এখন এসে কী করবে। ’-যোগ করেন নাজমুল হাসান।
ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে এমন বহু নজির রয়েছে পেসারদের ক্ষেত্রে। মোস্তাফিজের ক্যারিয়ারে সূর্য যখন কেবলই পূর্ব গগনে তখনই একের পর এক ইনজুরিতে ছিটকে দিচ্ছে ম্যাচ থেকে। ভক্ত-হৃদয়ে আশঙ্কা, মোস্তাফিজের ক্যারিয়ারের সূর্য মধ্য গগনে যাবে তো!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭
এসকে/এমআরএম