কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যেসব টেস্ট ম্যাচের দিকে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো হলো- ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজের পঞ্চম ম্যাচ ও ২০১৭ সালের মার্চে রাঁচিতে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া-ভারত টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ম্যাচের বিশেষ মুহূর্তে কয়েকজন ইংলিশ এবং অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিক্সিং করেন, যেখানে তারা জুয়াড়িদের চাহিদামত ব্যাটিং করেন।
তবে আল-জাজিরার এমন দাবি অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড বা ইসিবি’র প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন। তিনি বলেন, ‘বোর্ড ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলেছে এবং তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের (খেলোয়াড়দের) মতে অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তাদের প্রতি আমাদের পুরো সাপোর্ট আছে। ‘
টম হ্যারিসন দাবি করেছেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন কোন তথ্য তারা পান নি যাতে ইংলিশ ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘আল-জাজিরার এমন সিরিয়াস দাবীর পরও তাদের অসহযোগিতামূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে আমরা হতাশ। আমরা আল-জাজিরার কাছে তাদের কাছে রক্ষিত তথ্য-প্রমাণাদি আইসিসির কাছে হস্তান্তরের আহবান জানাচ্ছি। ‘
অন্যদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) আল-জাজিরার কাছে সম্পাদনা ছাড়া ভিডিও ফুটেজ চেয়েছে। সেই ফুটেজ দেখে তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে সিএ। সিএ প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যাণ্ড বলেছেন, ‘আল-জাজিরার দাবীকৃত ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নিয়ে আমরা আইসিসির সাথে কাজ করছি। আমরা সম্পাদনা ছাড়া প্রমাণাদি দেওয়ার জন্য আলজাজিরাকে আহ্বান জানাচ্ছি। যদি তথ্য ঠিক থাকে তাহলে তদন্ত এগিয়ে নেয়া সহজ হবে। '
এদিকে আল-জাজিরার প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রকসংস্থা আইসিসিও। প্রদিবেদন প্রকাশের একদিন পর আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শাল বলেন, ‘আইসিসির সামনে এখন সুযোগ আছে ক্রিকেটে দুর্নীতি নিয়ে করা ওই প্রতিবেদন দেখার। আগে যেমনটা বলেছিলাম, আমরা ওই প্রতিবেদনের বিষয় ও দাবীগুলো খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছি। '
মার্শাল আরও বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে যেসব দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সাথে মিলে সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট। '
আল-জাজিরায় প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনে ফিক্সিং কলঙ্কের সাথে এক পাকিস্তানি ও এক ভারতীয় ক্রিকেটারের নাম উঠে এসেছে। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে ফিক্সিং নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায় তাদের। পাশাপাশি অনিল মুনাওয়ার নামের এক ভারতীয় বাজীকর তিনজন ইংলিশ ও দুজন অজি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা বলেন। এই অনিল ভারতের অপরাধ জগতের শীর্ষ নাম ‘ডি কোম্পানি'র সাথে কাজ করেন বলে জানা গেছে।
ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত দুই টেস্ট ম্যাচ নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) জানিয়েছে, বোর্ডের দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট আইসিসির সাথে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে কাজ করছে।
আইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আল-জাজিরার কাছে মূল ভিডিও ফুটেজ দাবি করলেও চ্যানেলটি নাকি তাদের সহযোগিতা করছে না। আইসিসি তাদের কাছে সম্পাদনা ছাড়া যতো তথ্য আছে সব দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে হস্তানতরের আহবান জানিয়েছে।
ওদিকে আল-জাজিরার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা খুব শীঘ্রই আইসিসির কাছে সকল তথ্য-প্রমাণাদি হস্তান্তর করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ২৮ মে, ২০১৮
এমএইচএম