এরপর আরো ৭ বার ভীষণ কাঙ্ক্ষিত ৫ উইকেটের খুব কাছে গিয়েও বঞ্চিত হয়েছেন রুবেল। সাতবার তিনি চারটি করে উইকেট পেয়েছেন।
বাংলানিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই আফসোসের কথাই বলেছেন বাংলাদেশকে প্রথমবার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যাওয়া এই পেসার। আলাপ করেছেন আসন্ন সিরিজে তার ও দলের লক্ষ্য নিয়েও। পরামর্শ দিয়েছেন তার তরুণ পেসারদেরও।
বাংলানিউজের ক্রিকেটপ্রেমী পাঠকদের উদ্দেশে রুবেল হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতা তুলে ধরা হলো।
বাংলানিউজ: সামনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনেকগুলো সিরিজ। দলের সিনিয়র পেসার হিসেবে সেখানে আপনার লক্ষ্য কী?
রুবেল: লক্ষ্য তো অবশ্যই একটা আছে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাকে ফিট থাকতে হবে। কিভাবে অনুশীলনে ভালো করা যায় সেদিকে আমাকে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলানিউজ: সামনের মাসেই আফগানিস্তান সিরিজ। অনেকেরই ধারণা আফগানিস্তান বাংলাদেশের সামনে উড়ে যাবে। আপনি কী মনে করেন?
রুবেল: টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে ছোট করে দেখা যায় না। ওদের দলে দুজন বোলার খুবই ভালো। রশিদ খান তো আছেই, মুজিবুর রহমানও খুব ভালো। আইপিএলে দেখেছি, দুই-তিনটা ভালো ব্যাটসম্যানও আছে। টি-টোয়েন্টি ছোট ফর্মেটের খেলা। আমরা প্রতিপক্ষ দলকে অবশ্যই শক্তিশালী হিসেবে নেব। আমি মনে করি সিরিজটা বেশ জমজমাট হবে।
বাংলানিউজ: টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে আপনার সেরা বোলি ইনিংস নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ নাকি?
রুবেল: তা না, তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমার পারফরম্যান্স বরাবরই ভালো। ওদের সাথে আমি ভালোই খেলেছি। মজার ব্যাপার হলো ওদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আমার ভেতরে একটা দারুণ অনুভূতি কাজ করে। আমার সব রেকর্ডই ওদের সাথে। বিষয়টি আমাকে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এজন্য হয়তো বা আমি আরো পারফর্ম করতে পারি।
বাংলানিউজ: টেস্টে ৫ উইকেট আপনি একবারই পেয়েছেন। সেই ২০১৩ সালে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর আর দেখা যায়নি। আবার কবে জ্বলে উঠবেন?
রুবেল: টেস্ট নিয়ে আমি খুবই হতাশ। টেস্টে আমার উইকেট একেবারেই কম। আমার এভারেজের অবস্থাও খুবই খারাপ। আমি চেষ্টা করছি। অনেক সময় হয়তো হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমাদের টেস্ট আছে। ওখানে যদি সুযোগ পাই বোলিং ফিগারটা আরো ভালো করার চেষ্টা করবো।
বাংলানিউজ: আপনি টেস্টে কম সুযোগ পেয়েছেন, সেজন্য এই অবস্থা নাকি অন্য কোনো কারণ?
রুবেল: না, সেজন্য না। আমি চেষ্টা করি কিন্তু তারপরেও কেন যেন টেস্টে হয় না। টেস্টে আসলে উইকেটই প্রধান। এখানে উইকেটটা বের করতে পারলেই কোনো বোলার সফল হয়। তো আমি ওটাই চেষ্টা করি। শুধু টেস্ট না। আমি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যখনই বোলিংয়ে আসি না কেন চেষ্টা করি ব্রেক থ্রু এনে দিতে। হয়তোবা টেস্টে আমার সাফল্যটা আসেনি।
বাংলানিউজ: টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে দেশের চাইতে বিদেশে আপনার উইকেট বেশি। কেন? দেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না?
রুবেল: ঠিক তেমন না। আমাদের দেশের মাটিতে স্পিনারদের সুবিধাটা বেশি থাকে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যতগুলো জয় পেয়েছে তার বেশিরভাগই কিন্তু স্পিনাররা এনে দিয়েছে। আমাদের উইকেট তাদের সহায়তার জন্য বানোনো হয়। যেহেতু আমরা স্পিনারদের ওপরে নির্ভরশীল। ফলে পেস বোলাররা তেমন কোনো সুবিধা পায় না।
বাংলানিউজ: ক্রিকেট মাঠে আপনার ১০ বছর হতে চললো। গেল ৯ বছরে কী পেলেন আর কী পাননি?
রুবেল: অনেক দিন হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছি। ৯ বছর হয়ে গেছে। অবশ্যই অনেক কিছু পেয়েছি আবার অনেক কিছুই পাইনি। পাইনি মানে ধরেন দু’একটা ম্যাচে আমি বাংলাদেশ দলকে জিতিয়ে দিতে পারতাম। সম্প্রতি নিদাহাস ট্রফিতে হয়তো আমার কারণেই বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেছে। ক্রিকেটে এটা হতে পারে। কিন্তু তারপরেও একটা কষ্ট কাজ করে। জেতাতে পারলে আমার আরো ভাল লাগতো। কিন্তু এটাও ঠিক বাংলাদেশ আমার কাছ থেকে অনেক ভালো ভালো এক-একটি জয় পেয়েছে। এটা আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে যে, এই জয়গুলোতে আমার অবদান আছে। নিউজিল্যান্ডের সাথে আমার হ্যাট্টিক আছে, ওদের সাথেই প্রথম বাংলাওয়াশে অবদান আছে। দ্বিতীয় বাংলাওয়াশে শুভ সূচনা আছে, ৬ উইকেট আছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্মরণীয় একটা ম্যাচ আছে। ক্রিকেট ছাড়ার পর এগুলোই আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলানিউজ: লর্ডসে আপনার একটি উইকেট আছে। যেহেতু ওখানে বাংলাদেশের খেলার সুযোগ খুব কম পায় তাই হয়তো আর হয়নি। যা হোক ক্রিকেট মক্কায় পাওয়া ওই উইকেট আপনাকে কতটুকু আনন্দিত করে?
রুবেল: লর্ডসে খেলা যে কারো জন্যই স্বপ্নের একটা বিষয়। কারণ, আমরা সবাই জানি লর্ডসে খেলা কতটা গর্বের। ওই মাঠে ম্যাচ খেলা মানে অনেক বড় কিছু। লর্ডসের মাঠে ১টা উইকেট আছে এটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু।
বাংলানিউজ: টেস্টে ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের সাথে আপনার অপরাজিত ৪৫ রানের ইনিংস আছে। এরপর আর রুবেলকে ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যায়নি। কী এমন হয়েছিল ওই দিন?
রুবেল: ওই দিন আমি যেভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলাম সেভাবেই বল ব্যাটে আসছিলো। সিকান্দার রাজাকে পেয়েছিলাম, ওকে যখন চার্জ করছিলাম আমার প্রতিটি বলেই টাইমিং হচ্ছিলো। তাতে টিমের রানও ৫শ হয়ে গিয়েছিলো।
বাংলানিউজ: ওয়ানডেতে আপনার ৫ উইকেট একবার। ৪ উইকেট পেয়েছেন ৭ বার। ৫ উইকেটের জন্য আফসোস হয়?
রুবেল: আসলে ৫ উইকেটের জন্য কপাল থাকতে হয়। সেটা বোধ হয় আমার নেই। থাকলে ৫ উইকেট আরও বেশি হতে পারতো।
বাংলানিউজ: টেস্ট ব্যাটিংয়ে আপনার অপরাজিত ৪৫ রান থাকলেও ওয়ানডেতে মাত্র ১৭। আমরা জানি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট টেল এন্ডারদের ব্যাটিংয়ের ওপর গেল দুই বছর যাবত বেশ জোর দিয়ে যাচ্ছে। সেই বিবেচনায় আপনি এবং বাকি টেল এন্ডাররা কতটুকু এগিয়েছে বলে মনে করেন?
রুবেল: না, আমরা এগুইনি। বরং পিছিয়ে আছি। আসলে আমরা যারা টেল এন্ডার আছি এদের সবারই ব্যাটিংটা নিজেদের ভেতর থেকে আসতে হবে। টেল এন্ডাররা কিন্তু দলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। তো আমাদের ব্যাটিংয়ের ওপরে আরো মনোযোগ দিতে হবে। অনুশীলনে বোলিং শেষ করে ন্যূনতম ২০ মিনিট ব্যাটিং অনুশীলন করতে হবে। সেটা মেশিন, সাইড নেট বা সেন্টার উইকেটেও হতে পারে।
বাংলানিউজ: ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির পরেই আপনি দেশের দ্বিতীয় পেসার যিনি ১শ’ উইকেট পেয়েছেন। এটা নিশ্চয়ই আপনাকে অনেক আনন্দিত করে?
রুবেল: খুবই ভালো লাগে। কারণ, ওয়ানডেতে মাশরাফি ভাই-ই বাংলাদেশের প্রথম ১শ’ উইকেট শিকারি। এরপর আমি। এটাকে আমি আসছে বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চাই।
বাংলানিউজ: টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসাররা আপ টু দ্য মার্ক না। সমাধান কী?
রুবেল: পেসারদের আরো মনোযোগী হতে হবে। উইকেট ভালোভাবে জেনে এবং ম্যাচের অবস্থা বুঝে আমাদের বল করতে হবে। কোন ধরনের উইকেটে কিভাবে বল করতে হবে এটা আমাদের তাড়াতাড়ি রিড করতে হবে। সবার একটা স্ট্রেংথ থাকে। আমার স্ট্রেংথ পেস, আমি সেভাবেই কিন্তু বল করবো। মোস্তাফিজকেও বুঝতে হকে ওর স্ট্রেংথ কী? সেভাবেই বল করতে হবে। উল্টাপাল্টা চিন্তা করে বোলিং করলে তো হবে না।
বাংলানিউজ: আপনার স্ট্রেংথ তাহলে গতি?
রুবেল: জি
বাংলানিউজ: আপনার সর্বোচ্চ গতি এই পর্যন্ত কত উঠেছে?
রুবেল: ঘণ্টায় ১৪৮.৭ কিলোমিটার।
বাংলানিউজ: বলছিলেন আপনি গতি পছন্দ করেন। আপনার আইকন কে?
রুবেল: বাংলাদেশে মাশরাফি ভাই। আর দেশের বাইরে অ্যান্ড্রু ফ্রিনটফের বল আমার ভালো লাগতো।
বাংলানিউজ: নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
রুবেল: অনেকদিন ক্রিকেট খেলতে চাই। যতদিন আমার দুইটা হাত ও পা সুস্থ থাকবে ততদিন খেলে যেতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
এইচএল/এমজেএফ